১১ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৭:০০

রোহিঙ্গা হত্যার কথা স্বীকার মিয়ানমারের

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যায় সম্পৃক্ত থাকার কথা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের একটি তদন্তদলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে মংডুর কাছে ইন দিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে ধরার পর হত্যার সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর চারজন সদস্য জড়িত।
গতকাল বুধবার মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লিয়াংয়ের ফেসবুক পোস্টে এই স্বীকারোক্তি এসেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
ওই তদন্তদলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কথিত হামলার পর রোহিঙ্গাদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চারজন সদস্য গ্রামবাসীকে সহযোগিতা করেছে।
গত মাসে রাখাইনে একটি গণকবর নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির কাজ করতে গিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুজন সাংবাদিক আটক হন। তাঁদের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাখাইনের ইন দিন গ্রামে গণকবরের সন্ধান মেলে। সেখানে ১০টি কঙ্কাল মিললেও তাদের পরিচয় জানা যায়নি। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেই এর তদন্ত শুরু করে।

তদন্তের ফল অনুযায়ী, ইন দিন গ্রামের ওই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে গত ২ সেপ্টেম্বর। গণহত্যার শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের ‘বেঙ্গলি সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘এটা সত্য যে গ্রামবাসী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মিলে ১০ বেঙ্গলি সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।’ পোস্টে আরো বলা হয়, ‘যারা এসব হত্যার জন্য দায়ী এবং যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে সেনাবাহিনী তাদের বিচার করবে।’ হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী গ্রামবাসীকে হুমকি দেওয়ায় এবং সন্ত্রাসীরা উসকানি দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী যে অন্যায় করেছে তার বিরল স্বীকারোক্তি এটি। এর আগে গত নভেম্বর মাসে মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন তো দূরের কথা কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করার অভিযোগও নাকচ করে। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান যায়িদ রা’দ আল হোসেইন রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার আশঙ্কা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে রাখাইনে গণহত্যার অন্যতম মূল হোতা এক শীর্ষ সামরিক কমান্ডারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি বিশ্বের কাছ থেকে আড়াল করতে সেখানে কাউকে যেতে দিচ্ছে না। এমনকি মিয়ানমারে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লির সফর পরিকল্পনাও আটকে দিয়েছে। ইয়াংহি লি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা শুনতে পাঁচ দিনের সফরে আগামী ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসছেন।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে নতুন মাত্রায় গণহত্যা শুরুর পর থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তির পরও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে নিরপেক্ষ বিচারের আওতায় আনা কঠিন হবে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/01/11/588192