৪ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১:০০

সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার উপায়

-মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার

যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক শান্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক দেশগুলোর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করে নির্বাচনের ভালো-মন্দের ওপর। নির্বাচন স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হলে ওই রকম নির্বাচনে ভোটারদের রায়প্রাপ্ত সরকার দেশে-বিদেশে সম্মান পায়। সমাজে শান্তি ও রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। সবার সহযোগিতা নিয়ে সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারকে দেশে-বিদেশে রাজনৈতিক বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়। বিরোধীদলীয় সমালোচনা ও বৈধতার সংকট মোকাবেলা করতে হয়। ফলে এ রকম সরকার দেশ গড়ায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে না।

নড়বড়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে পরাশক্তিধর দেশগুলো দুর্বল বিবেচনা করে তাদের কাছ থেকে নিজ নিজ স্বার্থ আদায়ের সুযোগ পায়। সেজন্য দেশের উন্নয়ন ও সম্মানের স্বার্থে রাষ্ট্রক্ষমতায় ইনক্লুসিভ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার অধিষ্ঠিত থাকা প্রয়োজন। তবে সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে কোনো দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি অসুস্থ হয়ে পড়লে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সেই দেশ বিকল্প নির্বাচনী ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন ছিল স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্ভাবিত এ রকম একটি বিকল্প ব্যবস্থা। সামরিক সরকারের আমলে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে এ অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছিল। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার জন্ম হলেও স্বল্পায়ুর ষষ্ঠ সংসদে এ ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক ভিত্তি দেয়া হয়।

উচ্চাদালতের একটি বিতর্কিত ও বিভক্ত (৪:৩) রায়ের ওপর ভিত্তি করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করার পর দলীয় সরকারাধীনে অনুষ্ঠিত একতরফা ও প্রহসনমূলক দশম সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক বিশ্বে প্রশংসিত হয়নি। কারণ, এ নির্বাচনে অধিকাংশ সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই একটি দল সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ পাননি। দেশের অভ্যন্তরেও নির্বাচনটি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি সরকারি দল থেকেও নির্বাচনটিকে প্রশংসা না করে একে একটি ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন’ বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু পরে আরেকটি মধ্যবর্তী নির্বাচন না দিয়ে সরকার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার উদ্যোগ নিলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণ আগ্রহ হারায়। হ্রাস পায় বিদেশি বিনিয়োগ। সবকিছু মিলিয়ে দশম সংসদ নির্বাচনের পর গত চার বছর সরকারি এবং সংসদের বাইরের বড় বিরোধী দল স্বস্তিতে সময় কাটায়নি। এ কারণে আন্তর্জাতিক মহলসহ সবার দৃষ্টি এখন একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে। এ নির্বাচনটিকে দুর্নীতি-কারচুপিমুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক করতে পারলে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য এবং দুর্নীতি-কারচুপিমুক্ত করতে হলে সর্বপ্রথমে যে কাজটি করা জরুরি তা হল, সংসদ ভেঙে দিয়ে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা। কারণ, প্রচলিত নির্বাচনী সংস্কৃতিতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ইঞ্জিনিয়ারিং করার সুযোগ থাকে। আর সরকারি দলের নেতাদের পক্ষে সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে চাওয়া স্বাভাবিক। সেজন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাইলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্য কোনো নাম দিয়ে একটি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন করা ভালো হবে। তবে কেবল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করলেই যে নির্বাচন ভালো হবে, এমনটি মনে করার কারণ নেই। যে দলনিরপেক্ষ সরকার নির্বাচন করবে, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠানের সময় ওই সরকারগুলো যেসব ভুল করেছিল, সেগুলো মনে রেখে একই রকম ভুল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ নিবন্ধে আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ওই সরকারকে এ রকম কিছু ভুল দেখিয়ে দিয়ে ওই রকম ভুল না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আগামীতে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ওই সরকার এ পরামর্শগুলো আমলে নিলে ভালো নির্বাচন করা সহজতর হবে।

