১০ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:১৩

মাদরাসাশিক্ষকেরা আমরণ অনশনে অসুস্থ অনেকে

দাবি আদায়ের জন্য তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাজপথে রাত পার করছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকেরা। ১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলা অবস্থায় গতকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন তারা। এরই মধ্যে শীতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। আমরণ অনশনের প্রথম দিনই গতকাল ২৩ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশির ভাগই ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত মাদরাসাশিক্ষক আবু সাঈদ।
মাদরাসা বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদারাসা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে সারা দেশ থেকে এতে যোগ দিয়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। তাদের মধ্যে রয়েছেন অনেক নারীশিক্ষকও।

দাবি আদায়ের ব্যাপারে অনড় অবস্থান ব্যক্ত করে শিক্ষকেরা বলেন, সরকার ২০১৩ সালে ২৬ হাজার প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করে এক ঘোষণায়। অল্পসংখ্যক বাদে এদের প্রায় সবই ছিল রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুল। ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুল ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা ভাতার আওতায় আনার ঘোষণা দেয়ার পর সরকার সব রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করল কিন্তু স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ তো দূরের কথা ভাতার ব্যবস্থাও করল না। ১৯৯৪ সালে দেড় হাজারের কিছু বেশি মাদরাসায় ভাতা দেয়ার পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেল। অথচ আমরাও সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের মতো একই দায়িত্ব পালন করি। এটা আমাদের প্রতি বৈষম্য। সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনামূল্যের বই দেয়, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, বিস্কুট দেয়। কিন্তু আমাদের কোনো বেতন নেই। বছরের পর বছর শিক্ষকেরা বেতনহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা এবার এর অবসান চাই। দাবি আদায় না করে এবার আর ঘরে ফিরব না। প্রাইমারি স্কুলের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাও জাতীয়করণের ঘোষণা চাই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।

এ দিকে ১ জানুয়ারি লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে ক্রমে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা বাড়ছে কর্মসূচিতে। গতকাল তিন হাজারের মতো শিক্ষক অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন বলে হিসাব করেন শিক্ষকেরা।
১৯৮৪ সালে মাদরাসা বোর্ড ১৮ হাজার ১৯৪টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রেজিস্ট্রেশন দেয়। তবে বেতন-ভাতার অভাবে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক মাদরাসা। গত বছর পর্যন্ত মাদরাসা বোর্ডের তথ্য অনুসারে ছয় হাজার ৯৯৮টি মাদরাসার তালিকায় রয়েছে। তবে বোর্ডের তালিকার বাইরেও অনেক মাদরাসা চলমান রয়েছে বলে জানান শিক্ষকেরা। সব মাদরাসা জাতীয়করণ চান তারা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/283575