তীব্র শীতে একটু উষ্ণতা পেতে চা পান। ছবিটি গতকাল রাজধানীর পোস্তগোলা থেকে তোলা
৭ জানুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৩

শীতে কাবু সারা দেশ : রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা

শীতে কাবু সারা দেশ। বিশেষ করে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ঠাণ্ডায় মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরার বিঘœ ঘটছে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না তেমন কেউ। সকালে অফিসগামী চাকরিজীবী ছাড়া অন্যদের রাস্তায় খুব কমই দেখা যাচ্ছে বলে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। রাজশাহী, ঢাকায়ও রাস্তাঘাট একই রকম ফাঁকা। সন্ধ্যা হলেই রিকশা চলাচল অনেকটা সীমিত।

তীব্র শীত মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে নির্ঘুম রাত কাটে গ্রামের দরিদ্র মানুষের। কাঠখড়ের জ্বালানো আগুনের উত্তাপই তাদের ভরসা। অন্যান্য বছর শীতের শুরুতেই কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণের খবর পাওয়া গেলেও এবার এখন পর্যন্ত সে ধরনের তৎপরতা কোনো মহলেই নেই। প্রতি বছর মুষ্টিমেয় দানশীল মানুষের বদান্যতায় দরিদ্র-নিরন্ন মানুষের শীত কিছুটা হলেও আরামে কেটে যায়। অন্তত খোলা আকাশের নিচে বাস করা মানুষগুলো পরিবার নিয়ে উষ্ণতার মধ্যে রাত কাটাতে পারে।
ঢাকার ফুটপাথে রাত কাটানো নারী-পুরুষকে দেখা গেছে সন্ধ্যার পর থেকে গ্যারেজের তেলমাখা কাপড় অথবা রাস্তায় পড়ে থাকা কাঠখড় সংগ্রহ করে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখতে। এদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এরা সারা রাত এভাবেই কাটিয়ে দেয়। দিনে যেখানে মানুষের চলাচল কম সেখানে সুবিধামতো জায়গায় ওরা ঘুমায় বেলা ওঠার পর। এমন একজন কাগজকুড়ানি যুবক মমিন মিয়া জানায়, সে সারা দিন নানা কিছু কুড়ানোর সাথে গ্যারেজ থেকে তেলমাখা কাপড়ও নিয়ে আসে। বন্ধুদের নিয়ে তেলমাখা কাপড় জ্বালিয়ে তার উষ্ণতায় রাত কাটিয়ে দেয়।
সারা দেশেই গতকাল তাপমাত্রা বেশ হ্রাস পায়। এর মধ্যে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ঠাণ্ডা ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা ছিল তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে। এই দুটো শহরে গতকাল সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নেমেছিল ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি বছর দেশের মধ্যে রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গার এই তাপমাত্রাই ছিল সর্বনি¤œ।
২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ছিল চার দশকের মধ্যে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬৮ সালের পর থেকে দিনাজপুরের ওই তাপমাত্রাই ছিল দেশের সবচেয়ে কম। তবে ১৯৬৪ সালের জানুয়ারিতে শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা নেমেছিল ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

