৩ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:০৭

বিজেএমসির জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

খুলনার ৮ পাটকলের দুরবস্থা

খুলনার আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকেরা কয়েক সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না বলে তাঁদের সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন দুঃখজনক রূপ লাভ করেছে। প্লাটিনাম জুট মিলের এক শ্রমিক প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কাছে তাঁর সংসারের দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পাওয়ায় বাড়িতে বাজার নিয়ে যেতে পারছি না। মুদিদোকানে অনেক টাকা বাকি রয়েছে। দোকানি আর বাকিতে চাল-ডাল দিতে চায় না। ছেলেমেয়েরা কোনোমতে খেয়ে না-খেয়ে দিন পার করছে।’

উল্লিখিত আটটি পাটকলের প্রতিটিরই শ্রমিকেরা একই রকমের দুর্দশায় পড়েছেন। তাঁরা কেউ ৪ সপ্তাহ ধরে, কেউ ১২ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না। তাঁরা বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। সম্প্রতি তাঁরা ঘোষণা করেন যে বকেয়া মজুরি না পেলে কাজে ফিরে যাবেন না। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশের পাটকলগুলোর শ্রমিকেরা ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করেছেন।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনার আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করার আগে কিছু পাটপণ্য বিক্রি করা হয়েছে, কিন্তু তার মূল্য এখনো পরিশোধ করা হয়নি বলে টাকার অভাবে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁরা পাটপণ্য বিক্রির টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন। তবে এমন কথাও বলা হয়েছে যে টাকা আদায় হওয়ার পর সব পাটকলের শ্রমিকদের কিছু কিছু মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব হবে, কিন্তু সব বকেয়া পরিশোধ হবে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, পাটকলগুলোতে অর্থসংকট এত প্রকট যে শ্রমিকদের নিয়মিতভাবে মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব পাটকল কেন ধুঁকে ধুঁকে চলে? এগুলো কেন তাদের শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি পরিশোধ করতে পারে না? পাটপণ্যের কি চাহিদা নেই? উৎপাদিত পাটপণ্য কি বিক্রি হয় না? তাহলে বেসরকারি পাটকলগুলো কীভাবে লাভ করছে? বিজেএমসির কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, অদূরদর্শিতাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর দুরবস্থার জন্য দায়ী। এদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। বছরের পর বছর ভর্তুকি দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো চালানোর কি অর্থ হয়?

 

http://www.prothomalo.com/opinion/article/1400206