২ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২৪

রাজনীতিক অপহরণ

পরে শ্যোন অ্যারেস্টের রহস্য কী

গুম যেন এক খেলা হয়ে গেল। কারণ, একটি মানুষ মাসের পর মাস নিখোঁজ থাকার পর তাকে পুলিশ আটক দেখাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা আসামি খুঁজে পেয়েছে। আদালতে হাজির করানোর পর পুলিশের মনোভাব হচ্ছে অপরাধীকে পাকড়াও করতে তারা পেরেছে। কিন্তু এত দিন ধরে নিখোঁজ থাকার রহস্য কী সে ব্যাপারে পুলিশ কিছু বলছে না। ভাবখানা এমন, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। কিছু জানার যেন তাদের দরকারও নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, পরিচিত রাজনৈতি ব্যক্তিদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর মিডিয়ায় খবর হয়েছে। তারা কয়েক মাস ধরে বেশ আলোচিত ছিলেন। মোটামুটি সবাই তাদের নিখোঁজ থাকার ঘটনা জানেন। তাদের খোঁজখবর চেয়ে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক ধরনা দেয়া হয়েছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এখন পুলিশ যদি নিখোঁজের চেয়ে আসামি আটকের ঘটনা বেশি করে হাইলাইট করে, তাতে গুমের বিষয়টি আড়াল হয়ে যায় না। সম্প্রতি দু’জন রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ দু’জন এখন আসামি হিসেবে পুলিশের কাস্টডিতে থাকলেও স্বজনেরা স্বস্তিতে। যারা আর ফিরে আসেননি, কোনো খোঁজখবরও নেই, তাদের পরিবারে চলছে মাতম।

বিএনপি নেতা সৈয়দ সাদত চার মাস ধরে নিখোঁজ। হঠাৎ শনিবার তাকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা বলেছে, সাদত পলাতক আসামি। রাজধানীর রামপুরা সেতুর কাছে দাঁড়ানো থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২২ আগস্ট বিকেলে বিমানবন্দর সড়কের বনানী উড়াল সড়কের নিচে সাদা পোশাকের কয়েক ব্যক্তি সাদতের গাড়ি থামিয়ে তাকে তুলে নেয়। গাড়িতে থাকা তার সন্তানকে অপহরণকারীরা জানায়, সাদত ১৫ মিনিট পরে ফিরে আসবেন। সেই ১৫ মিনিট হয়ে যায় চার মাস সাত দিন। অপহরণের সময় কেউ অপহরণকারীদের চিনতে পারেননি। তবে খোঁজ পাওয়ার পর জানা গেল, গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করেছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রমনা থানা এলাকার গাড়ি ভাঙচুর মামলায় তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। ঠিক এ ধরনের ঘটনা দেখা গেল কল্যাণ পার্টির সাধারণ সম্পাদক এম এম আমিনুর রহমানের ব্যাপারে। তিনি প্রায় চার মাস আগে নিখোঁজ হন। তাকে ঢাকার শাহজাদপুর থেকে আটক করে পুলিশ। তাকেও ২০১৫ সালের একটি মামলায় পুলিশ আটক দেখিয়েছে। দু’জনের আটক হওয়ার স্থান প্রায় কাছাকাছি। অন্য দিকে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও ঘটে ঢাকা থেকেই। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া অনেকের ক্ষেত্রে একই ধরনের স্থান ও ঘটনার একই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, খুব কাছাকাছি এসেও যেন এসব ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনা খোলাসা করতে আগ্রহী নয়। বিদায়ী বছরে ৯১ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ৬১ জনের খোঁজ এখনো মেলেনি।

যেভাবে দুই রাজনৈতিক নেতাকে পুলিশ আটক দেখিয়েছে, তাতে গুমের রহস্য যেন আরো ঘনীভূত হচ্ছে। একই ধরনের ঘটনা সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। এ ঘটনাগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে গুমের পেছনের লোকদের শনাক্ত করা খুব কঠিন হবে না বলে অনুমিত হচ্ছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতটা দুর্বল নয় যে, রাজধানীর একেবারে প্রকাশ্যে ঘটা এসব ঘটনা উদঘাটনের ক্ষমতা রাখে না। আমরা মনে করি, গুমরহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া উচিত।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/281382