শুষ্ক আবহাওয়া, বাতাসের মধ্যে আর্দ্রতা কমে যাওয়া, জেট বায়ু ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসার কারণে তাপমাত্রা এত বেশি নিচে নেমেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জেট বায়ু খুবই ঠাণ্ডা থাকে। এটা অন্যান্য সময় ৪০ থেকে ৫০ ফুটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে ঠাণ্ডা এ বায়ুর শীতলতা বাংলাদেশকে ছুঁতে পারে না। এ বছর জানুয়ারি শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করে। গত ৩ জানুয়ারির বিকেল থেকেই দেশের অর্ধেক অঞ্চল মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আওতায় চলে আসে। গত ৪ জানয়ারি চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা নামে সাড়ে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
গতকাল সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী বিভাগের সর্বত্র। ঈশ^রদীতে ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বদলগাছিতে ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বগুড়ায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তাড়াশে ছিল ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রাজধানী ঢাকায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ রাজশাহী, খুলনা, রংপুর এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। আজ দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সকালের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকবে।
রংপুর অফিস জানায়, পৌষের তৃতীয় সপ্তাহেই বাতাসের আর্দ্রতা সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কাছাকাছি আসায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। গত ছয় দিন এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ থেকে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। ফলে রোদের নাগাল পাচ্ছেন না এই অঞ্চলের মানুষ। এতে জনজীবনের পাশাপাশি গৃহপালিত জীবজন্তুরও বেহাল দশা সর্দি জ্বরসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সর্বত্র। বিপরীতে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র জুটছে না শীতার্তদের। গরম কাপড়ের জন্য চলছে হাহাকার। দিশেহারা ছিন্নমূল মানুষ কাজকর্ম বাদ দিয়ে বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
রংপুর আবহওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক (সহকারী ইলেকট্র্রনিকস প্রকৌশলী) মোহাম্মদ আলী নয়া দিগন্তকে জানান, ১ জানুয়ারি থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা সর্বনিম্ন ৭৮ এবং সর্বোচ্চ ১০০ ভাগের মধ্যে ওঠানামা করেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী এই অঞ্চলের রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, জেলা ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রেজিস্টার ডা: কামরুজ্জামান জানান, প্রতিদিনই সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, বাতজ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। গুরুতর অসুস্থদের ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মওদুদ আহমেদ জানান, শীতজনিত রোগীর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি।
অন্য দিকে উত্তরাঞ্চলের জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া সূত্রে প্রকাশ, শীতের শুরুতে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে সরকারিভাবে এই অঞ্চলের প্রতিটি জেলায় ছয় হাজার ৭০০ পিস করে কম্বলের বরাদ্দ দেয় সরকার। জানুয়ারি মাসে তীব্রতা বাড়ায় প্রতি জেলা থেকে এক লাখ করে শীতের কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ কম্বল বরাদ্দ এসেছে। বরাদ্দ পাওয়া কম্বলগুলো উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভাগ করে দিয়ে বিতরণ করা হয়েছে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষ। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও কর্মজীবী মানুষেরা বেকায়দায় পড়েছেন সর্বাধিক। গতকাল সকাল ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গাতেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। চলতি মওসুমে এটিই এখন পর্যন্ত দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর ৮ ডিগ্রির নিচে নামলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সে অনুযায়ী রাজশাহীতে এখন বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়া অফিস আরো জানায়, সপ্তাহজুড়েই রাজশাহীতে তাপমাত্রা কমছে। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ দিকে সকাল হলেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে গোটা রাজশাহী। গতকাল শনিবার সূর্যের দেখা মেলে সকাল ১০টার পর।
অন্য দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, টানা ৪ দিনের শৈত্যপ্রবাহে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা। গরম কাপড়ের অভাবে বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ।
এ দিকে শিশু ও বৃদ্ধারা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ৩৫টি শিশু, ডায়েরিয়ায় ২০টি অন্যান্য রোগে ৪৩ জন ভর্তি হয়েছেন।

সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: জাহাঙ্গীর আলম জানান, সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ জন ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৫৭ হাজার কম্বলের মধ্যে ৫০ হাজার ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে জেলার অভাবী, দুস্থদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) সংবাদাতা জানান, তীব্র শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে দামুড়হুদা উপজেলায় অসহনীয় শীত অনুভূত হচ্ছে। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিদিন তাপমাত্রা কমছে। তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ শীতের কাঁপুনি থেকে রক্ষা পেতে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেয়ার চেষ্টা করছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ঘণ্টায় প্রায় ১২ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বইছে। অল্প সময়ের জন্য। চুয়াডাঙ্গায় শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, গতকাল মওসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চার দিন ধরে হাড়কাঁপানো তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বুধবার বিকেল থেকে পারদের তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে সাত হাজার কম্বল।

