৫ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৪

দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আত্মাহুতির ঘোষণা

রেদড় যুগ ধরে শিক্ষকতা করলেও সরকারি বেতন পাচ্ছি না। বেতন- ভাতা আর চাকরি করতে পারছি না। সমাজে সম্মান নিয়ে বেচে থাকতে না পারলেও মরে যাওয়াই ভালো। পাঁচ দিনের টানা অনশনে এ পর্যন্ত অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন ১০১ জন শিক্ষক। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আত্মাহুতি দিবো। এমপিওভুক্তির দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো রাজধানীর রেপ্রসক্লাবের সামনে শিক্ষক- কর্মচারীদের আমরণ অনশন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন শিক্ষকরা।

গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। এতেও দাবি আদায় না হওয়াতে ৩১ ডিসেম্বর রেথকে টানা এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তবে এখন পর্যন্ত সরকার পক্ষ রেথকে সুনির্দিষ্ট রেকানো ফল পাননি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এরই অনশন কর্মসূচি পালন করতে এসে এ পর্যন্ত ১০১ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা রেদয়া হচ্ছে বলে জানা রেগছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার অনশনস্থলে শিক্ষামন্ত্রীর নুরুল ইসলাম নাহিদ গিয়ে তাদের অনশন ভাঙাতে চাইলেও তার রেদয়া আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষকরা।

অনশনরত শিক্ষকরা জানান, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আমাদের বিশ্বাস রেনই। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের আমরণ অনশন চলবে।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী রেফডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, শিক্ষামন্ত্রী এর আগেও এ ধরনের এমন অনেক আশ্বাস দিয়েছেন। আশ্বাসে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তাই আমরা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রায় রেদড় যুগ ধরে শিক্ষকতা করছি। শিক্ষকতার শুরু রেথকে এ পর্যন্ত বহু বার আশ্বাস রেপয়েছি রেয, আমার চাকরি একসময় সরকারি হবে। দেখতে দেখতে জীবনের মূল্যবান সব সময় পার হয়ে গেছে। আশ্বাস আশ্বাসের জায়গাতেই আছে। শুধু আমার চাকরি সরকারি হয়নি।

যশোরের তাসলিম উদ্দীন দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে শিক্ষকতা পেশা রয়েছেন। বহু কষ্ট করে সংসাদ চালাচ্ছেন তাসলিম। বাধ্য হয়ে তিনি রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন,সমাজে আমাদের কোন অবস্থান নেই। নেই কোন মান ইজ্জাত। পরিবারেও আমাদের কোন দাম নেই। সংসারের ছেলে মেয়েরা আমাদের কোন মূল্যায়ন করে না। তাহলে আমাদের বেচে থেকে কি লাভ। আমরা আর এভাবে বেচে থাকতে চাই না।
শিক্ষকদের ভাষ্য, তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা থাকলেও শিক্ষার্থীদের মানুষ করার যে দায়িত্ব নিয়েছেন তা তারা পালন করছেন। এখন তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাই রাজপথে আন্দোলনে নেমেছেন।
তাসলিম উদ্দীন বলেন, সেই চাকরি জীবনের শুরু থেকে শুধু আশ্বাস পেয়েই গেলাম। কিছুরই বাস্তবায়ন হলো না। সরকার রেতা কত বার বলল, আমাদের এমপিওভুক্ত করবে। কিন্তু কিছুই করেনি।
শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি থেকে সরবেন না। সব প্রতিকূলতা তারা অতিক্রম করতে প্রস্তুত। তারা বলছেন আমাদের এই দেড় যুগে অনেক আশ^াস পেয়েছি। আমরা আর কারো আশ^াস শুনতে চাই না। আমরা শুধু প্রধান মন্ত্রীর আশ^াস পেলে ই অনশন ভাঙ্গবো।
এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়ে বগুড়া থেকে আসা শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে ৭ হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী আছে। বছরের অন্য কোনো সময় আমরা আন্দোলনে যাই না। কারণ, এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। তাই ২০১৭ সালের শেষের দিকে থেকে আন্দোলন শুরু করি আমরা। এখন নতুন বছরের শুরু। আন্দোলন চলছে। এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের ক্লাস শুরু হতে বিলম্ব হবে। তাই সরকারের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত।
শিক্ষক মুজাহিদুর রহমান বলেন, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লক্ষাধিক শিক্ষক আছেন। তারা সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরিবারে তাদের কোনো মূল্য নাই। সন্তানদের ঠিকমতো লালন-পালন করা যায় না। শিক্ষক হয়ে এত অবহেলা নিয়ে কীভাবে থাকব? বাধ্য হয়েই মাঠে নেমেছি। দাবি আদায় না করে বাড়ি ফিরব না।

http://www.dailysangram.com/post/313983