৮ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৯:৪৯

আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প এখন ভারতের গলার কাঁটা

বহমান এই সময়ে

জি. মুনীর
ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প দেশটির পরিকল্পনাবিদদের একটি চরম নির্বুদ্ধিতার উদাহরণ। কারণ, প্রকল্পটি ভাটির দেশের জন্য তো বটেই, এমনকি ভারতের নিজের জন্যও বয়ে আনবে চরম বিপর্যয়। এই প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে হাতে নেয়া হয় ভারতের পানি ঘাটতি এলাকা ও মওসুমি বন্যার এলাকার পানি সমস্যার সমাধানের বিষয়টি মাথায় নিয়ে। উচ্চাকাক্সক্ষী এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার ড্যাম ও হাজার হাজার কিলোমিটার খাল খনন করে ৩৭টি নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ গড়ে তোলার কথা বলা হয়। উদ্দেশ্য, এর মাধ্যমে উদ্বৃত্ত পানির অববাহিকা থেকে পানি ঘাটতির অববাহিকায় পানি স্থানান্তর করা হবে। বলা হয়, এর ফলে বন্যা ও পানি ঘাটতি সমস্যার মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। যেখানে পানির চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ গড়ে তোলা আজকের দুনিয়ায় এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকে গেছে। তাই ভারতের এই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পটি সে আলোকেই উপলব্ধি করতে হবে। এই প্রকল্পের প্রবল সমর্থক যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিরোধীরাও। এই প্রকল্পের পক্ষের ও বিপক্ষের বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

এই প্রকল্পের প্রধান দুই বিষয় হচ্ছে : পানি ঘাটতি এলাকায় পানি সরবরাহ এবং বন্যাকবলিত এলাকার বন্যা সমস্যার সমাধান। এ কথা ঠিক, ভারতের দক্ষিণ ও পশ্চিমের শুষ্ক অঞ্চলে সেচ ও পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ভারতের জন্য বরাবরের একটি চ্যালেঞ্জ। অসংখ্য পানি সরবরাহ পরিকল্প, সেচ পরিকল্প ও অন্যান্য পানি-ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সারা দেশে চালু করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এর পেছনে নানা কারণ : দুর্নীতি, অসম্পূর্ণ কাজ, অবকাঠামো মেরামতের অভাব, নি¤œমানের নির্মাণ, অপরিপক্ব পরিকল্পনা ইত্যাদি। উদাহরণত, ‘মিনিস্ট্র অব আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পোভার্টি’র এক সমীক্ষায় বলা হয়েছেÑ শহরগুলোতে সরবরাহ করা পানির ৩০-৫০ শতাংশ সরবরাহব্যবস্থার লিকেজের কারণে হারিয়ে যায়। ‘কম্পট্রোলার অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া’ তথা সিএজির অডিট রিপোর্ট ও অন্যান্য সমীক্ষা মতে, সরবরাহব্যবস্থার কারণে পানি হারানোর পরিমাণ দিল্লিতে ৪০-৫০ শতাংশ, কর্নাটকে ৫০ শতাংশ, সিমলায় ৪০ শতাংশ এবং গোয়ায় ৩৫ শতাংশ। এই পানি হারানোর পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১০-১৫ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক বেশি। সেচ প্রকল্পগুলোতে পরিস্থিতিটা আরো খারাপ। সিএজির তথ্য মতে, ‘ইন্ডিয়াস এক্সিলারেটেড ইরিগেশন বেনিফিট প্রোগ্রাম’-এর প্রত্যাশিত সক্ষমতার ৫০ শতাংশেরও কম বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। ২০১১ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, গড়ে প্রধান প্রধান সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারের ক্ষমতা মাত্র ৩৫ শতাংশ। মহারাষ্ট্রের সেচ কেলেঙ্কারির কথা সুপরিচিত। অন্য অনেকরাজ্যেও পরিস্থিতি অনেকটা একই ধরনের। যেমনÑ এ ক্ষেত্রে নাম করা যায় অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক ও আরো অনেক রাজ্যের। কর্নাটকের অসংখ্য সেচ প্রকল্পে ব্যবহার হয় মাত্র ৩০ শতাংশ পানি। কারণ, সেখানে প্রয়োজনীয় খাল খনন করা হয়নি।

