৬ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৮:১০

তীব্র শীতে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ

ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র শীতে একটু উষ্ণতার জন্য আগুন পোহাচ্ছেন নারী-শিশু : নয়া দিগন্ত
দেশের বিভিন্ন স্থান হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ শিশু, বৃদ্ধ ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গার কয়েক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা অর্ধেকে নেমে এসেছে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার এ মওসুমে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা ছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে সাত হাজার কম্বল, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলে মত স্থানীয়দের।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সামাদুল হক জানান, হঠাৎ করে তীব্র থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আজ শুক্রবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। উত্তরের হিমেল হাওয়ার সাথে ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নীলফামারীর জনজীবন। আবহাওয়া অফিস সূত্র মতে, গতকাল সকাল ১০টায় নীলফামারী জেলার মধ্যে সর্বনি¤œ সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত কনকনে ঠাণ্ডা বিরাজ করছে এ জনপদে। বিঘœ ঘটেছে বিমান, ট্রেন ও বাস চলাচলে। ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুরে বিমান চালকদের নির্দিষ্ট দৃষ্টিসীমা দুই হাজার মিটারের মধ্যে না থাকায় ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে বিমান চলাচলে প্রায়ই বিঘœ ঘটছে। রাতের বেলায় চলাচলকারী ট্রেনগুলো কুয়াশার কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে ২ থেকে ৬ ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। গত দুই দিনে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন সীমান্ত এক্সপ্রেস নীলফামারী স্টেশনে ৬ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছে।
শীতের তীব্রতায় বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। গত চার দিনে নীলফামারীর ছয়টি উপজেলা হাসপাতালে দুই শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি।
লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, পৌষের শেষের দিকে শীত জেঁকে বসেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শীতের দাপট বেড়েছে। সকাল থেকে বইছে উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাস। বিভিন্ন স্থানে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ।
এদিকে, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেড়েছে। আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ৩১ ডিসেম্বর ও এরপর রাজশাহীসহ দেশের দুই-একটি এলাকায় বৃষ্টি হয়। তখন আকাশে মেঘ ছিল। সেই মেঘ চলে গেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার এটাই অন্যতম কারণ।

আগৈলঝাড়া সংবাদদাতা জানান, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দুই ধরে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অধিক শীত ও কুয়াশার কারণে লোকজন পড়েছে মহাবিপাকে। তারা কোনো কাজের জন্য ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। সকাল থেকে সারা দিন সূর্যের আলোর মুখ দেখা যায়নি। কয়েকদিন ধরে শীতের কারণে হতদরিদ্র মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুরনো কাপড়ের দোকানে ভিড় বাড়ছে। দুই দিন ধরে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কুয়াশার কারণে দিনের অর্ধেক সময় পার হলেও সূর্যের দেখা মিলছে না।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, উত্তর জনপদের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে প্রচণ্ড শীতে পঞ্চগড়ে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনের বেলা রোদের দেখা মিললেও উত্তরের হিমালয় থেকে আসা কনকনে শীতল বাতাসের কারণে তা গায়ে লাগছে না। বৃহস্পতিবার মধ্য রাত পর্যন্ত জেলায় কুয়াশার দেখা না মিললেও ভোর থেকে ভারী কুয়াশায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। তেঁতুলিয়া উপজেলার সমতল ও নদী থেকে পাথর তোলা শ্রমিকেরা কাজে যেতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শীতবস্ত্রের অভাবে অনেককেই বাড়িতে খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, কয়েক দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় মির্জাগঞ্জের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। এ কারণে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে গেছে। ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিতে পারছে না সূর্য। অনেক সময় ১০টার পরে সূর্য দেখা গেলেও কুয়াশা যেন কাটছে না। হাড় কাঁপানো শীতের দাপটে কাহিল হয়ে পড়ছে বৃদ্ধ, নর-নারী ও শিশু-কিশোরা। শীতের তীব্রতার সাথে চার দিকে শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়া, সার্দি, কাশি, জ্বর, আমাশয়সহ নানা জটিল রোগ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার সুবিদখালী বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে শীত কাপড়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ দিকে মির্জাগঞ্জের দুই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। কিন্তু কম্বল বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৪২০টি।
বগুড়া অফিস জানায়, মাঘের শীত আসতে বেশ কিছু দিন বাকি থাকলেও বগুড়ায় পৌষের শেষে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। এবার শীতের শুরুতে তেমন শীত অনুভূত না হলেও গত কয়েক দিন ধরে শীত বাড়ছেই। বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানায়, জেলার ওপর দিয়ে বুধবার থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এ দিকে সরকারের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা অপর্যাপ্ত। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/282586