২ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩২

নির্বিকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা নন-এমপিও শিক্ষকদের


# ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ # বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের সমর্থন-সংহতি

নতুন বছরে ছাত্রদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছেন যে শিামন্ত্রী, তিনি শিকদের আনন্দ দিতে জানেন না। শিকদের নিরানন্দে রেখে শিাপ্রতিষ্ঠানে আনন্দ থাকে না। ছাত্ররাও আনন্দে নেই। ---এভাবেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন গত ৭ দিন ধরে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে অবস্থান নিয়ে এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনরত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। গতকাল ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনে অনশনরত শিক্ষকদের সাথে সংহতি-সমর্থন জানান বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন ও এর নেতারা। ২৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বর টানা পাঁচ দিন একই স্থানে খোলা আকাশের নিচে দিনরাত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমপিওভুক্তির দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গতকাল ১৬ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে কুড়িগ্রাম চিলখালা মডেল কলেজের মো: ফরহাদ, বরিশালের আল-ইখন দাখিল মাদরাসার মো: বজলুর রহমান, কুষ্টিয়া খোকসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আব্দুর রাজ্জাক, বরিশালের আল ইখওয়াসা দাখিল মাদরাসার ফজলুর রহমানের অবস্থা গুরুতর।

বিরতিহীন অবস্থান ও আমরণ অনশন কর্মসূচির সাত দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কেউ অনশনরত শিক্ষকদের সাথে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেননি বলে জানান নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার। তিনি এবং অন্যান্য নেতা বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্তির কোনো ঘোষণা আসেনি। গত ৩০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে এমপিওভুক্তি করবেন বলে যে কথা বলেছেন তা সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। ইতঃপূর্বে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবিসংবলিত একটি আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়। নেতারা এমপিওভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, অনশন চলাকালে মৃত্যুর খবর শোনার আগেই প্রধানমন্ত্রী সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেবেন বলে তাদের প্রত্যাশা।

শিক্ষক নেতারা বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ভালো ফলের কৃতিত্বের দাবিদার হলেও আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে সেই আনন্দের অংশীদার হতে পারিনি। তা ছাড়া ১ জানুয়ারী বই উৎসবেও অংশগ্রহণ করতে পারিনি।
এ দিকে এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের একক বৃহৎ সংগঠন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যেজোট। গতকাল জোটের এক আলোচনা সভায় শিক্ষক নেতারা বলেন, রুটি রুজির দাবিতে শিক্ষকদের রাজপথে নেমে আসা বিশ্ব সভ্যতার জন্য একটি কালিমাযুক্ত অধ্যায়। সরকারের দীর্ঘ অবহেলার কারণেই শিক্ষক সমাজকে রাজপথে নেমে অনশন করতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষক জাতি গঠনের মতো মহান পেশা বেছে নিয়ে ২০-২৫ বছর শিক্ষকতা করছেন কিন্তু তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শিক্ষকেরা জাতি গঠনের কারিগর। তারা উন্নত জাতি গঠনে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন অথচ তাদের বেতন দেয়া হয় না। সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বারবারই ভঙ্গ করে যাচ্ছে। তাই নিরুপায় হয়েই তারা অনশন করছেন। তারা বলেন, অবিলম্বে দেশের সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা না হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবেন।

এ ছাড়া শিক্ষকদের আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে গতকাল বক্তব্য রাখেন, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা: এম এ সাঈদ (বারডেম), গণতান্ত্রিক বামমোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ ও খালেকুজ্জামান লিপন, ন্যাপের সম্পাদক পার্থ সারথী চক্রবর্তী, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাফি রতন ও জলি তালুকদার, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আকবর খান প্রমুখ।
এমপিওভুক্তির বিষয়টি বিবেচনার দাবি রওশনের

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, বছরের প্রথম দিন সারা দেশে যখন বই উৎসব চলছে, তখন নন-এমপিও স্কুল কলেজের শিকেরা অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। দেশের হাজার হাজার নন-এমপিও স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক-কর্মচারী বেশির ভাগই বিনা বেতনে সেখানে চাকরি করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে সরকারের স্বীকৃতি নিয়েই। কিন্তু বছরের পর বছর এসব শিাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হয়নি। এমপিওভুক্তি নিয়ে জাতীয় সংসদে একাধিকবার দাবি উঠলেও বিষয়টি উপেতি থেকে গেছে।
গতকাল রওশন এরশাদ বলেন, শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো সমৃদ্ধ করা, সুশিার পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিার সুষ্ঠু বিকাশের জন্য এমপিওভুক্তি অত্যন্ত জরুরি। এমপিওভুক্তির সাথে শিকদের জীবন-জীবিকা, মান- মর্যাদার বিষয়টিও জড়িত।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/281525