বন্যা নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির অবস্থাও একই ধরনের। দেশটির ব্যাপক অঞ্চলে বারবার বন্যাকবলিত হয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। ২১৯টি টেলিমেট্রি স্টেশন, ৩১১০টি বেইস স্টেশন, ১০০টি বন্যাপূর্বাভাস স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে মাত্র ৫৬টি টেলিমেট্রি স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই অকেজো। এখানে রিয়েল টাইম ডাটা সংগ্রহ বিঘিœত হচ্ছে। ১৭টি রাজ্যে এখনো বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার কাজ বাকি। মাত্র ৭ শতাংশ বড় ড্যাম তৈরি হয়েছে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের আওতায়। মাত্র ৫ শতাংশ পদ্ধতি অনুসরণ করে চলছে।
পানিব্যবস্থাপনায় এ ধরনের নানা নাজুক পরিস্থিতির দিকে নজর না দিয়ে ভারতের সমূহ নজর এখন অতিমাত্রায় আন্তঃনদী সংযোগে প্রকল্পের ওপর। এই ইন্টারলিঙ্ক ইন্ডিয়ান রিভার (আইএলআর) প্রজেক্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় ২০১২ সালে। ৩০টি সংযোগ খালের (১৪টি হিমালয়ান ও ১৬টি পেনিনসুলার) মাধ্যমে ৩৭টি নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ গড়ে তোলার কথা রয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। খাল খনন করা হবে মোট ১৪,৯০০ কিলোমিটার। প্রথম প্রাক্কলন মতে, এই প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ৫,৬০,০০০ কোটি রুপি। এটি শুধু খাল খননের মাধ্যমে ৩৭টি নদীকে সংযুক্ত করার প্রকল্পই নয়, এর সাথে রয়েছে বড় ড্যাম ও উচ্চ ধারণক্ষমতার বড় খাল খননের মহাযজ্ঞ। শুরু থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়ে আসছে এর আইনি, পদ্ধতিগত, আর্থ-সামাজিক ও কারিগরি বিষয়াবলি নিয়ে। অনেক সুযুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখা হয়েছে এই প্রকল্পকে ঘিরে। তৃণমূল পর্যায়ে অনেক ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের বাইরেও এর বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনা হয়েছে, ওজর-আপত্তি তোলা হয়েছে। ভারতের প্রতি এই প্রকল্প বাতিলের আহ্বানও জানানো হয়েছে। তবে ভারত সরকার তা আমলে নেয়নি।

