৮ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ১০:৩৬

ঢামেক হাসপাতাল চত্বর যেন অ্যাম্বুলেন্সের ওয়ার্কশপ

প্রবেশপথ দখল করে পার্কিং, ভোগান্তি

একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিনের কিছু অংশ খুলে বাইরে রাখা হয়েছে। আরও কিছু যন্ত্রাংশ খোলা হচ্ছে। হাতুড়ি, স্টূ্ক্র ড্রাইভার, রিং, ছোট পাইপ, জগসহ গাড়ি মেরামতের কাজে ব্যবহূত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে ধাতব ট্রলিও রয়েছে। এর ওপর দুই মিস্ত্রি ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ রেখে মেরামত করছেন। আশপাশে আরও ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা রয়েছে। পার্কিং ও মেরামত করা হলেও তা কোনো ওয়ার্কশপের চিত্র নয়; এটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল চত্বরের নিয়মিত দৃশ্য। সেখানে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের 'ওয়ার্কশপ' গড়ে তোলা হয়েছে। এতে করে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন সমকালকে বলেন, হাসপাতাল চত্বরে যত্রতত্র বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স যাতে পার্কিং করতে না পারে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর পরও অনেকে রাখার চেষ্টা করে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতাল চত্বর ও প্রবেশপথে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের অবৈধ পার্কিং নতুন নয়, দীর্ঘদিনের। তবে অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের জন্য সেখানে ওয়ার্কশপ গড়ে তোলার বিষয়টি নতুন। দিনে-রাতে অ্যাম্বুলেন্স মেরামত করা হয়। প্রবেশপথে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশাও রাখা হয়। রাস্তা দখল করে পার্কিংয়ের কারণে জটলার সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশপথে 'মানবসেবা' নামে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চাপায় ছয়জন নিহত হন। আহত হন আরও কয়েকজন। চালকের সহকারী সোহেল অ্যাম্বুলেন্সটি চালিয়ে হাসপাতালের নতুন ভবনের দিকে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনার পর সে সময় হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং উচ্ছেদ করেছিল কর্তৃপক্ষ। তবে ক'দিন না যেতেই আবার ফিরে পায় পুরনো চেহারা। পার্কিং শুরু হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে হাসপাতাল চত্বরে দুটি স্থানে অ্যাম্বুলেন্স মেরামত করতে দেখা যায়। বহির্বিভাগ মেডিসিন স্টোরের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স মেরামত করা হচ্ছে। গাড়ির ইঞ্জিনের কিছু অংশ খুলে কাজ করছেন তিনজন। তাদের একজন বলেন, গাড়ি ওয়ার্কশপে নিলে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। এ কারণে এখানেই মিস্ত্রি নিয়ে এসে কাজ করানো হচ্ছে। সকাল থেকেই অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান তিনি। এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা নার্সিং কলেজের পাশের সড়কের ওপর আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের দৃশ্য চোখে পড়ে। বহির্বিভাগে যাতায়াতের সড়ক এটি। ব্যস্ত এই সড়কের ওপরই সারিবদ্ধভাবে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা রয়েছে। এতে রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অন্যদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গতকাল ১২টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। এ ছাড়া ঢামেক হাসপাতাল-২, মর্গ চত্বর, ঢামেকের ছাত্রী হোস্টেলের সামনেও একইভাবে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স অবৈধভাবে পার্কিং রয়েছে।
জানা যায়, হাসপাতাল চত্বরে শতাধিক বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকে। এর মধ্যে অধিকাংশই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাইক্রোবাস থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তরিত করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মালিক হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারী ও তাদের স্বজন। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা চলছে। ঢামেক হাসপাতালের রোগী বা মৃতের স্বজনরা বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গেলেও তাতে ঝামেলা সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট সদস্যরা। তাদের কাছ থেকেই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে বাধ্য করা হয়।

http://samakal.com/capital/article/1801421