১০ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:০৯

গুদামে কম্বল স্বল্পতা

হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহের কারণে জেলা প্রশাসকদের গুদামে কম্বলের টান পড়েছে। দুস্থ শীতার্ত মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে তিন দফা কম্বল পেয়েছেন তারা। কিন্তু এখন তাদের গুদামে কম্বল অবশিষ্ট নেই। বিষয়টি জানিয়ে গত তিন দিনে ১৫ জন ডিসি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ মানবজমিনকে বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯০০ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ লাখসহ সর্বমোট ২৮ লাখ ১০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এরপরও বিভিন্ন জেলার ডিসিরা চাহিদাপত্র পাঠাচ্ছেন।

তাদের চাহিদা মেটাতে খোঁজখবর রাখছি। তিনি বলেন, গত পরশু সোমবার বিশেষ ২০টি জেলারে প্রতিটিতে পাঁচ হাজার করে এক লাখ কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরের ২০ জন কর্মকর্তা এসব কম্বল বিতরণ তদারকি করবেন। প্রয়োজন পড়লে আরো কম্বল দেয়া হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ২৯শে নভেম্বর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ৪ ও ১৩ই ডিসেম্বর আলাদাভাবে ডিসিদের বরাবরে কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে। হঠাৎ করে শৈত্যপ্রবাহের কারণে ওই কম্বল বিতরণ শেষ হয়ে গেছে। যশোর, চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রংপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রাজবাড়ী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও ঝিনাইদহসহ বেশ কয়েকটি জেলায় কম্বলের জরুরি প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। গত ৮ই জানুয়ারি নতুন করে আরো কম্বল চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন রাজবাড়ীর ডিসি মো. শওকত আলী। চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তিনটি স্মারক উল্লেখ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৪ হাজার ৬২৫ পিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে প্রথম দফায় সাত হাজার ছয়শ’ পাঁচ ও দ্বিতীয় দফায় সাড়ে চার হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজবাড়ী জেলার বরাবরে ২৬ হাজার ৭৩০ পিস কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলার শীতার্ত দুস্থ জনগণের মধ্যে বিতরণ করা শেষ হয়েছে। ডিসি’র চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সারা দেশের মতো রাজবাড়ী জেলাতেও প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এতে অনেক শীতার্ত অসহায় দরিদ্র পরিবার শীতে কষ্ট ভোগ করছে। এসব অসহায় শীতার্ত ব্যক্তি/পরিবারের মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক কম্বল বিতরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে ত্রাণ গুদামে কোনো কম্বল না থাকায় বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে রাজবাড়ী জেলার শীতার্ত জনগণের মধ্যে বিতরণের জন্য অতিরিক্ত আরো ১৫ হাজার কম্বল জরুরিভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ করা হলো। চিঠির বিষয়ে রাজবাড়ীর ডিসি মো. শওকত আলী বলেন, আমার জেলাটি পদ্মার পাড়ে হওয়ায় অনেক শীত অনুভূত হচ্ছে। নতুন করে আরো ১৫ হাজার কম্বল চেয়ে চিঠি দিয়েছি। একই সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ডিজি স্যারের সঙ্গেও কথা বলেছি। এদিকে হাওড়বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলাটি সরকারের বরাদ্দকৃত কম্বল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এরই মধ্যে বিতরণ শেষ করেছে। এখন এলআর ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে দুস্থদের জন্য কম্বল, স্যুয়েটারসহ শীতের বিভিন্ন সামগ্রী কিনছে তারা। সুনামগঞ্জ জেলার বিত্তবানরাও শীতের সামগ্রী অনুদান দিতে এগিয়ে আসছেন। সুনামগঞ্জের ডিসি সাবিরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, সরকারের বরাদ্দকৃত কম্বল শেষ হয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কম্বলগুলো আমরা বিতরণ করেছি। এখন এলআর ফান্ড থেকে অর্থ নিয়ে শীতার্তদের জন্য কম্বলসহ শীতের সামগ্রী কেনা হচ্ছে। সুনামগঞ্জের বিত্তবান মানুষ ও আমার অনেক বিত্তবান বন্ধুরা এ কাজে এগিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে কম্বল চেয়ে দুয়েক দিনের মধ্যে চিঠি দেব। আশা করছি শৈত্যপ্রবাহে সুনামগঞ্জের মানুষ শীতে কোনো কষ্ট পাবেন না। বরিশালের ডিসি হাবিবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, প্রায় ৫০ হাজার কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এসব কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না। নতুন করে চাহিদাও দেব না।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=99930