৭ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৬

ট্রানজিট কার্গো ও পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ না করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ ড. মসিউরের

বাংলাদেশ-ভারত নৌপরিবহন ও বন্দর ব্যবহারের বাধা দূর করার আহ্বান

ট্রানজিট কার্গো ও পণ্যের ওপর শুল্ক বা কর আরোপ করা যায় না বলেও আবার যুক্তি দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেছেন, গ্যাট ও ডব্লিউটিও (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) নীতি অনুযায়ী ট্রানজিট পণ্য বা কার্গোর ওপর কর বা শুল্ক আরোপ করা যায় না। এখন যদি ট্রানজিট পণ্য বা কার্গোর ওপর কর আরোপের উদ্যোগ নেয়া হয় তবে তা হবে ঘোষিত নীতির পরিপন্থী। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে লেখা একটি ডিও পত্রে তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেন।

শুধু তাই নয়, ড. মসিউর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌপরিবহন ও বন্দর ব্যবহারে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করারও তাগিদ দিয়েছেন। মসিউর রহমান প্রশ্ন করেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং উপকূলীয় নৌপরিবহন বিষয়ে প্রটোকল/চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু স্মারক স্বাক্ষরিত না হওয়ার দরুন আট বছর পরেও এই ঐকমত্য বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে বাধাগুলো দূর করার জন্য দ্রুত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকার জন্য তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে অনুরোধ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।

দীর্ঘ দিন ধরে নিজের পণ্য পরিবহনের জন্য ভারত মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে ‘ডেডিকেটেড স্পেস’ চেয়ে আসছে। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি মাত্র দেশকে এ ধরনের সুবিধা দেয়া সম্ভব নয়। এরই প্রেক্ষাপটে মসিউর রহমান সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বাধা দূর করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করলেন।
সূত্র জানায়, মসিউর রহমান গত ২৮ ডিসেম্বর ২৮ শাজাহান খানের কাছে একটি ডিও (আধা সরকারি) পত্র পাঠান। এতে তিনি উল্লেখ করেন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রটোকল দীর্ঘ দিন হতে চলে আসছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি হয়। আমার জানা মতে, ঔপনিবেশিক শাসনের শেষে এবং উপমহাদেশ বিভক্তির পর তদানীন্তন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে এ সম্পর্কে চুক্তি হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রেড অ্যান্ড ট্রানজিট অ্যাগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড স্বাক্ষরিত হয়। ট্রানজিট ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে গ্যাট/ডব্লিউটিও’র মৌলিক নীতিমালা আছে এবং ওই নীতিমালা অনুসরণ করে নৌরুট ব্যবহারের নিয়মাবলি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

গ্যাট/ডব্লিউটিও’র নীতিমালা উল্লেখ করে ট্রানজিট পণ্যের ওপর শুল্ক বা কর আরোপ করা যায় না উল্লেখ করে মসিউর রহমান লিখেছেন, ‘গ্যাট/ডব্লিউটিও’র কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মূল নীতি রয়েছে। এসব নীতিতে ট্রানজিট পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক ব্যয় হয় তা আদায় করা যায়। ট্রানজিটের জন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করলে যুক্তিসঙ্গত মুনাফাসহ বিনিয়োগ আদায় করা যায়। লঘু অপরাধ বা অনিয়মের জন্য গুরুদণ্ড পরিহার্য। এবং ট্রানজিট কার্গোর ওপর শুল্ক আরোপযোগ্য নয়। ট্রানজিট পণ্যের ওপর ইতঃপূর্বে কখনো শুল্ক-কর আরোপ করা হয়নি। এখন আরোপের উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সহযোগিদা নীতির পরিপন্থী হবে।’
একটি ঘটনা উল্লেখ করে মসিউর রহমান তার ডিও পত্রে আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিবেচনার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৭ সালের ২২-২৩ অক্টোবর কমিশনের সভায় বাংলাদেশে আসেন। ওই সভায় মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারসংক্রান্ত ঐকমত্য স্মারক/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু অপর্যাপ্ত সময় ও খসড়া স্মারক অনুমোদিত না হওয়ার কারণে তা স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় নৌপরিবহন প্রটোকল, উপকূলীয় নৌপরিবহন ও উল্লিখিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে বাধাগুলো দূর করার জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার অনুরোধ করছেন মসিউর রহমান।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নৌ-ট্রানজিট ও প্রটোকলের আওতায় ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরে নিজেদের পণ্য আনানেয়ার জন্য ‘ডেডিকেটেড স্পেস’ চেয়ে আসছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ধরনের কোনো বিশেষ জায়গা ভারতকে দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এরপরও গত অক্টোবরে ও চট্টগ্রাম ও মঙ্গলা সমুদ্রবন্দরে এই ডেডিকেটেড স্পেস বরাদ্দ দেয়ার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের পক্ষ থেকে এটিও বলা হয়েছে, এই দুই সমুদ্রবন্দর দিয়ে কোনো ভারতীয় কনটেইনারকে হঠাৎ করে চেক বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না। এই দুই বন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তাদেরকেও একই ধরনের সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বার বার বলা হয়েছে এককভাবে ভারতকে এ ধরনের সুবিধা দেয়া সম্ভব নয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/282863