রাজধানীর বিমানবন্দর মোড়ে ফুট ওভারব্রিজে স্থাপিত চলন্ত সিঁড়ি
৯ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:০০

ফুট ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন ভুল সিদ্ধান্ত

আর স্থাপন করবে না ডিএনসিসি

ফুট ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি (এস্কেলেটর) স্থাপনকে ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ জন্য আপাতত আর কোনো ফুট ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনসাধারণের চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহারের অজ্ঞতায় বারবার নষ্ট হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত এ যন্ত্র। এ জন্য রক্ষণাবেক্ষণ করতে সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে।

রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর রোড-সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে বাংলাদেশের প্রথম চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুট ওভারব্রিজ স্থাপন করা হয়। অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেজ) প্রকল্পের আওতায় এ ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়। ফুট ওভারব্রিজে ওঠার জন্য দুই পাশে লাগানো হয় চলন্ত সিঁড়ি। এর প্রশস্ততা ৮ মিটার ও দৈর্ঘ্য ২০ মিটার। নামার জন্য দুই পাশের সাধারণ সিঁড়ি ১২ মিটার প্রশস্ত। এটি নির্মাণে ব্যয় হয় তিন কোটি টাকা। ২০১৪ সালে চালু হওয়ার এক বছর পর সেটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) বুঝিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে সেটি দেখভালের দায়িত্ব সম্পূর্ণ ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের।
তবে চালু হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই এটি প্রথম বিকল হয়। এরপর দিনে ১০-১৫ বারও বিকল হতে দেখা গেছে এ এস্কেলেটরটিকে। এ সময় নি¤œমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে ফুট ওভারব্রিজ তৈরির অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে প্রায়ই বিকল থাকছে এ ব্রিজ। একটানা ছয় মাসও বন্ধ থাকতে দেখা গেছে চলন্ত সিঁড়ি।
একইভাবে ২০১৬ সালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মোড়ের ফুটওভার ব্রিজের দুই পাশে দু’টি চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করা হয়। কিন্তু সেটিও একইভাবে মাসের পর মাস বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে। সিঁড়ির মাথায় গেটে তালা মেরে রাখা হয়।

এভাবে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর গত মাসের শেষ সপ্তাহে ফ্লাইওভার দু’টির চলন্ত সিঁড়ি চালু করা হয়েছে। ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (টিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমানবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করেছে। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের সময় শেষ হওয়ার পর বর্তমানে ডিএনসিসি নিজস্ব জনবল দিয়ে এগুলো পরিচালনা করছে। তবে আবারো এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, চলন্ত সিঁড়ি একটি যন্ত্র। এতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লোক চলাচলের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু জনসাধারণ একসাথে এর ওপর চলাচল করছে। আবার অনেকে ভারী মালামালও এর ওপর নিয়ে ফেলছে। বেশি বোঝা চাপার কারণে চলন্ত সিঁড়ি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জনগণ এর ব্যবহার নিয়ে সচেতন না হলে এ অবস্থা চলতেই থাকবে।

সাইদুর রহমান জানান, একটি ফুটওভার ব্রিজের দু’টি চলন্ত সিঁড়ি সার্বক্ষণিক দেখাশোনায় নিয়মিত কমপক্ষে তিনজন লোকের প্রয়োজন হয়। যাদের কমপক্ষে ৪০-৪৫ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। এর পাশাপাশি ধুলা ও ময়লা-আবর্জনাসহ আনুষঙ্গিক কারণে মাসে চারবার সার্ভিসিং করতে হয়। যাতে খরচ হয় আরো ২০ হাজার টাকার মতো। ফলে মাসে স্বাভাবিক খরচই পড়ে ৬০-৬৫ হাজার টাকা। আর যদি কোনো যন্ত্র নষ্ট হয় তাহলে সে খরচতো রয়েছেই।
ডিএনসিসির এ প্রকৌশলী বলেন, ফুট ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন ভুল সিদ্ধান্ত। জনগণ এ সিঁড়ি ব্যবহারের ব্যাপারে এখনো সচেতন নয়। এ জন্য আগামীতে আর কোনো ফুট ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহারের পরিকল্পনা নেই। ডিএনসিসি এলাকায় বর্তমানে ৫৪টি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দুই বছরে আরো ৫০টি স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/283390