২ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৩

বন্দরনগরীতে বছরজুড়েই ছিল তীব্র গ্যাস সঙ্কট

রান্নায় বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বছরজুড়েই ছিল গ্যাস সঙ্কটের তীব্রতা। কারণ বেশির ভাগ সময় বন্ধ ছিল চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র। গ্যাস রেশনিংয়ের কারণে হয় বহুজাতিক সারকারখানা কাফকো নয়তো রাষ্ট্রায়ত্ত সিইউএফএল বন্ধ ছিল দীর্ঘ সময় ধরে। বাসাবাড়িতে গ্যাসের ভোগান্তি এত চরম পর্যায়ে পৌঁছে যে, রান্নার কাজে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। পাশাপাশি শিল্প কারখানার উৎপাদনেও ছিল গলদঘর্ম অবস্থা। পেট্রোবাংলার ২০১৭ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ীও গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিট এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সারকারখানা সিইউএফএল গতকাল রোববার পর্যন্ত বন্ধ ছিল গ্যাস সঙ্কটের কারণে।
বছরজুড়েই গ্যাসের চাপ সঙ্কটের তীব্রতায় নাগরিক দুর্ভোগ ছিল চরমে। গ্যাসের চাপ সঙ্কটে বিস্তীর্ণ এলাকার বাসাবাড়ির রান্না বান্না প্রায় বন্ধই ছিল। ফলে উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিকসামগ্রী যেমন রাইস কুকার, ইলেকট্র্রিক কেটলি, ইনডাকশন কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওভেন ইত্যাদির ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায়ও এসবের ব্যবহার মারাত্মক চাপ বাড়িয়েছে। অন্য দিকে গ্যাস সঙ্কটে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগ চাহিদানুযায়ী বিদ্যুতের জোগান দিতে পারেনি। ফলে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ উভয়েরই ঘাটতি চট্টগ্রামের মানুষকে দারুণভাবে ভুগিয়েছে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী গতকাল চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর রাষ্ট্র্রায়ত্ত চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার পৃথক দুইটি ইউনিট, শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট ও ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ দিতে না পারায় শাটডাউনে (বন্ধ) ছিল।
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ২১২.৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয় মাত্র ৩.১ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া বহুজাতিক সারকারখানা কাফকো-কে ৫০.৮ মিলিয়ন ঘনফুট, আবাসিক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক গ্রাহক মিলে ১৫২.৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিসিএল) কর্মকর্তা অনুপম দত্ত নয়া দিগন্তকে বলেন, এক দিকে সারা দেশের চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। অন্য দিকে চট্টগ্রামের লাইন অপেক্ষাকৃত শেষপ্রান্তে (ডাউনস্ট্রিমে) হওয়ায় এখানে চাপ সঙ্কট প্রবল। লাইনে যা গ্যাস আসছে তা শুরুতেই তিতাস ও বাখরাবাদ নেয়ার পর এ দিকে আসতেই চাপ কমে যাচ্ছে। এমনিতেই কম সরবরাহ, এর ওপর চাপ সঙ্কটের মধ্যে আমরা আছি। তিনি স্বীকার করেন চাপ সঙ্কটে নাগরিকেরা গাড়ি নিয়ে সিএনজি স্টেশনে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বাসাবাড়ির দুরবস্থাতো আছেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি করুণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিন্তু তাতে আমাদের কিছু করার নেই। গ্যাস রেশনিং করে হয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়তো সারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এলএনজি গ্যাস এলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগে যেখানে ২৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হতো বর্তমানে তা কমতে কমতে ২১০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি নেমে এসেছে। মাঝে মধ্যে নানা ত্রুটির অজুহাতে তা আরো কমে যায়। অনেকটা জোড়াতালি দিয়েই চলছে চট্টগ্রামে গ্যাস বিতরণব্যবস্থা। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় এমনি নাজুক পরিস্থিতিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের।

পেট্রোবাংলার ২০১৪ সালে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে তথা কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাড়াবে দৈনিক ৫১২ মিলিয়ন ঘনফুটে। চট্টগ্রামে এতদিন গ্যাসের সরবরাহ ২৯০ মিলিয়ন ঘনফুটের অধিক ছিল। কিন্তু জাতীয়ভাবে গ্যাসের উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলেও চট্টগ্রামের সরবরাহ প্রায় ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত কমিয়ে দেয়া হয়েছে। চাপ বাড়ানোর জন্য আশুগঞ্জ থেকে বাখরাবাদে নতুন কম্প্রেসার স্থাপনের কথা উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/281444