১০ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:১৪

চিরচেনা রূপ হারাচ্ছে দিলকুশা

রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা দিলকুশা তার চিরচেনা চেহারা হারাতে বসছে। বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র দিলকুশার রাস্তাঘাট এখন পার্কিং ও কাঁচাবাজারে পরিণত হয়েছে। ব্যাংক, বীমা আর বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি এখানে এখন কেনাবেচা হচ্ছে মাছ- গোশত, সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস।

দিলকুশায় যতগুলো ভবন রয়েছে তার মধ্যে অনেক ভবনেরই নিজস্ব কোনো পার্কিং নেই। ফলে এই এলাকায় বিভিন্ন কাজের জন্য আসা শত শত গাড়ির পার্কিং হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রধান সড়কগুলো। এখানে বড় বড় বাসসহ বিভিন্ন গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয় দিনভর। সেখানকার একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শিহাবুল বলেন, দিলকুশার প্রধান প্রধান সড়ক এখন পার্কিং জোনে পরিণত হয়েছে। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। তিনি বলেন, সকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তারা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসেন। অনেক ভবন আছে যেগুলোতে নিজস্ব কোনো পার্কিংই নেই। আবার কোনো কোনো ভবনের নিজস্ব পার্কিংয়ের ধারণক্ষমতার চেয়ে তাদের গাড়ি রয়েছে অনেক বেশি, যে কারণে কর্মকর্তাদের বেশির ভাগ গাড়িই রাস্তার ওপর রাখতে হয়। আবার ক্লায়েন্টদের গাড়ির সবগুলোই থাকে রাস্তার ওপর। এমনকি, সরকারি যেসব অফিস রয়েছে তাদেরও এই একই অবস্থা। কখনো কখনো পুরো রাস্তাই পার্কিংয়ে পরিণত হয়। আবার ফুটপাথে পার্কিং করে রাখা গাড়ির মধ্যে বসে যায় হকাররা। অনেক সময় সাধারণ পথচারীদের হাঁটারও পথ থাকে না। রাজউক ভবনের পাশ থেকে আলিকো ভবন পর্যন্ত বঙ্গভবন লাগোয়া রাস্তাটিতে পার্কিং করে রাখা হয় বড় বড় বাস। এগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতায়াত করেন। সকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে নামিয়ে দেয়ার পর এগুলো প্রধান সড়কে পার্কিং করে রাখা হয় এবং বিকেলে অফিস ছুটির পর এগুলো অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে চলে যায়।

বক চত্বর হয়ে কৃষি ব্যাংকের রাস্তাটিতেও বড় বড় বাস থামিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া এ রাস্তাটির মাথা থেকে শুরু হয়ে রূপালী ব্যাংকের সামনে দিয়ে আলিকো ভবন পর্যন্ত রাস্তায় বসছে কাঁচাবাজার। এখানে মাছ-গোশত, হাঁস-মুরগি, সবজি-মশলাসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।
এই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারীরা বলেন, ফুটপাথে হকার এবং রাস্তায় পার্কিং আর কাঁচাবাজার দিলকুশার ঐতিহ্য খোয়াচ্ছে। এই এলাকায় যাদেরকে কাজে আসতে হয়, তারা চরম ভোগান্তির শিকার হন। বাইরে থেকে গাড়ি নিয়ে যারা আসেন তাদেরকে দূরে কোথাও গাড়ি রেখে দিলকুশায় প্রবেশ করতে হয়। সেলিম নামে এক পথচারী বলেন, হেঁটে এই এলাকায় ঢুকবেন তারও সুযোগ নেই। দিলকুশা এখন আগের মতো নেই। প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রটি এখন ঘিঞ্জি হয়ে গেছে। মনেই হয় না এই এলাকায় দেশের প্রধান প্রধান ব্যাংক-বীমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়।
এই ঘিঞ্জি পরিবেশে অনেকেই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন। একটি ব্যাংকের গ্রাহক কালাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি সপ্তাহে তাকে দু’চারবার মোটা দাগের লেনদেন করতে হয় ব্যাংকের সাথে। এই টাকা আনা-নেয়ার সময় চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। দিলকুশার রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ থাকায় আশপাশের রাস্তায়ও বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে।

এই এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে তাদের কিছুই করার নেই। ওই কর্মকর্তারা বলেন, এই এলাকার যানজট এড়াতে অনেক রাস্তা ওয়ানওয়ে করা হয়েছে। কিন্তু এখন দেখছেন পুরো দিলকুশাই পার্কিংয়ে পরিণত হচ্ছে। প্রায়ই রাস্তার ওপর রাখা গাড়িগুলোকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু অনেক সময় জরিমানা করতে গিয়ে তাদেরকেই তোপের মুখে পড়তে হয়। অনেক অফিস রয়েছে, যারা কারো কথা শুনছে না, রাস্তার ওপর তাদের গাড়ি রেখে আসছে বছরের পর বছর।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/283615