১ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৯:১৪

প্রশ্নফাঁস : বিুব্ধ শিক্ষার্থী-অভিভাবক

২০১৭ সালে বছরজুড়েই আলোচনার শীর্ষে ছিল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। শুধু পাবলিক পরীক্ষাই নয়, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে এবং চাকরির নিয়োগ পরীাÑ সব েেত্রই ছিল প্রশ্নপত্র ফাঁসের হিড়িক। সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জ ও বরগুনা জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

পাবলিক পরীক্ষা মানেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে প্রশ্নফাঁসের আতঙ্ক। এতে মেধাবী ও পড়–য়া শিক্ষার্থীরা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের ও সমাজের অন্য সব বিষয়ের মতোই ‘প্রশ্নফাঁসও’ যেন প্রতিকারহীন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরু থেকেই যদি বাস্তবতা স্বীকার করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা মহামারীতে রূপ নিতো না। বছরান্তে যা সরকারকে এক বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশে পাবলিক পরীক্ষায় নকলে প্রবণতা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সেটি মহামারী আকারে রূপ পেলও বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন অনেকটা এককভাবে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থীদের আতঙ্ক ও ভীতি সঞ্চারের কারণে নকল প্রায় সর্বাঙ্গেই নির্মূল হয়েছিল। পাঠ্যপুস্তকনির্ভর সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি প্রবর্তনের কারণেও নকলের প্রভাব কমেছে বলে অনেকেই দাবি করেন। এ সময় থেকে শুরু হয় প্রশ্নফাঁসের প্রবণতা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকে। ২০১২ সালের পর থেকে পাবলিক পরীায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। কিন্তু শুরু থেকেই প্রশ্নফাঁসের ঘটনাকে তুুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী। বর্তমানে সরকারের লাগাতার দুই মেয়াদে তিনিই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। বারবারই তিনি বলেছেন, পরীক্ষার আগে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা বিজ্ঞ শিক্ষকদের সাজেশন, আর সাজেশন তো মূল প্রশ্নের সাথে মিলতেই পারে। প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। বরং সবই গুজব। তিনি অভিভাবকদের গুজবের পেছনে না ছোটার আহ্বান জানান।

২০১২ সালের পর থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছরেই প্রাথমিক শিা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), এসএসসি ও এইচএসসি পরীায় অন্তত ৮০টি বিষয়ের (পত্রের) প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। শুরুতে বিষয়টি গুজব বা সাজেশন বলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ২০১৪ সালে সরকারি তদন্তেই প্রমাণিত হয়, ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি ও গণিতের প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁসের ঘটনা। ২০১৩ সালের প্রাথমিক শিা সমাপনী পরীার প্রায় সব প্রশ্ন ফাঁস হলেও সরকারি তদন্তে বলা হয়, ইংরেজি বিষয়ে ৮০ এবং বাংলা বিষয়ে ৫৩ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে মিলে যায়।

চলতি বছরের এসএসসি পরীার গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরীার আগেই ফাঁস হলেও পরীা বাতিল করা হয়নি। সর্বশেষ গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জেএসসি এবং প্রাথমিক শিা সমাপনী পরীায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু বিষয়টিকে আমলেই নিচ্ছে না শিা বোর্ড।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/281149