৯ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:০১

এসআইসহ চার পুলিশ বাস ডাকাতি মামলায় ক্লোজড

ঝিনাইদহে স্বর্ণের বার উদ্ধার রহস্য

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের আরও ৪ সদস্যকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়েছে। এরা হলেন মহেশপুর থানার এসআই নাজমুল হক, কনস্টেবল এরশাদ, অলিয়ার রহমান ও মনির হোসেন। সোমবার সকালে তাদের বিরুদ্ধে এ আদেশ জারি করা হয়। এ নিয়ে সম্প্রতি দুই এসআইসহ ৮ জনকে ক্লোজ করা হল। পুলিশ সদস্যদের ক্লোজ করার খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ। তিনি জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তবে কী অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

সূত্র জানায়, চলতি মাসের ৪ তারিখ গভীর রাতে কালীগঞ্জ-জীবননগর-দর্শনা সড়কে জীবননগরগামী সোনারতরী নামের একটি পরিবহন বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে মহেশপুর থানায় ৭ জানুয়ারি একটি মামলা করা হয়। যার নম্বর ১০। মামলাটি তদন্তের জন্য একই থানার এসআই আলিমুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। ওসি আহম্মেদ কবীর যুগান্তরকে বলেন, সোনারতরী বাসটি থেকে স্বর্ণলুটের ঘটনা জানা নেই তার। তবে বাসটির যাত্রীদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করার খবর সঠিক। বাস থেকে ৬৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়েছে (প্রতিটি বারের ওজন ১০০ গ্রাম করে) এমন খবর অস্বীকার করেন ওসি। অন্যদিকে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ বলেছেন, প্রশাসনিক কারণে ওই ৪ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়েছে।

অপরদিকে বাস ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের এসআই নাজমুল হক যুগান্তরকে মোবাইল টেলিফোনে বলেন, আগেই মহেশপুর থানার ওসির সঙ্গে জেলা পুলিশের পদস্থদের বিরোধ চলে আসছে। তার ভাষায় এর আগে উদ্ধার করা স্বর্ণ নিয়ে এ বিরোধ সৃষ্টি হয় বলে শুনেছেন তিনি। তিনি বলেন, ঘটনার দিন ৪ জানুয়ারি রাতে সড়কটির খালিশপুর-জীবননগর অংশে মহেশপুর থানার এসআই আনিছুর রহমান ও খালিশপুর-কোটচাঁদপুর অংশে এএসআই সেলিম দায়িত্ব পালন করেন। ঘটনা ঘটেছে সড়কের পুরন্দপুর অথবা বজরাপুর নামক স্থানে। ওই রাতে স্থানীয় দুলালী সিনেমা হলের কাছের একটি চায়ের দোকানে চা পান করে বাসায় ফিরে যান তিনি। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন একই থানার পরিদর্শক তদন্ত ফারুক হোসেন ও সেকেন্ড অফিসার অলিমুজ্জামান। পরের দিন ৫ জানুযারি রাতে অভিযান ডিউটি করেন তিনি। কেন তাকে ক্লোজ করা হয়েছে তা জানা নেই তার। তাকে ৮ জানুয়ারি সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নিজ কার্যালয়ে স্বর্ণের বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
চাউর করা হয়েছে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরগামী সোনারতরী নামের একটি পরিবহন বাসে স্বর্ণের একটি বড় চালান পাচার করা হচ্ছিল। চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনাভিত্তিক এক স্বর্ণ পাচারকারী সিন্ডিকেট সদস্যদের কয়েকজনের কাছে ছিল ওই সোনা। ঘটনার দিন রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৩টার মধ্যে কোনো সময়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জীবননগরগামী সোনারতরী পরিবহন বাস কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের পুরন্দপুর এলাকার ১২ মাসে ব্রিজ অথবা কাটাখালী নামক স্থানে থামিয়ে লুট করা হয় সেই স্বর্ণ। বিষয়টি গোপন রাখা হলেও ঘটনার দু’দিন পরে জেলা পুলিশের পদস্থরা জেনে গেছেন। সূত্রমতে, এ ঘটনায় মহেশপুর থানার এসআই নাজমুল হক, কনস্টেবল এরশাদ, অলিয়ার রহমান ও মনির হোসেন ওই ঘটনায় জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের নির্দেশে ক্লোজ করা হয় তাদের। কারাগারের জেলার মো. নিজাম উদ্দীন বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৫ এর ‘খ’ ধারায় এ মামলা করা হয়। যার নম্বর ৪৩।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ কারাগারে বন্দি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার আড়ুয়াকান্দি গ্রামের সৃষ্টি ধরের ছেলে ধ্রুবত গায়েনের (৩৬) কাছ থেকে সোনারবার বারগুলো উদ্ধার করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা। মহেশপুর থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ১৬ অক্টোবর সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মেইন পিলার ৫২/৯ থেকে ১০০ গজ অভ্যন্তরে মহেশপুর উপজেলার মটিলা গ্রাম থেকে বিজিবি ৪ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে একজন ধ্রুবত গায়েন। এছাড়াও পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা খুলনার পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম মহেশপুরের ৪ পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে ১৬ লাখ টাকা কেড়ে নেয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে মাঠে নেমেছেন। অভিযুক্তরা হলেন, মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাহফজুল হক, এএসআই নরুনবী, কনস্টেবল হোসেন আলী ও সোহল রানা। ইতিমধ্যে পুলিশ লাইনসে ক্লোজ (সংযুক্তি) করা হয়েছে তাদের। গেল বছরের ২৬ নভেম্বর ঘটনাটি ঘটে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/4713