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রল্পের বিরুদ্ধে সবচেয়ে যৌক্তিক ও প্রত্যয়োদ্দীপক আপত্তি ও অভিমত এসেছে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, সমাজবিজ্ঞানী, তৃণমূলের সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন ও সক্রিয়বাদীদের পক্ষ থেকে। এই মেগা প্রকল্প সম্পর্কে সবচেয়ে মৌলিক আপত্তি হচ্ছেÑ এটি একটি ‘ইল-কনসিভড’ ও ‘রিভার্স প্ল্যানিং লজিক’-এর উদাহরণ হয়ে থাকবে। কারণ, পানির প্রাপ্যতা সমস্যা অন্যান্য সব বিকল্প বিবেচনায় না এনে আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে পানি সমস্যার সমাধান হচ্ছে এই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। এ সিদ্ধান্তের পর সরকার অগ্রসর হয়েছে এর বাস্তবায়নের মডালিটি বা সাধনপ্রণালিগুলো পূরণের কাজে। এতে এই প্রকল্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষ যথার্থ যুক্তি ও দাবি নিয়ে এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদে নামার সহজ সুযোগ পেয়েছে। এরপর বিষয়টি নানাভাবে আদালতে গড়িয়েছে। আদালত থেকে সরকারকে নানা ব্যর্থতা ও স্বচ্ছতা সম্পর্কে দেয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা। ফলে পুরো আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পটিই যেন হয়েছে ভারতের গলার কাঁটা।
আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো নিয়ে সবচেয়ে বড় ধরনের উদ্বেগের ক্ষেত্রটি হচ্ছে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব। এমনিতেই ভারতসহ ও এর আশপাশের দেশগুলোর পরিবেশ-পরিস্থিতির মান দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে, কারণ প্রকৃতির ওপর চলছে অনিয়ন্ত্রিত লুটপাট আর ধ্বংসযজ্ঞ। আছে পরিবেশের ওপর ভারতে নব্য উদার অর্থনৈতিক নীতি। আবহাওয়ার পরিবর্তনের প্রভাব ও পানির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ। এর ওপর এই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প পরিবেশ ধ্বংসের মাত্রা আরো বাড়িয়ে তুলবে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের ১৬ শতাংশ জনসংখ্যা ও ৪ শতাংশ বিশুদ্ধ পানি নিয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাপক পানি-সঙ্কটে পড়বে।
এই প্রকল্পের সাথে যেসব পরিবেশগত সমস্যা সংশ্লিষ্ট তা সংক্ষেপে বোঝার জন্য আমাদের মধ্য-প্রদেশ ও উত্তর-প্রদেশের মধ্যকার পাইলট প্রকল্প ‘কেন-বেটওয়া লিঙ্ক প্রজেক্ট’ (কেবিএলপি)-এর সম্ভাব্য পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাই যথেষ্ট। ইন্টার লিঙ্কি রিভার টিএফ ২০০৫ সালে ‘পাবলিক ডোমেনে’ উপস্থাপন করেছে এই প্রকল্পের কিছু ফিজিবিলিটি রিপোর্ট। আর তা তখনই করা হয়, যখন সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশনার মাধ্যমে তা করতে সরকারকে বাধ্য করে। এনডব্লিউডিএ ১৯৯৬ সালে কেবিএলপি ফিজিবিলিটি রিপোর্ট তৈরি করে। এটি তৈরি হয় এরও আগে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এবং ২০০৬ সালে তা প্রবল বিতর্কের মুখে পড়ে। তা সত্ত্বেও ২০১৬ সালের জুনে মন্ত্রী উমা ভারতী কেবিএলপির অনুমোদনে দেরির বিষয়টিকে একটি ‘ন্যাশনাল ক্রাইম’ ঘোষণা করার পর পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া মন্ত্রণালয় চাপ সৃষ্টি করে ন্যাশনাল বোর্ড অব ওয়াইল্ড লাইফ থেকে এর অনুমোদন নেয়ার জন্য। তিনি হুমকি দেন অনশন ধর্মঘটে যাওয়ারও। এভাবেই পরিবেশগত উদ্বেগের বিষয়টি রাজনৈতিক চাপের শিকারে পরিণত হয়। ন্যাশনাল বোর্ড অব ওয়াইল্ড লাইফ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে কেবিএলপির ক্লিয়ারেন্স দেয়।

কেবিএলপির সাবমার্জ এরিয়া (আধা ডুবে থাকা ভূমি) প্রায় ৯ হাজার হেক্টর, এর ৪, ১৪১ হেক্টরের পুনা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টসহ ৫,২৫৮ হেক্টর গভীর বন এলাকা। ভারতের ‘ইকোনমিক টাইমস’-এর এক রিপোর্টে বলা হয়, এই প্রকল্পের কারণে সাড়ে ১০ হাজার হেক্টরের বাঘবসতি হরিয়ে যাবে। সুস্পষ্টভাবে ভূমির পরিমাণে এই বিভিন্নতা মৌল উপাত্ত সম্পর্কে নানা সংশয়ের জন্ম দেয়। তা ছাড়া এই ফিজিবিলিটি রিপোর্টে সাবমার্জড গভীর বন থেকে মিথেন গ্যাস উদগিরণের ফলে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটবে, সে বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়নি।
পরিবেশ বিনাশে কেবিএলপি একটি উদাহরণ মাত্র। এই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পর আরো অনেক কম্পোনেন্ট প্রজেক্ট রয়েছে, যেগুলো পরিবেশ বিনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং এগুলো স্বল্পসময়ের অর্থনৈতিক উপকার কিছু বয়ে আনলেও এর বিপরীতে সৃষ্টি করবে দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী পরিবেশ বিপর্যয়। আর তা প্রাণিকুলের অস্তিত্বকেও বিপন্ন করে তুলবে।

