৫ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৯:১৮

গ্যাস সঙ্কটে নগরবাসী : ভোগান্তির সীমা নেই

মাহমুদুল হক আনসারী

গ্যাসের চুলার দাম বাড়ল। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হলো। এক বছরে কয়েক দফা বৃদ্ধি করা হলো গ্যাসের মূল্য। ভোক্তাদের প্রয়োজনে গ্যাস দরকার। এখন আর লাকড়ির চুলা ব্যবহার হয় না, শহরে গ্যাস দিয়ে চুলা জ্বলে। রান্নার কাজ গ্যাসের চুলার মাধ্যমে করা হয়। মূল্য বৃদ্ধি হলেও জনগণের গ্যাসচালিত চুলা ব্যবহার ছাড়া কোনো উপায় নেই। নগরীতে ৬০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে। হাজার হাজার বাসাবাড়ি। শ্রমজীবী ও কর্মজীবী নারী-পুরুষ গ্যাস ব্যবহার করে তাদের রান্নার কাজ করে থাকে। লাখ লাখ শ্রমজীবী নারী-পুরুষ সকাল-বিকেল কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে তাদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে চরমভাবে ভোগান্তিতে পড়ছে। এসব নারী-পুরুষ নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ হওয়াতে হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার গ্রহণ করাও অনেকের সামর্থ্যে কুলায় না। নিয়মিতভাবে কয়েক মাস ধরে গ্যাস লাইনে গ্যাসের যাওয়া-আসাতে চরমভাবে অসহায় হয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষ ও পরিবার। গ্যাস কোম্পানি ও বাসাবাড়ির মালিক ঠিকই ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে বিল নিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের রোজগারে জীবন যাপস করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

গ্যাস সঙ্কটের সমস্যা ও সমাধানের উদ্দেশ্যে অনেক লেখালেখি হলেও সংশ্লিষ্ট মহলে সঠিক সমাধানের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের সময়মতো আহার ও টিফিন দিতে পারছে না অভিভাবকেরা। আহার, আপ্যায়ন ও টিফিন তৈরিতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এসব পরিবার। মিল-কারখানা ঠিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না। উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধভাবে কোনো এলাকায় গ্যাস লাইন স্থাপন করার সংবাদ ও লাইন বিচ্ছিন্ন করার সংবাদও পাওয়া যায়। তাহলে গ্যাস সঙ্কটের মূলে কি দুর্নীতি, না অন্য কিছু। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জনগণের আবেদন আর নিবেদন ছাড়া কী করার আছে, সেটিও মাথায় আসছে না। জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটানো রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। নগরবাসী তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়, তার সমাধান রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলকেই খুঁজতে হবে। জনগণ না খেয়ে বাঁচতে পারবে না। তাদের পেটে অন্নের ব্যবস্থা করতে হবে। বাসাবাড়ি-বিল্ডিংয়ে লাকড়ির চুলা ব্যবহারের কোনো সুযোগ আধুনিক সমাজে নেই। পেটের জ্বালায় যদিও তা করতে হয় তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিতে হবে, কত দিন লাগতে পারে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান করতে। কর্তৃপক্ষ এভাবে মাসের পর মাস, দিনকে দিন চুপচাপ বসে থাকবে; অথচ লাখ লাখ মানুষ এ সঙ্কটে ভোগান্তিতে থাকবে; সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। ঠিক কী কারণে গ্যাস সঙ্কট, তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবশ্যই জানাতে হবে। জানার ও সঠিক তথ্য পাওয়ার আধিকার জনগণ রাখে। জনগণ নির্দিষ্ট সময়ে বিল পরিশোধ করবে। বিল পরিশোধ না করলে লাইন কেটে দেয়া হয়। অথচ গ্যাস পাবে না, সেটি তো মেনে নেয়া যায় না। জনগণের মৌলিক খাদ্যের অধিকার রক্ষায় অবশ্যই এ সঙ্কটের সমাধান দ্রুততর সময়ে করতে হবে। গ্যাসের অপচয় ও অবৈধ লাইন বন্ধ করতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মবহির্ভূত লাইন কেটে দিতে হবে। নতুন নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। নগর ও শিল্পোন্নয়নের কারণে চাহিদা বৃদ্ধি স্বাভাবিক, কিন্তু এ কারণে যারা পুরনো লাইন ব্যবহার করছে তাদের ক্ষতি হবে কেন? লাইন সংস্কার ও গ্যাসের ওঠানামা থাকলে অবশ্যই তা সংস্কার করতে হবে। নিয়মিতভাবে এ সঙ্কট কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতাদের বলবÑ চট্টগ্রাম নগরীর গ্যাস সঙ্কটে এগিয়ে আসুন। দেশের অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের অধিকার অগ্রগণ্য হওয়া চাই। এখান থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে অন্য অঞ্চলের লাইন চলবে তথা চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী তার ন্যায্য অধিকার পাবে না, সেটি কেউ মেনে নেবে না। চট্টগ্রামের রাজস্ব আয়ের বেশির ভাগ সারা দেশে ভাগ হচ্ছে। চট্টগ্রাম সচল তো পুরো দেশ সচল। চট্টগ্রামকে পিছিয়ে রেখে জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব নয়। চট্টগ্রামের সঠিক চাহিদা মেটাতে রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন। জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক কোনো প্রতিবন্ধকতা জনগণের কাম্য নয়। দেশের সঠিক উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ যাবতীয় সমস্যার সমাধানে যেন কোনো গড়িমসি না হয়, জনগণর সেটি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি রাখে। জনভোগান্তি অবসানে সঠিক গ্যাস ব্যবহার বাস্তবায়ন চায় নগরবাসী।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/282327