রাজধানীতে গতকাল ছিল তীব্র যানজট। ছবিটি গুলিস্তান এলাকার
৭ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৫

রাজধানীতে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তি

মোহাম্মদপুরের রাসেল মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা দেন বেলা ১টার দিকে। সাড়ে তিন ঘণ্টা বসে গাড়িটি আসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। গাড়ি আর সামনে আগাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। মতিঝিল থেকে দুপুরের দিকে মোটরসাইকেলে একজন সেগুনবাগিচা যাচ্ছিলেন। দৈনিক বাংলা পার হয়ে দেড় ঘণ্টা একই স্থানে আটকা। এভাবে গতকাল তীব্র যানজটে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন মানুষ। ছাত্রলীগের র্যালির কারণেই মানুষ এই ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
গতকাল রাজধানীজুড়ে ছিল অসহনীয় যানজট। দিনের শুরুটায় পথচারীরা মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলতে পারলেও দুপুরের আগে শুরু হয় যানজটের তীব্রতা। ওই সময় থেকেই যানজট শুরু হয়। সময় যত বাড়তে থাকে যানজটের তীব্রতাও ততোই বাড়তে থাকে। উত্তরা থেকে মতিঝিলে আসা সাগর নামের এক যাত্রী বলেন, তার আসতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। কাউয়ুম নামের এক যাত্রী বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে সেগুনবাগিচায় আসছিলেন। আসতে তার আড়াই ঘণ্টা লেগেছে।

ছাত্রলীগের র্যালি উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে জড়ো হন। এদের মধ্যে কোনো কোনো এলাকার নেতাকর্মীরা আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় যান। ফলে রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, শাহবাগ, নীলক্ষেত-নিউমার্কেট ও পলাশীসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট স্থবির হয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রধান প্রধান সড়ক দিয়ে র্যালি নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যায়। দুপুরের দিকে মতিঝিল থেকে পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা যানবাহন একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে। একই পরিস্থিতি হয়েছে শাহবাগ থেকে মিরপুর রোড পর্যন্ত এবং শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত। শাহরিয়ার নামের এক পথচারী বলেন, তিনি যানজটের কারণে ফার্মগেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় হাজার হাজার মানুষ হেঁটে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে যান। এতে পথচারীদের চরম ভোগান্তি হয়। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। বেলা ২টার দিকে, পুরানা পল্টন মোড়ে দেখা যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করছে, আর চার দিকের রাস্তা আটকা। হাজার হাজার মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত কাকরাইল মোড় থেকে পুরানা পল্টন পর্যন্ত রাস্তাটি আটকে রাখে ছাত্রলীগ। এ সময় এলাকার অলিগলিতেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। মাসুম নামের এক পথচারী বলেন, এই অবস্থা হবে জানলে রাস্তায় বের হতেন না। আমিনুল নামের এক পথচারী বলেন, তিনি তার গাড়ি রেখে সেগুনবাগিচা থেকে টিকাটুলি হেঁটে গেছেন যানজটের ভয়ে।
এদিকে, ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে যানজট সম্পর্কে জানতে চাইলে সেখান থেকেও বলা হয় র্যালিকে কেন্দ্র করে শাহবাগ, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও আশপাশের রাস্তা বন্ধ থাকায় এই যানজট সৃষ্টি হয়। কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হয়, এমনিতেই যানজট হচ্ছে। আর গতকাল র্যালি থাকায় তা আরো তীব্র হয়েছে।
এদিকে যানজটের কারণে রাজধানীতে গণপরিবহনেরও তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। কিবরিয়া নামের এক গাড়িচালক বলেন, যানজটের কারণে এমনিতেই রাস্তায় গাড়ি কম নেমেছে। যা-ও নেমেছে তা বিভিন্ন পয়েন্টে আটকে পড়ে আছে। গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার পথচারীকে গাড়ির অপেক্ষায় দেখা যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/282844