১০ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:০৬

বাকৃবিতে ছাত্রীকে রাতে হল থেকে বের করে দিল ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে যোগ না দেয়ায় সোমবার রাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। আফসানা আহমেদ ইভা নামের এই ছাত্রী সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ-খালেকুজ্জামান) কর্মী ও রোকেয়া হলের কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে না যাওয়ায় হল ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে হুমকি দেয়।
বিষয়টি প্রভোস্টকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এক পর্যায় তাকে রুম থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ নেত্রীরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনশন করেন ওই শিক্ষার্থী। তবে তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ ও হল প্রশাসন।

ওই শিক্ষার্থী জানান, ‘রোকেয়া হলের প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের জোরপূর্বক ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য তাকেও জোর করে ছাত্রলীগ কর্মী ওয়াহিদা সিনথি, সাদিয়া আফরিন স্বর্ণা, ইলা, শিলা প্রমুখ। ৪ জানুয়ারি রাতে হলে ছাত্রলীগ কর্মীরা আলাদাভাবে তাকে ডেকে বলে যে, প্রথম বষের্র ছাত্রীদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যাওয়া বাধ্যতামূলক। তাকে আরও বলা হয়, পরবর্তী কর্মসূচিতে যেন আরও ১০ জন ছাত্রী নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। প্রস্তাবে রাজি না হলে তাকে হল থেকে বের করে দেয়া ও জিনিসপত্র পুড়িয়ে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়। ইভা বিষয়টি পরদিন (৫ জানুয়ারি) হল প্রভোস্টকে অভহিত করেন।
এ কারণে হল ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে ডেকে নিয়ে ৭ তারিখ বিকাল ৫টার মধ্যে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। বিষয়টি হল প্রভোস্টকে লিখিতভাবে জানান ইভা। এরপরও প্রভোস্ট কোনো ব্যবস্থা না নিলে রোকেয়া হলের শাপলা (ছাত্রফ্রন্ট নেতা) প্রভোস্টকে ফোন দিয়ে ইভাকে তার কাছে নিয়ে রাখতে বলেন। সোমবার রাতে আবার ছাত্রলীগ কর্মীরা ইভাকে ৩০৯ নং রুম থেকে ডেকে নিয়ে হলে বাইরে বের করে দেন।
এ সময় হলের আয়ারা বেডিংপত্র হলের বাহিরে রেখে যায়। এর প্রতিবাদে ইভা পরদিন সকাল ৮টার দিকে হলের প্রধান ফটকে আমরণ অনশন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আতিকুর রহমান তার কার্যালয়ের নিয়ে যান ইভাকে। দুপুর আড়াইটার দিকে ইভা আবার হলের প্রধান ফটকে অবস্থান নিলে সাবেক প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর ওই ছাত্রীকে হলের ভেতরে নিয়ে যান।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সৌরভ দাস জানিয়েছেন, তাদের কর্মী ইভা কক্ষে ফিরে গেছেন। আবার আমাদের কর্মীদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করা হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. রুবেল বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। রাতে অতিথি কক্ষে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডেকে দেশের সঠিক ইতিহাস ও আদব-কায়দা শেখানো হয়।’
প্রভোস্টের বিরুদ্ধে ছাত্রীর আনা অভিযোগ অস্বীকার করে রোকেয়া হলে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইসমত আরা বেগম বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/4978