৮ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৯:৪৮

নতুন বছরে অনেক চ্যালেঞ্জ

দেখা অদেখা

সালাহউদ্দিন বাবর
অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়েছে নতুন বছর, ২০১৮ সাল। ২০১৭ সাল জাতির জন্য কোনো সাফল্যের বার্তা রেখে যায়নি নতুন বছরের জন্য, যা থেকে উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়। ইংরেজি নববর্ষকেও বরণ করে নেয়ার আয়োজন হয়ে থাকে এ সমাজে। প্রতিটি বছরের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা সব দেশের মতো বাংলাদেশও নিয়ে থাকে। তবে বছর সুমারির পর দেখা যায় সে পরিকল্পনা থেকে প্রাপ্তির পরিমাণ খুব বেশি নয়। উন্নয়ন পরিকল্পনায় অনেক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু অবহেলা অদক্ষমতা অনিয়ম অব্যবস্থা অপচয়Ñ এসব দুর্বলতার কারণে জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে লক্ষ্য অর্জন থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়ি আমরা। এই ব্যর্থতার একটি সাম্প্রতিক কারণ শুধু পরিকল্পনার ত্রুটি নয়; তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ দেখভাল ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে বাংলাদেশে। এ সমস্যা বছরের পর বছর ধরে এ দেশের মানুষ দেখে আসছে। এ থেকে উত্তরণের ক্ষীণতম আলোও দেখা যাচ্ছে না।

এ সঙ্কটগুলোর সুরাহা করতে না পারায় প্রতি বছরের মতো এবারও সেগুলো ব্যাপকতর চ্যালেঞ্জ হয়ে হাজির হবে দেশের সামনে। এসব সঙ্কটের সমাধান করতে হবে সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। তবে বেশির ভাগ দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের। তাদের তত্ত্বাবধানে, প্রণীত পরিকল্পনা অনুসারে এবং গৃহীত কর্মকৌশলের পথ ধরে দেশ ও জাতি এগোবে। দেশ অগ্রসর হওয়ার পথ এটাই। কিন্তু সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব সুচিন্তিতভাবে বেছে নিতে হবে। তাদের কর্মপরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি জানতে হবে। এমন নেতৃত্বকে বেছে নেবে দেশের প্রকৃত মালিক, জনগণ। নেতৃত্ব বেছে নেয়ার সুষ্ঠু প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে নির্বাচন। কর্মপ্রিয় সৎ, যোগ্য এবং জনহিতকারী নেতৃত্ব বেছে নেয়ার প্রক্রিয়াটা যত সঠিক ও স্বচ্ছ হবে ততই কল্যাণ। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে জনগণের নেতৃত্ব বেছে নেয়ার জন্য যে নির্বাচন হয়, তা নানা দোষে দুষ্ট। ২০১৮ সালে দেশে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষভাবে হতে পারবে কি না, সেটাই এ বছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ। অতীতে এ দেশের নির্বাচন নিয়ে ঘটেছে নানা অনিয়ম ও অঘটন। জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন সেসব নির্বাচনে হয়নি বলে দীর্ঘকাল থেকে জনমনে অসন্তোষ ও হতাশা। দেশে সর্বশেষ যে নির্বাচন ২০১৪ জানুয়ারিতে হয়েছিল, তা ছিল প্রহসনের একদলীয় নির্বাচন। সে নির্বাচন হয়েছিল ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে। আর ক্ষমতাসীনদের ভূমিকা তখন ছিল চরম অগণতান্ত্রিক। বিরোধী দল ২০১৪ সালের আগে থেকেই নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনে ভোট অনুষ্ঠানের দাবিতে বাস্তব কারণেই সোচ্চার। বিরোধী দলের এমন দাবি অগ্রাহ্য করে ক্ষমতাসীনেরা বলেছেন, এবারও নির্বাচন তাদের অধীনেই হবে।’ বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দলের পরস্পরের বিপরীত অবস্থানের কারণে আগামী নির্বাচনও অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে প্রবল সংশয়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা থেকে যাবে।

জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচনের স্বরূপ কেমন হবে, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে একটি প্রশ্ন, মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের আকাক্সক্ষা সবার। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট, নির্বাচন কমিশন ও সরকার প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের কথা বলছেন। কিন্তু এ দেশে ভালো মানের নির্বাচনের সংখ্যা যেমন অল্প, তেমনি এর ধারাবাহিকতা অবিচ্ছিন্ন ছিল না। কখনো কখনো ভালো নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু তারপর এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। তাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার দাবিতে যারাই যখন বিরোধী দলে ছিল তারাই সোচ্চার ছিল। কিন্তু যখন তারা ক্ষমতায় গেছে এই দাবিতে তাদের কণ্ঠ ছিল একেবারেই ক্ষীণ। গণতন্ত্রের চর্চা সুষ্ঠুভাবে না হওয়ায় এ অঞ্চলে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সত্যিকার গণতন্ত্রের জন্য এর অন্যতম শর্ত, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। সেই মানের ভোটের জন্য, গ্রহণযোগ্য একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কয়েকটি দল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এর প্রেক্ষাপটে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকার এই প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে ক’দফা দেশে সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, সেসব নির্বাচন মানসম্পন্নভাবেই হয়েছে।