প্রথমত, নির্দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে ধীরে-সুস্থে কাজ করা যাবে না। কারণ, সন্ত্রাসীরা এ রকম স্বল্পায়ুর সরকারকে দুর্বল এবং ক্ষণস্থায়ী সরকার মনে করে। সেজন্য সর্বপ্রথমে এ সরকারকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট ভেঙে তছনছ করে দিতে হবে। এর ফলে সন্ত্রাসীরা নির্বাচনে অশুভ প্রভাব খাটাতে পারবে না। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ রকম কাজের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

দ্বিতীয়ত, ইতিপূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ক্ষমতায় আসার পর ১০ জন দলনিরপেক্ষ ধরনের উপদেষ্টা নিয়োগের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা গ্রহণ করেছেন। পরে সেসব তালিকা আমলে নিয়ে ওইসব তালিকা থেকে উপদেষ্টা নিয়োগও দিয়েছেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন, বিচারপতি হাবিবুর রহমান এবং বিচারপতি লতিফুর রহমান তিনজনই এ ভুল করেছেন। কাজেই আগামী নির্দলীয় সরকারকে এ রকম ভুল থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো অতীতে এর সুযোগ নিয়ে ওপরে নির্দলীয়; কিন্তু ভেতরে স্বদলীয় আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে সেখান থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, বা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন। নির্দলীয় লোক সন্ধান করতে গিয়ে দলীয় নেতাদের কাছ থেকে কোনোক্রমেই তালিকা গ্রহণ করা সঙ্গত নয়। কোনো দল এমন তালিকা দিতে এলে নির্দলীয় সরকার থেকে স্পষ্ট বলে দিতে হবে, আপনারা তো ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি করেন, আপনারা নিজেরাই ১০০ দলীয় লোক, কাজেই আমরা আপনাদের কাছ থেকে নির্দলীয় লোকের তালিকা গ্রহণ করব না। অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো এ দৃঢ়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

তৃতীয়ত, দলনিরপেক্ষ সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব বা চাপে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকার পরিচালনায় নির্বাচনের বাইরে রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া কোনো পলিসি ডিসিশন নেয়া যাবে না। কিন্তু আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো এ নীতিমালা থেকে সরে এসে ভুল করেছিল। যেমন, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের ২৩ সদস্যবিশিষ্ট শিক্ষা সংস্কার কমিটি গঠন এবং বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নবম বা দশম শ্রেণীতে ধর্ম বিষয় পড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদানে সম্পৃক্ত হওয়া একেবারেই উচিত হয়নি। কারণ, এ বিষয়গুলোর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক ছিল না। কাজেই আগামীতে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সে সরকারকে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং নির্বাচন সম্পর্কিত কাজ ছাড়া রাজনৈতিক মহলের চাপে অন্য কোনো রকম এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

চতুর্থত, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ব্যাপারে দলনিরপেক্ষ সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। কেবল নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণা করার পর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করলে হবে না। সব সময় নির্বাচনের মাঠে দলগুলোকে সমান সুযোগ-সুবিধার নীতি গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সিডিউল ঘোষণার আগে কোনো দল যেন নির্বাচনী প্রচারণায় কম বা বেশি সুযোগ না পায় সে ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয় পার্টিকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বক্তব্য প্রদানের সুযোগ না দিয়ে তাদের ওই নির্বাচনে অন্য অংশগ্রহণকারী দলগুলোর চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় কম সুযোগ দেয়ার কাজটি ভালো হয়নি।

পঞ্চমত, ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার সবসময় প্রশাসনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে দলের বিজয় সুনিশ্চিত করতে চায়। সেজন্য এ রকম সরকার নির্বাচনের আগে নিজেদের গুডবুকে থাকা প্রশাসকদের বিশেষ বিশেষ পছন্দের জায়গায় পোস্টিং দিয়ে দলীয় স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে প্রশাসনকে নিজেদের পছন্দমতো সাজায়। নির্দলীয় সরকারের এ বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে এবং ক্ষমতায় এসেই দলীয় সরকারের সাজানো প্রশাসনিক সেটআপ ভেঙে তছনছ করে নিজেদের পছন্দমতো প্রশাসনিক রদবদল করতে হবে। এজন্য কোনো দল খুশি বা বেজার হলে সে বিষয়টি আমলে নেয়া যাবে না। নির্বাচনে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য নির্দলীয় সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।

