১২ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:০০

আদেশ মানা, না মানা

ট্রাফিক সিগন্যাল, হাসপাতাল থেকে অফিস-আদালত। ফুটপাথ কিংবা যাত্রী ছাউনি। সর্বত্র চোখে পড়ে নানা আদেশমূলক লেখা। কিন্তু দেখা যায়, আদেশ আছে তা মানা হচ্ছে না। পথেঘাটে চলতে-ফিরতে প্রায় জায়গায়ই চোখে পড়ে ‘এখানে ধূমপান করা নিষেধ, ডাস্টবিনে ময়লা ফেলুন, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, অকারণে হর্ন বাজাবেন না, এখানে বাস থামিবে না’সহ বিভিন্নরকম লেখা। এ আদেশ সাধারণ মানুষ কতটা মেনে চলে তা নিয়ে সরজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে ভিন্নরকম তথ্য।

কাওরানবাজার মোড়। এ ট্রাফিক সিগন্যালে পুলিশের একাধিক নির্দেশনামূলক লেখা সাইনবোর্ড রয়েছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘এখানে বাস থামিবে না, দাঁড়ালেই দণ্ড’। অন্য একটি হচ্ছে ‘১০০ গজ সামনে বাস স্টপেজ’। সবকিছুই ঠিক আছে তবে বাস থামছে ঠিক জরিমানা লেখা সাইনবোর্ডের সামনেই। এখানেই রয়েছে একটি পুলিশ বক্স। তার থেকে একটু দূরে গেলে দেখা যায় একজন ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। বাবুল নামের এ পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসা করা হলো- এখানে গাড়ি থামা বারণ কেউ তো তা মানছে না। পুলিশ সদস্যের উত্তর: আমাদের দেশে কয়টা গাড়ি আদেশ মানে। মাঝেমধ্যে কেস দেয়া হলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এক-দু’দিন পড়ে তাদের ঠিক আগের অবস্থায় দেখা যায়। এ ব্যাপারে গাড়িচালকদের অভিযোগ যাত্রীদের বিরুদ্ধে। চালকের কথা যাত্রীরা সাইনবোর্ডের সামনে দাঁড়ায়। স্টপেজ লেখা সংবলিত স্থানে যাত্রী দাঁড়ায় না। এ পুলিশ সদস্য বলেন, আমাদের বেশিরভাগ সময় সিগন্যাল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সব সময় স্টপেজের দিকে লক্ষ্য রাখা যায় না। এই সাইনবোর্ডের সামনেই গাড়ি থামিয়ে লোক তুলছিলেন মিরপুরগামী এভারেস্ট পরিবহন নামে একটি বাস। এ বাসের চালক মইনউদ্দিনের সরল স্বীকারোক্তি, এখানে বাস দাঁড়ায় না, রানিং অবস্থায় যাত্রী উঠা-নামা করে। স্টপেজ রয়েছে অনেক সামনে। সেখানে কোনো যাত্রী থাকে না। বাধ্য হয়েই আমরা নির্দেশ অমান্য করি। রাজধানীর প্রতিটি রাস্তার মোড়ে, ট্রাফিক সিগন্যালে এমন হরেকরকম লেখা সংবলিত নির্দেশনা দেখা যায়। তবে মানতে দেখা যায় খুব অল্প সংখ্যক মানুষকে। এ জন্য যেমন সাধারণ মানুষের আদেশ মানায় উদাসীনতা রয়েছে তেমনি গাড়িচালকদের আদেশের প্রতি অবহেলাও রয়েছে। এধরনের আর একটি সাইনবোর্ড প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে, ‘যাত্রী ছাউনি দেখে বাস থামাবেন’। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যেখানে
যাত্রী ছাউনি যেখানে তার থেকে ১০০/১৫০ গজ দূরে যেয়ে বাস থামে। তখন যাত্রীদের দৌড়ে হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে হয়। এখানে নিয়ম আছে তবে মান্য করার নেই কেউ। সব থেকে বেশি আদেশ লেখা সংবলিত লেখা দেখা যায় রাস্তা এবং ফুটপাথেই। সব থেকে বেশি অমান্য করতেও দেখা যায় সেখানে। এরকম আরো অনেক নির্দেশ রয়েছে তারমধ্যে কয়েকটি হচ্ছে; সামনে হাসপাতাল, হর্ণ বাজাবেন না, রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হবেন না, এই হাসপাতালে কারো সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা বিনিময় করবেন না, দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো এবং লেখা নিষেধ, এখানে ময়লা ফেলা নিষেধ ইত্যাদি। কোনো কোনো স্থানে লেখার সঙ্গে জরিমানার কথাও উল্লেখ থাকতে দেখা যায়। এমনি একটা লেখা আমরা দেখতে পাই। এই স্থানে প্রস্রাব করা নিষেধ, প্রস্রাব করিলে ৫০০ টাকা জরিমানা। রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস সমিতির হাসপাতালের সামনের দেয়ালে দেখা গেছে এমন একটি লেখা। ঠিক তার নিচেই দেখা গেছে আদেশ না মেনে কয়েকজনকে প্রস্রাব করতে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলো- এখানে তো নিষেধ রয়েছে। তারপরেও আপনারা কেন আদেশ অমান্য করছেন। বাবুল নামে এক দোকানদারের উত্তর, আমি দোকান রেখে দূরে যেতে পারি না- তাই দ্রুত এখানে কাজ সেরেছি। অথচ তার একটু সামনেই রয়েছে একটি মোবাইল টয়লেট। সেখানে কেউ যাচ্ছে না। রাজধানীর রমনা পার্কের শাহবাগ-মৎস্যভবন সড়কের সীমানা প্রাচীর। সেখানেও লেখা রয়েছে এমন কিছু আদেশ। রাস্তায় জ্যাম থাকায় হঠাৎ বাসের ড্রাইভার উঠে পড়লেন। সঙ্গে বাসের হেলপারও গেলেন। তারা দুজনেই জরুরি কাজ সারলেন দেয়ালের পাশে। নিষেধ অমান্য করলেন কেন- জিজ্ঞেস করলে ড্রাইভার কলিম বলেন, কি করবো আমাদের তো জায়গা, আদেশ ও সময় নাই। কত কষ্ট করতে হয় পথে পথে। এ অবস্থা হাসপাতাল, ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিসের। এসব স্থানে লেখা থাকে ‘দালালের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করবেন না’। অথচ অসাধু উপায়ে লেনদেন এবং হয়রানি সেসব জায়গায়ই বেশি হয়। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কার্যালয়। এই অফিসের বাইরের দেয়াল এবং ভেতরে লেখা দেখা যায় ‘দালালদের খপ্পর হইতে সাবধান’, ‘দালাল দেখলে ধরিয়ে দিন’ অথচ এখানে প্রায় দালালদের প্রতারণার ফাঁদে টাকাসহ অনেক কিছুই হারান লোকজন। হাসপাতালে লেখা দেখা যায় এমন অনেক লেখা। আর আদেশ অমান্য করার হারও এখানে বেশি। কেউ জেনে বুঝে আবার কেউ না জেনেই এসব আদেশ ভঙ্গ করেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। এখানে দেয়ালে দেয়ালে লেখা আছে বিভিন্ন সতর্ক বার্তা। অথচ সাধারণ মানুষকে আয়া, পিয়নকেও টাকা দিয়ে সেবা নিতে হয় এখানে। এসব আদেশ কর্তৃপক্ষের মানায় যেরকম অনীহা সেভাবে সাধারণ মানুষকেও অবহেলা, অমান্য করতে দেখা যায় অহরহ।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=100189