১৩ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৫

শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সবজির দাম

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শীতের সবজি থরে থরে সাজানো। শীত যতই বাড়ছে, ততই বাড়ছে সবজির সরবরাহ। কিন্তু অর্থনীতির স্বাভাবিক সূত্র বাজারে অনুপস্থিত। সরবরাহ বাড়লেও সবজির দাম কমছে না। উল্টো বেশির ভাগ সবজির দাম বাড়ছে। কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সাথে যুক্ত হয়েছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবজিবাহী ট্রাক পরিবহন বিলম্বিত হওয়ার বিষয়টি।

গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে কোনো সবজির কমতি নেই। টমেটো, শিম, লাউ, কাঁচা-পাকা মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি (শালগম), পেঁয়াজের কালি, বেগুন, মুলা, লাল শাক, পালং শাক, লাউ শাক সবকিছুই বাজারে ভরপুর। যদিও কিছুদিন ধরে যে সবজির দাম ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছিল, তাই হঠাৎ করে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টঙ্গীতে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার প্রভাবেও সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা জানান, শীতের অন্যতম প্রধান সবজি ফুলকপি বেশ কিছুদিন ধরেই প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছিল। একই ফুলকপির দাম গতকাল বেড়ে হয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। ২০ থেকে ২৫ টাকা দামে বিক্রি হওয়া বাঁধাকপির দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দামে বিক্রি হওয়া শিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর বিচিসহ শিমের দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছেÑ শালগম, মুলা, টমেটো, বেগুনও। ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শালগমের দাম বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বেগুনের দাম এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। মুলার দাম ১৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেড়েছে লাউয়ের দামও। গত সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা পিস দরে বিক্রি হওয়া লাউ গতকাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

রামপুরা বাজারে সবজি কিনতে আসা মামুন বলেন, এখন শীতের সবজির ভরা মওসুম। সে হিসেবে সব সবজিরই দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে দেখি সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। সবজির দাম বেড়ে গেলে গরিব মানুষের যাওয়ার জায়গা থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্য সময় তো সবজি কেনা যায় না। শীতকালেও যদি মনের মতো করে সবজি খেতে না পারি তবে আমরা যাবো কোথায়?
সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে খিলগাঁও তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী মো: আলম বলেন, শীতের সময় সব সবজির দামই কম থাকে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই সবজির দাম বেশ কমছিল। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার কারণে এখন কিছুটা দাম বেড়েছে। ইজতেমা শেষ হয়ে গেলেই দাম আবার কম যাবে। তবে এখন বাজারে কোনো সবজির অভাব নেই। আড়তে গেলেই পছন্দমতো সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দাম একটু বাড়তি। তাই আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ দিকে আকাশচুম্বী দামে কিছুটা ছেদ পড়লেও এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। গত কয়েক সপ্তাহের মতোই খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। নতুন দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। বাজারে তেমন পাওয়া না গেলেও পুরনো দেশী পেঁয়াজের দাম এখনো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।

কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, বাজারে পুরনো পেঁয়াজের সরবরাহ কম। তাই দাম কিছুটা বাড়তি। তবে নতুন ও আমদানি করা পেঁয়াজের অভাব নেই। যে কারণে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। অবশ্য এক মাসের বেশি সময় ধরেই পেঁয়াজের দাম একই রয়েছে। আমরা ধারণা করেছিলাম পেঁয়াজের দাম আরো কমবে।
মাছ বিক্রেতারা জানান, কিছুদিন সহনীয় থাকার পর এ সপ্তাহে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে সবধরনের মাছের দাম। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি রুই ও কাতলা ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, আইড় ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, পুঁটি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, মলা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৭০০, মাগুর ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মোটা স্বর্ণা ও পারিজা চাল বিক্রি হয় ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা দরে। ভালো মানের মিনিকেট গতকাল বিক্রি করা হয় ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। এ ছাড়া সাধারণ মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, বিআর-২৮ ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৬৫ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, হাস্কি ৫০ থেকে ৫৪, পাইজাম চাল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, বাসমতি ৬৬ টাকা, কাটারিভোগ ৭২ টাকা এবং পোলাওর চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
আগের সপ্তাহের দরেই গরু, খাসি ও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছেন বলে জানান বিক্রেতারা। বাজারে গতকাল গরুর গোশত প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হয়। এ ছাড়া খাসি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, পাকিস্তানি জাতের কক মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, দেশী মুরগি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/284506