৩ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:১৬

এমপিও এবং জাতীয়করণ দাবিতে শিক্ষক আন্দোলন

অনশন ভাঙাতে ব্যর্থ শিক্ষামন্ত্রী

‘না’ ধ্বনি তুলে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস প্রত্যাখ্যান * শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস চাচ্ছেন * স্কুলের মতোই জাতীয়করণ চান ইবতেদায়ি শিক্ষকরা * আগামী বাজেটে এমপিওভুক্তি -আফছারুল আমিন ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী

এমপিওর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের অনশন ভাঙাতে পারলেন না শিক্ষামন্ত্রী। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে যান। সেখানে আন্দোলনরতদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষকরা ‘না’ ধ্বনি তুলে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করেন। তারা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস না পেলে রাজপথ ছাড়বেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। ওই অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রী মন খারাপ করেই অনশনস্থল ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকেও শিক্ষকরা আমরণ অনশনে আছেন বলে জানা গেছে।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আফছারুল আমিন ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান কথা বলেছেন। ডা. আমিন যুগান্তরকে বলেন, তিনটি বিষয় নিশ্চিত করেই শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। এগুলো হচ্ছে, বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে কিনা এবং অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। যদি চলতি বাজেটে বরাদ্দ না থাকে, তাহলে মন্ত্রণালয় ব্যয় করতে পারবে না। তাই শিক্ষকদের নতুন বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
অপরদিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্তি সম্পর্কে সরকারের এখন পর্যন্ত চিন্তাভাবনা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই শেষে এমপিও দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি কাজ করছে। আগামী বাজেটে হয়তো শিক্ষকদের জন্য সুসংবাদ থাকতে পারে।

শিক্ষকদের এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় যুগান্তরকে বলেন, সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না দেয়ায় শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেননি। তারা মন্ত্রীর কাছে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি চান, দায়সারা আশ্বাস নয়। কেননা এর আগেও মন্ত্রী এ ধরনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান। তা না হলে অনশনকারীরা রাজপথ ছাড়বেন না। সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তারা আন্দোলন করছেন। ওই বছরের ১ জানুয়ারি আন্দোলনের মুখে এমপিওভুক্তির জন্য ৩ মাস সময় নেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রাখেননি। একই দাবিতে শিক্ষকরা ২০১৪ সালে মানববন্ধন, ২০১৫ সালে ২৮ দিনব্যাপী অবস্থান ধর্মঘট করেন। তখন শিক্ষকরা অবস্থান, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। পরে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষকরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলনে আছেন শিক্ষকরা।

উল্লেখ্য, শিক্ষামন্ত্রী অনশনস্থলে শিক্ষকদের বলেন, ‘আপনাদের বিষয়টি নিয়ে আমি ও আমার সহকর্মীরা অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে আলোচন করেছি। অর্থমন্ত্রী শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’ তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে নতুন এমপিওভুক্তি কার্যক্রম বন্ধ আছে। টাকা দেয়ার বিষয়টিতে আমাদের হাত নেই। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিষয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস পাওয়ার বিষয়ে কিছুটা সময় লাগলেও যেহেতু এবার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে, তাই এখন এমপিওভুক্তির দরজা খুলে যাবে। এ ব্যাপারে কমিটি কাজ করছে। একটি নীতিমালা করে এমপিভুক্তির দাবিটি পূরণ করা হবে।

এর আগে বেলা ১১টায় শিক্ষামন্ত্রী অনশনস্থলে যান। তিনি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে আমরণ অনশন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু তার বক্তব্য সুস্পষ্ট না হওয়ায় অনশনরত শিক্ষকরা সমস্বরে ‘না’ ধ্বনি তোলেন। এ সময় সংগঠনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার অনশনরত ছিলেন। বেলা ১২টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সভাপতিকে। তিনি ৭০২নং ওয়ার্ডের ৫০নং বেডে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। ফেডারেশনের নেতারা জানান, ডলারসহ ৩৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে অনশনে বিশিষ্টজনদের সংহতি জানানো অব্যাহত আছে। ৩য় দিনে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য কাজী ফারুক আহমেদ, বিটিএর সভাপতি সৈয়দ মোফাজ্জেল, ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আবু সাঈদ (কমিউনিটি মেডিসিন), জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. মহসিন রেজাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা আমরণ অনশনে সংহতি জানিয়ে বত্তৃদ্ধতা করেন।

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা : এদিকে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত আছে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি এ কর্মসূচি ডেকেছে। সংগঠনের মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, ৬ হাজার ৭৯৮টি মাদ্রাসা বোর্ডের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান দশ হাজারের বেশি। আমরা এসব মাদ্রাসা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতোই সরকারিকরণ দাবি করছি। জাতীয়করণের ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তাদের লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চলবে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/2231