৫ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩১

আস্থার সম্পর্ক ছাড়া গণতন্ত্র বিকশিত হয় না

বছরের শুরুতেই রাজনীতির মাঠ জমজমাট। আকার-ইঙ্গিতে সরকারের মন্ত্রীরা জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য অনেক আগে থেকেই নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করে দিয়েছেন। যশোরের জনসভায় তিনি আবারও নৌকার পক্ষে ভোট চাইলেন ৩১ ডিসেম্বর। সক্রিয় হয়েছেন খালেদা জিয়াও। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে ২ জানুয়ারি তিনি বলেছেন, সরকার চাইলেও নির্বাচনের বাইরে রাখতে পারবে না বিএনপিকে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য সাজা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যখন নানা হিসাব-নিকাশ চলছে, ঠিক তখনই খালেদা জিয়ার এ মন্তব্য বিএনপির নেতাকর্মীদের আশাবাদী করবে নিঃসন্দেহে।

চলতি বছর নির্বাচনী বছর। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনসহ রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে চলতি বছরটি থাকবে নির্বাচনী আমেজে ভরা। রাজনীতি আবর্তিত হবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। তাই ইতিমধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন, অনেকগুলো সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে। কেমন হবে এ নির্বাচন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে কিনা, জাতীয় পার্টির ভূমিকাই বা কী হবে- এসব বিষয় নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই।

জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে তৃতীয় শক্তি। সর্বশেষ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল বিজয় জাতীয় পার্টিকে আবারও আলোচনার পাদপ্রদীপে নিয়ে এসেছে। জাতীয় পার্টি আগামীতে সরকারে থাকবে, নাকি বিরোধী দলে থাকবে- এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। জাতীয় পার্টি প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, অতীতে কোনো সরকারই জাতীয় পার্টির প্রতি সদয় আচরণ করেনি। জাতীয় পার্টি সরকারে থাকলেও তিনি সরকারের অনেক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেননি। সুতরাং একটা প্রশ্ন উঠবেই- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কিংবা পরে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে? জাতীয় পার্টি কি সরকারে থাকবে? নাকি বিরোধী দলে থাকবে? জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, সেটাও দেখার বিষয়। সরকারে যোগ দিলেও জাতীয় পার্টি ১৪ দলীয় জোটে নেই। সঙ্গত কারণেই তাই প্রশ্ন উঠবে- জাতীয় পার্টি-আওয়ামী লীগের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তি কী হবে?
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, রসিক নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় পার্টির নেতা ও কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। ইসির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য এটা একটি প্লাস পয়েন্ট। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এর মধ্যে কি বড় কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়েছে? এর জবাব সম্ভবত না-বাচক। অর্থাৎ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আদৌ কোনো পরিবর্তন আসেনি। রসিক নির্বাচনের পর ৫৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেসব নির্বাচন ভালো হয়নি। রাতে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপারে সিল মারা, ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়া- এই যে সংস্কৃতি, এ সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারছি না। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটা হবে মূল সমস্যা।

এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি ন্যূনতম ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সফলতা আসবে না। প্রসঙ্গক্রমে রসিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই নির্বাচনটি ভালো হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই এটাকে ভালো বলা যায়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বিজয়ী হয়েছেন। হেরে গেছেন সদ্য বিদায়ী মেয়র সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু, যিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন এবং প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে তার অবস্থান তৃতীয়।