পাটগ্রাম সংবাদদাতা জানান, লালমনিরহাটের পাটগ্রামে শীত জেঁকে বসেছে। রংপুর আবহাওয়া অফিস গতকাল শনিবার বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে রংপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১০.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দুপুরে এই রিপোর্ট লেখার সময় সূর্য্যরে দেখা মেলেনি। আকাশে মেঘের চাদরে ঢাকা পড়েছে গোটা এলাকা।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী আব্দুর সবুর এটাকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বলে উল্লেখ করে জানান, এই অবস্থা আরো কয়েক দিন থাকতে পারে। পাটগ্রাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উত্তম কুমার নন্দী জানান, এই পর্যন্ত উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৫০টি শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা জানান, তেঁতুলিয়ায় লাগাতার শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায় গতকাল বিকেলে তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়ার আকাশে দিনে কোথাও সূর্য্যরে মুখ দেখা যায়নি। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে স্কুলগুলোতে দুপুর গড়ার সাথে সাথে ছুটি দেয়া হয়। এ দিকে তীব্র শীতে মহানন্দার বরফ শীতল পানিতে পাথর শ্রমিকেরা নুড়িপাথর সংগ্রহে নামতে পারেননি।

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিন শৈতপ্রবাহ বেড়েই চলছে। হাওরাঞ্চলে ঠাণ্ডার কারণে বোরো জমিতে চারা রোপণ ও অন্যান্য কাজে দিনমজুর হতদরিদ্ররা নিজ নিজ কাজে যেতে পারছে না। ফলে হাওরাঞ্চলের কর্মজীবী খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারপাশ। শৈতপ্রবাহের কারণে জেলা সদর হাসপাতাল ও জেলার ১১টি উপজেলা হাসপাতাল ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়াসহ সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। বৃদ্ধরাও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। জেলার হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, অব্যাহত কনকনে শীতে শিবালয়সহ পার্শ¦বর্তী এলাকার জনজীবন যেন স্থবির হয়ে পড়েছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শিবালয় উপজেলার মেহেদীপুর গ্রামের কৃষক নবু শেখ, জাফরগঞ্জ হাইস্কুলের সাবেক শিক্ষক মাওলানা মানসুরুল রহমান ও আরিচাঘাটের ব্যবসায়ী তপন সাহা মারা যান। জানা গেছে, হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীত ও ঘন কুয়াশায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। শিবালয় ইউএনও কামাল মোহাম্মদ রাশেদ সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২৫ জন দুস্থ ব্যক্তির নামের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা সম্পূর্ণ হলেই শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
মান্দা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর মান্দায় হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা শীতে অত্যধিক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে নীলফামারীতে। হিমেল বাতাস আর কনকনে শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এখানকার লোকজন। কনকনে শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতের কারণে খেটে খাওয়া মানুষজন কাজে যেতে না পেরে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল সারা দিনে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনের বেলাতেও কুয়াশার কারণে ভারী যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। গ্রামে ও হাটবাজারগুলোয় লোকজন খড়কুটে জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান ও ট্রেন চলাচলের সিডিউলের বিপর্যয় ঘটছে।

সৈয়দপুর সংবাদদাতা জানান, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে হিমেল বাতাসে নীলফামারীর সৈয়দপুরে শীত জেঁকে বসেছে। এর প্রভাবে বিমান, ট্রেন ও বাস চলাচলে বিঘœ ঘটেছে। গোটা উপজেলায় দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগবালাই। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকছে গোটা জনপদ। গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কষ্ট ভোগ করছে দুস্থ ও অভাবী কর্মজীবী মানুষ। শীতের কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে।
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, শীতে কাঁপছে চিরিরবন্দর উপজেলার মানুষ। গত ক’দিন ধরে এই অঞ্চলে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র শীতে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও নি¤œ আয়ের মানুষ। হাটবাজারেও লোকজনের উপস্থিতি কম লক্ষ করা যাচ্ছে।

দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) থেকে সংবাদদাতা জানান, কনকনে বাতাস ও তীব্র ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে এ উপজেলার মানুষ। তীব্র ঠাণ্ডার কারণে নি¤œ আয়ের লোকজন পড়েছে চরম দুর্ভোগে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকজন প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা।
গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহ উপজেলার বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষ পড়েছে চরম বেকায়দায়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। দুস্থরা গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। দুপুরের আগে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন থেকে যেসব কম্বল বিতরণ করা হয়েছে তা প্রকৃত শীতার্তরা পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/282846