৭ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ১১:১০

ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৩ লাখ টাকা আদায়

খুলনায় তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নির্যাতন করে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিন লাখের বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ডুমুরিয়া চুকনগর বাজারের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম সরদারের স্ত্রী রুমা খাতুন এ অভিযোগ করেন।

খুলনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ত ম রোকনুজ্জামান, কয়রা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রকাশ চন্দ্র সরকার ও ডুমুরিয়া থানার এসআই লিটন মল্লিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন রুমা।
সংবাদ সম্মেলনে রুমা খাতুন বলেন, রেজাউল করিম সরদার একজন ব্যবসায়ী। চুকনগর বাজারে তাঁর বন্যা এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল আমার স্বামী নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লেবার পেমেন্ট করছিল। তখন ইন্সপেক্টর ত ম রোকনুজ্জামান ফোর্স নিয়ে আমার স্বামীকে নগদ ৪১ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোনসহ ধরে নিয়ে যায়। রূপসা থানাধীন তালপুর, কেসমত খুলনা পুলিশ ফাঁড়িতে তিন দিন আটকে রেখে বেদম নির্যাতন করে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়।’
রুমা অভিযোগ করেন, ‘ওই ইন্সপেক্টর তাঁর মোবাইল ফোন দিয়ে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে আট লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে আমার স্বামীকে ক্রসফায়ারে দেবে বলে ভয় দেখায়। আমি তখন নগদ ১৪ হাজার টাকা নিয়ে ওই ফাঁড়িতে ছুটে যাই। পুরো টাকা না পেয়ে আমার সামনে আমার স্বামীকে লাথি মারে। আমার কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা নিয়ে তিন দিনের মধ্যে আরো চার লাখ টাকা দিতে বলে। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে আমি তার কথায় রাজি হই। এরপর আমার স্বামীকে কয়রা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

রুমা জানান, কয়রা থানার একটি মামলায় তাঁর স্বামীকে ১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার দেখিয়ে কয়রা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই প্রকাশ চন্দ্র তাঁর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য পাননি।
তবে রুমা অভিযোগ করেন, ওই এসআই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁর স্বামীকে কয়রা থানার আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এ মামলায় এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাঁর স্বামীকে কয়রা এলাকার একটি জঙ্গলে নিয়ে হাফপ্যান্ট পরিয়ে এবং মাথায় গামছা পেঁচিয়ে অস্ত্র দিয়ে ছবি তোলে। টাকা না দিলে এই ছবি ইন্টারনেটে দিয়ে অস্ত্র মামলায় জড়ানো এবং ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর ২০ মে কয়রা থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয় তাঁকে।

রুমা অভিযোগ করেন, ‘ইন্সপেক্টর ত ম রোকনুজ্জামানের নির্দেশে এসআই প্রকাশ ওই অবৈধ অস্ত্রটি আমার স্বামীর হাতে ধরিয়ে দেয়। মামলায় বেশ কয়েক মাস জেল খেটে ১০/৮/২০১৫ ইং তারিখে মুক্তি পেয়ে আমার স্বামী পুনরায় ব্যবসা শুরু করেন। এরপর আমার স্বামীর ওপর অত্যাচার, নির্যাতনের কথা আমরা বেশ কিছু লোকজনকে জানাই। ফলে ইন্সপেক্টর ত ম রোকনুজ্জামান আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।’
ব্যবসায়ীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে নির্যাতন ও ক্রসফায়ার থেকে রক্ষা করতে খুলনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইন্সপেক্টর ত ম রোকনুজ্জামান, কয়রা থানার এসআই প্রকাশ চন্দ্র সরকার ও ডুমুরিয়া থানার এসআই লিটন মল্লিককে বিভিন্ন সময়ে তিন লাখ ১৬ হাজার টাকা দিয়েছি। যার অডিও এবং ভিডিও রেকর্ডিং আমাদের কাছে রয়েছে। তার পরও আমার স্বামীকে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা করতে পারিনি। একপর্যায়ে আমি আর কোনো উপায়ান্তর না দেখে এসব ঘটনা উল্লেখ করে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল আদালতে বিচার চেয়ে মামলা করি। মামলায় উল্লিখিত তিন পুলিশ অফিসারকে আসামি করা হয়। আদালত আমার আরজিটি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদক খুলনায় পাঠান।’

রুমা অভিযোগ করেন, ‘সমস্ত ডকুমেন্ট থাকা সত্ত্বেও দুদক ওই তিন আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন। আমি দাখিলকৃত প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে সিনিয়র স্পেশাল জজ ও সিনিয়র জেলা দায়রা জজ আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করি। মিস কেস নং-৩৬৫/১৬। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে পুনঃ তদন্তের জন্য দুদকের খুলনা বিভাগের পরিচালককে দায়িত্ব দেন এবং ২৯/৮/১৭ ইং তারিখে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।’ নির্ধারিত তারিখের পর আরো চার মাস পার হলেও প্রতিবেদন দাখিল হয়নি উল্লেখ করে তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ত ম রোকনুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৫ সালের একটি ডাকাতি মামলায় আমরা ডিবি পুলিশ রেজাউলকে গ্রেপ্তার করে কয়রা থানাকে দেই। ইতিমধ্যে অন্য একটি ডাকাতি মামলায় রেজাউলের ১৭ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়েও গত ১৩ মার্চ দুদক খারিজ করে দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কোনোভাবেই সত্য নয়।’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2018/01/07/586623