এই নির্বাচনে ব্যক্তি মোস্তাফিজার রহমান বিজয়ী হয়েছেন বটে, তবে ‘বিজয়ী’ হয়েছে নির্বাচন কমিশনও। তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারল। নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে গুজব, শঙ্কা ছিল- রংপুরে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করে তারা তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। তাদের ওপর মানুষের আস্থা এখন আরও বাড়বে। তবে তাদের যেতে হবে অনেক দূর। নির্বাচন কমিশন যদি রসিক নির্বাচন নিয়ে অতিরিক্ত আস্থাশীল হয়ে ওঠে, তাহলে তারা ভুল করবে। তাদের কাজ এখনও অনেক বাকি। জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন আয়োজনের ‘কঠিন’ কাজটি তাদের সম্পন্ন করতে হবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর এখন রসিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হল। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন একটি ধন্যবাদ পেতেই পারে। এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হল- এই নির্বাচন কি কোনো বার্তা দিয়ে গেল? রসিক নির্বাচন স্থানীয় সরকারের একটি নির্বাচন। সাধারণত স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যা, প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ নির্বাচনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। অতীতে অন্তত দুটি নির্বাচনে- নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ তাদের বিজয়ী হতে সাহায্য করেছিল। অর্থাৎ একজন ভালো, সৎ এবং গণমানুষের সঙ্গে যার সম্পর্ক রয়েছে- এমন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে তিনি নির্বাচনে ভালো করেন এবং বিজয়ী হন। আইভি ও সাক্কু এর বড় প্রমাণ। এখন একই কাতারে যোগ দিলেন মোস্তফা। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি একটি মেসেজ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা এ মেসেজটি ধারণ করতে পারেন।
মূলকথা হচ্ছে, আমরা একটি ভালো জাতীয় নির্বাচন চাই। আর ভালো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সব দলের অংশগ্রহণ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য খুব ভালো খবর নয়। সরকারের জন্যও এটি কোনো ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আরও একটি কথা। সিলমারা কিংবা ভোট কেন্দ্র দখলের যে সংস্কৃতি আমরা বারবার প্রত্যক্ষ করে আসছি কিংবা বিরোধী দলের প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার যে ‘রাজনীতি’ আমরা দেখেছি, এই প্রবণতা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায়।

এ ক্ষেত্রে ইসির করণীয় আছে। ইসি এ ক্ষেত্রে বেশ কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। যেমন, স্থানীয়ভাবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে ইসি একটি ‘পর্যবেক্ষক টিম’ গঠন করতে পারে, যাদের কাজ হবে নির্বাচন কেন্দ্রগুলো মনিটর করা এবং সরাসরি কেন্দ্রে রিপোর্ট করা। মিডিয়ার মাধ্যমে যেখান থেকেই জাল ভোট, কেন্দ্র দখলের খবর আসবে- সেখানে ওই কেন্দ্র নয়, বরং পুরো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা। মনোনয়নপত্র একই সঙ্গে স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ে গ্রহণ করা। এতে করে প্রার্থীর পক্ষে একাধিক জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার খবর এলে ওই এলাকার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নির্বাচনী কেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। সংসদ নির্বাচনে ভোট গণনায় যদি প্রার্থীরা সমানসংখ্যক ভোট পান, তাহলে লটারির পরিবর্তে সেখানে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোনো প্রার্থী যদি ৫০ ভাগের নিচে ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা যাবে না। সেখানেও পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

পৃথিবীর অনেক দেশে এ ধরনের নিয়ম আছে। সংসদ সদস্যের যোগ্যতার প্রশ্নে ন্যূনতম যোগ্যতা ‘যুগোপযোগী’ হওয়া উচিত। দেশে উচ্চশিক্ষার হার বেড়েছে। যারা দেশের জন্য আইন প্রণয়ন করবেন, তারা যদি ‘শিক্ষিত’ না হন- তাহলে সঠিক ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করবেন কীভাবে? এতে করে সংসদ সদস্যরা বেশি মাত্রায় আমলানির্ভর হয়ে আছেন। আমলারা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটাবেন। বর্তমান আইনে সুবিধাবাদী ও ধান্দাবাজ ঊর্ধ্বতন আমলা, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা অবসরের তিন বছর পর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। এটা একটি দুর্বল আইন। এটা পরিবর্তন করে ন্যূনতম ৫ বছর করা প্রয়োজন। অর্থাৎ একজন আমলা ৫৯ বছর বয়সে অবসরে যাবেন এবং ৬৫ বছর বয়সে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে শর্ত থাকবে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থাৎ ওই সংসদীয় এলাকায় দল তাকে মনোনয়ন দেবে। এটা না হলে দেখা যাবে, সুযোগসন্ধানী আমলারা সচিবালয়ে থাকাকালীন মন্ত্রণালয়ের প্রভাব খাটিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। এতে পরোক্ষভাবে সরকারকে ব্যবহার করা হবে। পাঁচ বছরের একটি গ্যাপ থাকলে এ কাজটি তিনি করতে পারবেন না।