কিন্তু গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারের অভাবে এই ব্যবস্থা আইনের মারপ্যাঁচে স্থায়ী হতে পারেনি। এই পদ্ধতির যে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ছিল, তা সংশোধনও পরিমার্জনের মাধ্যমে তাকে শুদ্ধ করার প্রয়াস না চালিয়ে সেই ব্যবস্থা বাতিল করার ক্ষেত্রে যারা মৌন ছিল কিংবা এর পক্ষাবলম্বন করেছে; এজন্য তাদের অনুতাপ করা উচিত। ভেবে দেখা সঙ্গত যে, এতে গণতন্ত্রের কতটা ক্ষতি হয়ে গেছে। একটি ভালো পদ্ধতি ক্রমাগত বিবর্তনের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। তাকে সে সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। একটি ভালো ব্যবস্থা কায়েম হলে দীর্ঘ সময় তা থেকে কল্যাণ পাওয়া যায়। আজকে পুনরায় যে নির্বাচন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে, তা এভাবে আর চক্রাকারে ঘুরত না এবং গণতন্ত্র সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ হতো। গণতন্ত্র বিকশিত হলে তা থেকে কল্যাণ আসত।
প্রায় তিন বছর হতে চলল রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ চলছে। প্রতিবেশী মিয়ানমার অমানবিকভাবে সে দেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার জন্য সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অসহায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা পাহাড়ি ঢলের মতো প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশে। দুস্থ এই জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে। বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর দুয়ারে তাদের দুর্দশা তুলে ধরেছে। অতি সম্প্রতি এই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার একটা কথা হয়েছে। এদের সম্মানের সাথে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ কাজ করছে। তাদের দীর্ঘ সময় এখানে অবস্থান দেশের সামাজিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে দেয়া বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

স্বস্তির বিষয় যে, রোহিঙ্গাদের আগমনজনিত সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ। এর ফলে এই সমস্যা মোকাবেলায় সরকার অনেক সহায়তা পেয়েছে। এ বছর এক লাখ রোহিঙ্গা স্বদেশে যাবে বলে শোনা গেছে। কিন্তু ধূর্ত মিয়ানমার সরকার এই প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা করবে তা অনুমান করা মুশকিল। তাই বাংলাদেশকে ঘরে বাইরে অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য।
২০১৭ হত্যা গুমসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ বছর জাতীয় নির্বাচন হবে। তাই রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ বছর ভোট হবে; শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব না হলে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তথা জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। ফলে ভালো নির্বাচন হওয়ার যে জাতীয় আকাক্সক্ষা তা ভণ্ডুল হয়ে যাবে। ২০১৭ সালে ৯১ জন ব্যক্তি গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন। কারা এদের গুম করল, কোথায় তাদের আটকে রাখা হয়েছে, তারা বেঁচে আছেন কি নাÑ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার হদিস দিতে পারছে না। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, তাদের কেউ কেউ ফিরে আসছেন। কিন্তু তারা এত দিন নিখোঁজ অবস্থায় কোথায় আটক ছিলেন, কিভাবে মুক্ত হলেন, তার কোনো জবাব মিলছে না। ২০১৭ সালে গুমের পাশাপাশি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন অর্ধশতের ওপরে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন আন্তঃদল এবং অন্তর্দলের হাঙ্গামায় বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। বিদায়ী বছরে দেশের কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে অনেক।
পরিসংখ্যানে জানা যায়, সদ্য বিদায়ী বছরে দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জনের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একই সাথে প্রতিদিন গড়ে তিনজনের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত বছর আগস্ট মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সর্বাধিক। সে মাসে ১২৮ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। আর জুলাই মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বেশি। ওই মাসে ৫৪৪ নারী নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হলেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। পরিষদের সূত্র মতে, ২০১৭ সালে পাঁচ হাজার ২৩৫ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর ধর্ষণের মতো বর্বরতার শিকার হয়েছেন এক হাজার ২৫১ জন। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৪৪ জন। সরকার নারীর মর্যাদা সমুন্নত করার ব্যাপারে সোচ্চার হলেন বাস্তব যে চিত্র সমাজে বিরাজ করছে তাতে এসব অপরাধ দমনের পদক্ষেপ কতটা সাফল্য পেয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ না করে পারা যায় না।