এ ছাড়া জীবিকা হারানোসহ বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থানচ্যুতি হচ্ছে এই আন্তঃনদী সংযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি সমস্যা। এ ধরনের সমস্যার জ্বলন্ত প্রতীকী প্রমাণ দেশে সিকি শতাব্দী ধরে চলমান নরমেদা উপত্যকা বাঁচাও প্রতিরোধ আন্দোলন। যৌক্তিক কারণেই উল্লেখ প্রয়োজন, ৫ কোটির বেশি মানুষ এরই মধ্যে স্থানচ্যুত হয়েছে, যাদের কেউ দ্বিতীয়বার স্থানচ্যুত হয়েছে ১৯৫০ সালের পর থেকে, শুধু বাঁধ ও খাল খননের কারণে।
প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ভোগান্তি ছাড়াও তাদের নতুন স্থানে বসতি স্থাপনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক অস্থিরতা। আর এরা নিজেরা পড়েছে অর্থনৈতিক চাপের মুখে। এসব সমস্যার সমাধান করা হয়নি সব আন্তঃনদী সংযোগসংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে। প্রাকৃতিক সম্পদ অনিয়ন্ত্রিতভাবে লুণ্ঠিত হওয়ার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন পরিবেশ সমস্যাও।

আমরা জানি, বিশ্বের ১৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দেশ বিশ্বের ৪ শতংশ পানিসম্পদের অধিকারী হওয়ার কারণে ভারতে পানির চরম অভাব রয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই ২০০২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি ঘোষণা করেছিলেন তার ‘Catch every raindrop where it falls’ ধারণা। সেটিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল একটি ‘no-conflict, low-cost and practical idea of water conservation’ ’ হিসেবে। কিন্তু তার এই ধারণা এক পাশে ঠেলে রাখে এনডব্লিউডিএ ২০০২ সালের ১৪ আগস্ট আান্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পকে সামনে আনার মাধ্যমে।

বাস্তবতা হচ্ছেÑ আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে এরই মধ্যে চলছে আন্তঃরাজ্য, আন্তঃউপত্যকা পানিবিরোধ। এসব বিরোধ এখন দেশটির আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। শুধু আন্তঃরাজ্যই নয়, আন্তর্জাতিক বিরোধও রয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নদী নিয়ে। ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে রয়েছে অনেক আন্তর্জাতিক নদীর সংশ্লিষ্টা। অতএব এই প্রকল্প নিয়ে সৃষ্ট হতে পারে বড় ধরনের বিরোধ। আন্তঃরাজ্য বিরোধের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে কাবেরি নদীর পানি নিয়ে দশক ধরে কর্নাটক ও তামিলনাড়–র মধ্যে চলমান পানি বিরোধ। আছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যে SYL canal নিয়ে বিরোধ। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সিন্ধু নদের পানি নিয়ে ভারতের সাথে আছে পাকিস্তানের বিরোধ, আর গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিরোধ। ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি আছে বাংলাদেশ ও নেপালের।

শুধু ভারতের বাইরের নয়, ভারতীয় সংশ্লিষ্ট তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অভিমতÑ ভারতের উচিত নিজের স্বার্থেই অবিলম্বে স্থায়ীভাবে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাতিল করা। দেশটির তাকানো দরকার বেসিন ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্টের দিকে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোকে জোরদার করতে হবে পানি সংরক্ষণের ওপর। নইলে ভারতের সামনে অপেক্ষা করছে পরিবেশিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিরূপ প্রভাব শুধূ ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি ছড়িয়ে পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্কেও। তাই সার্বিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবতায় ভারতের সামনে এই প্রকল্প বাতিল ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো বিকল্প নেই।

 

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/283112