এখন সময় এসেছে নির্বাচন কমিশনের এটা প্রমাণ করার যে, তারা সত্যি সত্যিই ‘স্বাধীন’। বেশ ক’জন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, একাধিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক বলার চেষ্টা করছেন, নির্বাচন কমিশনকে সত্যিকার অর্থেই তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে হবে। না হলে যে ‘বির্তক’ নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার যাত্রা শুরু করেছিল, সেই ‘বিতর্ক’ আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। আমাদের সংবিধানের ১১৮(৪) ধারায়ও স্পষ্ট করে বলা আছে- ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে স্বাধীন’ এবং সংবিধানের ১২৬-এ বলা আছে- ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’

এটাই হচ্ছে আসল কথা। নির্বাচনের তিন মাস আগে সব প্রশাসন চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। অর্থাৎ ডিসি, এসপি, ওসিরা থাকেন নির্বাচন কমিশনের আওতায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তা কী বলে? জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা থাকেন জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন নয়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে, আর জেলা প্রশাসকরা ‘নিয়ন্ত্রিত’ হন মন্ত্রণালয় থেকে। এ পরিস্থিতিতে প্রায় ক্ষেত্রেই সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
আমরা চাই, জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক। বিএনপিসহ প্রতিটি নিবন্ধিত দল আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে- এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তাই সঙ্গত কারণেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়-দায়িত্ব অনেক বেশি। ৫ জানুয়ারির (২০১৪) মতো পরিস্থিতির যাতে সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারে বর্তমান সিইসিকে পালন করতে হবে একটি বড় দায়িত্ব। সেই ‘দায়িত্ব’ সিইসি কীভাবে পালন করেন, আমরা তা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। তবে একটা বিষয়ে বোধহয় আমাদের সবার ঐকমত্যে উপনীত হওয়া প্রয়োজন, আর তা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার। সরকারের বহু মন্ত্রী বারবার বলছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখেই নির্বাচন হবে। অর্থাৎ নির্বাচনের তিন মাস আগে যে সরকার থাকবে, তার নেতৃত্ব দেবেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান সরকারপ্রধান থাকলে সেই সরকার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিএনপি সেই প্রশ্নই তুলেছে।

এটা ঠিক, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপিকে তথাকথিত নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিএনপি ওই সরকারে যোগ দেয়নি। কিন্তু ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কি বিএনপিকে সেরকম একটি মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে? সেটা কীভাবে সম্ভব? ২০১৪ সালে বিএনপি সংসদে ছিল। কিন্তু এখন তো তারা সংসদে নেই। তাহলে মন্ত্রিসভায় বিএনপি অন্তর্ভুক্ত হবে কীভাবে? বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিএনপি একটি ফ্যাক্টর। বিএনপিকে মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে। বিএনপি বড় দল। জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে এ দলটির প্রতি। বিগত নির্বাচনগুলোর দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখব, ৩২ থেকে ৩৬ ভাগ জনগণের সমর্থন রয়েছে দলটির প্রতি। সুতরাং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দলটিকে নিয়ে আসতে হবে। এতে করে একদিকে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়বে, তেমনি ক্ষমতাসীন দলও উপকৃত হবে। গণতন্ত্রের জন্য দুটি বড় দলের মাঝে (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) ‘অস্থার সম্পর্ক’ থাকা দরকার। তা না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে না।
চলতি বছরটি শুরু হল অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। পাশাপাশি মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে নতুন বছর যাত্রা শুরু করল, যদিও এতে চমক নেই তেমন একটা। বিতর্কিত মন্ত্রীরা সবাই রয়ে গেছেন। ধারণা করছি, বর্তমান মন্ত্রিসভা নিয়েই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে যাবেন। এ ক্ষেত্রে নবনিযুক্ত মন্ত্রীরা তাদের ‘যোগ্যতা’ দেখানোর সুযোগ পাবেন কম। যেহেতু চলতি বছরই ‘নির্বাচনী বছর’, তাই আমরা আশা করব ন্যূনতম ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা ‘ঐক্য’ প্রতিষ্ঠিত হবে, রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলবে না; নেতারা পরস্পর আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকবেন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবেন। নতুন বছরে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
ডা. তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tsrahman09@gmail.com

https://www.jugantor.com/todays-paper/sub-editorial/3164