৩ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:১৮

জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ

২০১৭ সালে দেশে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে, যা আগের বছরের ব্যয় বৃদ্ধির হারের চেয়েও প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি। ২০১৬ সালে ব্যয় বেড়েছিল ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৭-এ পণ্য ও সেবা মূল্যও বেড়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে ছিল ৫ দশমকি ৮১ শতাংশ। ফলে উন্নয়নের সুফল উচ্চবিত্তরা ভোগ করলেও নিম্ন আয়ের মানুষ এ সুফল পাচ্ছে না। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
এ সময় ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে ১০টি সুপারিশ পেশ করেছে ক্যাব। রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবার মধ্যে থেকে ১৪৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ও ১৪টি সেবা পণ্য পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে যেসব পণ্যের মূল্য বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সব ধরনের চালের গড় মূল্য বেড়েছে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে মোটা চালের দাম সরু চালের দামের চেয়ে বেশি বেড়েছে। গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পিয়াজের। দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছ ৪০.৯৯ শতাংশ ও আমদানি করা পিয়াজে বেড়েছে ৫৭.৫৪ শতাংশ। শাকসবজিতে গড়ে দাম বেড়েছে ২৪.২৮ শতাংশ। তরল দুধে বেড়েছে ২০.৩৬ শতাংশ, গরুর মাংসে বেড়েছে ১৯.৭২ শতাংশ। চিনি ও গুড়ে গড়ে বেড়েছে ১২.৮ শতাংশ, লবণের ১১.০৩ শতাংশ, ভোজ্য তেলে ১০.৭৮ শতাংশ, চা পাতায় ১০.৩২ শতাংশ।
দেশি শাড়ি-কাপড়ে ৬.৬২ শতাংশ, গুঁড়ো দুধে বেড়েছে ৫.১১ শতাংশ, মাছে ৫.৩৭ শতাংশ, ডালডা ও ঘিতে বেড়ছে ৫.৩৫ শতাংশ, দেশি মোরগ-মুরগিতে ২.৬৪ শতাংশ, ডিমে বেড়েছে ১.৫৮ শতাংশ। আটা ময়দায় বেড়েছে ১.৯৫ শতাংশ, ডালে বেড়েছে ১.৪৮ শতাংশ। গেঞ্জি, গামছা ও তোয়ালেতে গড়ে দাম বেড়েছে ৪.২৩ শতাংশ।
সেবা খাতে ২ বার্নার গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৩.০৮ শতাংশ, আবাসিক খাতে বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ৬.৪৪ শতাংশ, বাণিজ্যিক খাতে বেড়েছে ৫.৮৮ শতাংশ এবং ওয়াসা সরবরাহ করা পানির মূল্য প্রতি হাজার লিটারে বেড়েছে ৫ শতাংশ এবং বাসা ভাড়া বেড়েছে ৮.১৪ শতাংশ।

ব্যয় কমাতে ক্যাবের ১০ সুপারিশ: জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে ক্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি সুপারিশ দেয়া হয়েছে। ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে ভোক্তারা কিছু সুবিধা পাবেন। সুপারিশগুলো হলো- দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে দারিদ্র্য, স্বল্প আয় এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের ভোক্তারা যাতে বঞ্চিত না হন সেজন্য জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ উদ্দেশ্যে ১২ থেকে ১৫টি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিহ্নিত করে সেসব পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক বিভাগ অথবা একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা। বিকল্প হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার দায়িত্বে তার কার্যালয়ে একটি পৃথক উইং প্রতিষ্ঠাও বিবেচনা করা যেতে পারে।

ধান-চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং কৃষকের কাছ সরাসরি সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান-চাল সংগ্রহ করা ও তার জন্য শস্য-বীমার প্রথা প্রবর্তন করা। দ্রুত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে দেশের জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা এবং সঙ্গে সঙ্গে বিইআরসি কর্তৃক বিদ্যুতে দাম পুনর্নির্ধারণ করে মূল্য হ্রাস করা। বাড়ি ভাড়া আইন ১৯৯১ অনতিবিলম্বে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে ভাড়াটেদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া কমিশন গঠন করা।

যাত্রী দুর্ভোগ ও যানজট কমাতে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো দ্রুত ও সময়মতো বাস্তবায়ন করা। অ্যাপভিত্তিক যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে দ্রুত আইনি কাঠামো প্রণয়ন করা এবং এসব সেবা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া।
ডাক্তারদের ফিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ, ওষুধের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুলভে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। শিক্ষাখাতে অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে অবিলম্বে শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। শিক্ষার মান উন্নয়নের ব্যবস্থা নেয়া।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ এর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া। ওষুধ নীতি বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করা। পণ্য ও সেবার মান এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য হ্রাসের সুফল ভোক্তারা যাতে পেতে পারে সে লক্ষ্যে আমদানি বাণিজ্যকে অধিকতর প্রতিযোগিতামূলক করা। মুদ্রা বিনিময় হারের পরিবর্তনের কারণে আমদানিকৃত পণ্যের দাম যাতে বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল যাতে সুষম বণ্টন হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা। আয় বৈষম্য নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নেয়া।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=98876