ষষ্ঠত, ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার সব সময় নির্বাচনে প্রশাসনের লোকজনকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে পেতে চায়। কারণ, তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে পেলে ভালো পোস্টিং বা পদোন্নতির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে নির্বাচনে আনুকূল্য অর্জনের সুযোগ থাকে। নির্দলীয় সরকারের এ রকম কোনো উদ্দেশ্য না থাকায় তাদের এ ব্যাপারে সতর্কতা গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। সারা বছর নির্বাচনী কাজ করায় নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসকদের চেয়ে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ভালো করতে পারবেন।

সপ্তমত, দলীয় সরকার বিশেষ কৌশলে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিজেদের অনুকূলে কাজ করাতে প্রয়াস পায় এবং এভাবে বিদেশি টাকায় পরিচালিত সব দেশি এনজিওগুলোর কাজের মধ্য দিয়ে পরোক্ষভাবে লাভবান হয়। নির্বাচন পরিচালনাকালে নির্দলীয় সরকারকে এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক যেন পরোক্ষভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটার উদ্বুদ্ধকরণের ছদ্মাবরণে সুকৌশলে কোনো দলের পক্ষে প্রচারণা চালাতে না পারে, সে ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

তবে যতই পূর্বপরিকল্পনা ও সমস্যা চিহ্নিত করে দলনিরপেক্ষ সরকার পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করুক না কেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর এ সরকারকে কিছু নতুন সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ সমস্যাগুলো সম্পর্কে যেমন আগে বলা যাবে না, তেমনি এর সমাধানও আগেই বাতলে দেয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে ওই রকম নতুন সমস্যা সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। যদি একাদশ সংসদ নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, আর ওই সরকার এ নিবন্ধে উল্লেখিত পরামর্শগুলো আমলে নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টা থাকলে একাদশ সংসদ নির্বাচন দুর্নীতি ও কারচুপিমুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারবে। আর নির্বাচনটি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হলে একদিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, অন্যদিকে দেশে সামাজিক শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি বেগবান হবে।

তবে ভালো নির্বাচন করার বল এখন সরকারের কোর্টে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার স্বার্থে সরকার চাইলে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সংকটের সহজ সমাধান করে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারে। আবার উপজেলা, ইউপি এবং তিন সিটি নির্বাচনের দুর্নীতি-কারচুপি ঢাকতে সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দুর্নীতি-কারচুপি না হওয়ার পরিকল্পিত উদাহরণ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে একগুয়েমি করে দলীয় সরকারের অধীনেই সংসদ নির্বাচন করার পদক্ষেপ নিতে পারে। এমনটি করলে এ প্রবন্ধে উল্লিখিত পরামর্শগুলো দলীয় সরকারের জন্য প্রযোজ্য হবে না। কারণ, চলমান সংস্কৃতিতে সংসদ না ভেঙে মন্ত্রী-এমপিরা ক্ষমতায় থেকে দলীয় ব্যবস্থাপনায় দলীয়করণকৃত প্রশাসন ও মনপছন্দ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত একতরফা সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের হাতে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাপক সুযোগ থাকবে। আর সে সুযোগ ব্যবহার করে তারা যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন পিছিয়ে পড়বে। বহির্বিশ্বে দেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ অনেকটা একঘরে হয়ে পড়বে। কাজেই কীভাবে, কেমন চরিত্রের সরকারের অধীনে, কেমন সংসদ নির্বাচন হবে- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত আমাদের সম্মানিত ও মেধাবী রাজনীতিকরা কেমনভাবে এ সংকট সমধান করেন, তা দেখতে শান্তি ও গণতন্ত্রপ্রিয় দেশপ্রেমিক নাগরিকদের আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।

ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

akhtermy@gmail.com

https://www.jugantor.com/todays-paper/sub-editorial/2710