২ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৬

উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে খুলনাঞ্চলের পাট খাত

১১ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ পাটকলের উৎপাদন বন্ধ

শ্রমিকদের দাবি “মজুরি দাও নইলে আন্দোলন”

: উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে খুলনাঞ্চলের পাট সেক্টর। দাবি আদায়ে অনড় কর্মরত শ্রমিকরা। “মজুরি দাও নইলে আন্দোলন” এই শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল। বকেয়া মজুরিসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত¡ ৮ পাটকলের শ্রমিকদের চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে শিল্পাঞ্চলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ফলে ফের অনাকাঙ্খিত অঘটনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, খুলনাঞ্চলের অধিকাংশ পাটকলের চাকা ঘুরছে না। অর্থাৎ ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ৮টির উৎপাদন এখন বন্ধ। জ্বালাও পোড়াও শ্লোগানে মুখরিত চারিদিক। শিল্পাঞ্চলের জন্য এটি একটি অশনি সংকেত। গতকাল সোমবারও ভোর ৬টা থেকে এসব পাটকলের শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে কর্মবিরতি পালন করে। পাটকলগুলোতে শ্রমিকের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। মজুরি পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে শ্রমিকরা ধারাবাহিক আন্দোলন করলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রেখে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। এ সময় দফায় দফায় মিছিল ও মিল গেটের সামনের সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালানো হয়। গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় ৮ সপ্তাহের মজুরির দাবিতে প্লাটিনাম জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। পরবর্তীতে সকাল ১০টায় একে একে ক্রিসেন্ট, দৌলতপুর ও স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা তাদের মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করে। এ চারটি মিল বন্ধের সংবাদ পেয়ে দুপুর ২টার দিকে আটরা-গিলাতলা শিল্পাঞ্চলের ইস্টার্ণ এবং অভয়নগরের জে জে আই জুট মিলের উৎপান বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আলীম জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। আর গত শনিবার খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

পাটকলগুলোর সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত¡ পাটকলের মধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলে প্রায় ৫ হাজার, প্লাটিনামে সাড়ে ৪ হাজার, স্টারে সাড়ে ৪ হাজার, দৌলতপুর জুট মিলে সাড়ে ৬শ’, ইস্টার্নে ২ হাজার, আলীমে দেড় হাজার এবং জে জে আই জুট মিলে ২ হাজার ৬শ’ এবং খালিশপুর জুট মিলে প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক রয়েছেন। এসব পাটকলের শ্রমিকদের চার থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। এসব মিলে শ্রমিকদের বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা।
স্টার জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মো. বেল্লাল হোসেন মল্লিক বলেন, চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। সোমবার সকালে স্ব-স্ব মিল গেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামতে হয়েছে। ২ জানুয়ারির মধ্যে দাবি না মানা হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম জোনের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবো। সে কর্মসূচি কঠিন হতে পারে।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, মজুরি না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে শ্রমিকরা। তাই তারা বাধ্য হয়ে মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবে না। তিনি অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) খুলনা অঞ্চলের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, খামাকা শ্রমিকরা মিল বন্ধ করে একাকার করে ফেলেছে। অন্য অঞ্চলের সব মিল চালু কোন সমস্যা নেই। এখানে কেউ কেউ ফায়দা নেওয়ার জন্য এ আন্দোলন করছেন। তিনি জানান, বেতনের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। দুই দিন অফিস বন্ধ ছিলো। ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

সূত্রমতে, খুলনাঞ্চল দেশের অন্যতম পাট শিল্পের সূতিকাগার হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে চিহ্নিত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ খ্যাত পাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পাটকলগুলো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্ধ পাটকল চালু এবং রুগ্ন শিল্পকে চাঙ্গা করতে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা ও প্রকল্প হাতে নেয়। এটি এ অঞ্চলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দূরদর্শীতার অভাবে তা সঠিক সময় আলোর মুখ দেখতে পারেনি। বর্তমানে সৃষ্ট কৃত্রিম সঙ্কট তাই সরকারের গৃহীত সবুজ পদক্ষেপগুলোকে রক্তাত করতে পারে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/110927