বাংলাদেশে সুশাসন ও মানবাধিকারের ঘাটতি ব্যাপক এবং তা দীর্ঘ দিনের। সদ্য বিদায় নেয়া বছরে এসব ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না থাকায় নতুন বছরে তাকে আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া অবশ্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সুশাসনের অভাবজনিত কারণে যেসব খারাপ উপসর্গ সমাজে দেখা দিয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে দুর্নীতি।
আমাদের সমাজে এর বিস্তার এতটা ব্যাপক যে দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সর্বশেষ ‘মানব উন্নয়ন’ সূচকে বাংলাদেশ মাত্র এক ধাপ এগিয়েছে। আর দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১৫তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, এসব সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক।
দেশের প্রায় সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তার এতটা ঘটেছে যে, এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারকে হাত দিতে হয়েছে। আর তা থেকে জানা গেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা অনিয়ম করে ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ছয় লাখ ছয় হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০ বছরে পাচার করা অর্থ দিয়ে অন্তত ২০টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। আমদানি-রফতানির সময়ে পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করে এই অর্থের বড় অংশ পাচার করা হয়েছে। দুর্নীতির সূচকে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া অন্য সব দেশের তুলনায় খারাপ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
দেশে আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি এবং নারী নির্যাতন নিয়ে যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, বস্তুত তা সুশাসনের অভাবেই ঘটছে। এ ছাড়া সমাজে নানা ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিরাজ করছে, তাও আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণে ঘটছে। দেশে আইন বলবৎ করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষে অনিয়ম করা হচ্ছে। অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে তা করা হচ্ছে। আইন নির্মোহভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না বলেই জনগণ মনে করে।
দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। এর মধ্যে চালানো হচ্ছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো স্থায়ী নীতি নেই। এই মন্ত্রণালয়ে যখন কোনো নতুন নেতৃত্ব আসেন, তখন আবার নতুন পথে চলা শুরু হয়। এখানে বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শকে মূল্যায়ন করা হয় না। ২০১৭ সালে শিক্ষার সব পর্যায়ে নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং ফলাফল প্রকাশের আগেই তা ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটা কঠিন কাজ। আর ২০১৮ সালে এই নৈরাজ্যের অবসান ঘটানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে তা যদি দূর করা না যায়, তবে দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। শিক্ষাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করা সঙ্গত নয়। এ ক্ষেত্রে শুধু দেশের প্রয়োজন ও জাতিকে কল্যাণকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হবে। তদুপরি, বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।

বিচার বিভাগের সাথে নির্বাহী বিভাগের টানাপড়েন এবং আইন বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে ২০১৭ সালে। এর মধ্যে, বিচার বিভাগের সাথে নির্বাহী বিভাগের একটি সঙ্কট দূরীভূত হয়েছে। আর সেটা হলো, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধিমালাসংক্রান্ত সরকারি গেজেট সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাধান্য রেখেই অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরি শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মনে করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে এই গেজেট প্রণয়ন নিয়ে সরকারের সাথে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েন চলছিল। এত দিনে এর অবসান হলেও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী, সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিলে সরকারের সাথে সর্বোচ্চ আদালতের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এ অবস্থা বজায় ছিল। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সাথে সরকারের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল, তার একটি কারণ ছিল এই গেজেট প্রণয়ন না করার বিষয়ে। তবে সরকারের সাথে আরো একটি বিষয় নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের মনোমালিন্য রয়েছে। সেটা হলো সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিষয়টি। এই সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায় এবং সেই রায়ের পর্যবেক্ষণের কিছু মন্তব্য নিয়ে সরকার ক্ষুব্ধ। এই রায় রিভিউ করার জন্য সরকার আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছরের এই বিষয়টি চলতি বছরও অব্যাহত রয়েছে। এটা ২০১৮ সালের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ।

সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় আইন বিভাগের গুরুত্ব অনেক। এই বিভাগের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের জন্য আইনের অনুমোদন দেয়া এবং রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেয়া, নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি করা। সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে আইন সভার সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি প্রশ্নবিদ্ধ একটি একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান আইন সভার সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন। সেই থেকে এই প্রহসনের নির্বাচন নিয়ে ঘোরতর আপত্তি ও উত্তেজনা বজায় রয়েছে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে সঙ্কটের কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তার অন্যতম কারণ হচ্ছেÑ আইন বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা। এ বছর আইন বিভাগকে শোধরানো যাবে কি না তাও একটি চ্যালেঞ্জ।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/283115