৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১:২৬

বাংলাদেশে উদার গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা

এবনে গোলাম সামাদ:  আমার কাছে উদার গণতন্ত্রের একটা আদর্শ হলো ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র ত্রুটিশূন্য নয়; কিন্তু মানুষ এ পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক ব্যবস্থার উদ্ভব করতে পেরেছে, তার মধ্যে একে একটা কার্যকর ভালো ব্যবস্থা হিসেবে মনে করা যেতে পারে। অনেকেই এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমালোচনা করেন। বলেন, এটা নাকি বড়লোকের গণতন্ত্র; গরিবের গণতন্ত্র নয়। এ গণতন্ত্রে দরিদ্র ব্যক্তিরা লাভবান হতে পারে না। 
কেন এ রকম ভাবা হয়, সেটি আমার উপলব্ধিতে আসে না। কেননা, বামপন্থীদের পরম গুরু কার্ল মার্কস উদার গণতন্ত্রকে সব সময় খাটো করে দেখার পক্ষে ছিলেন না। তিনি বিলাতে চার্টিস্টদের (Chartists) সমর্থন করেছিলেন। বিলাতে চার্টিস্ট আন্দোলন হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে। চার্টিস্টরা দাবি করেছিল প্রাপ্তবয়স্ক সব পুরুষের জন্য ভোটাধিকার; নির্বাচন আসনগুলো (Electoral Districts) মোটামুটি গঠিত হতে হবে একই সংখ্যক জনসমষ্টি নিয়ে; পার্লামেন্টের সদস্যদের দিতে হবে মাসিক বেতন; পার্লামেন্টে সদস্য হওয়ার জন্য কোনো বিশেষ পরিমাণ সম্পত্তির অধিকারী হতে হবে না (Abolition of Property Qualification); গোপনে ভোটদান ব্যবস্থা (Secret Ballot ); এবং প্রতি বছর অন্তত একবার করে পার্লামেন্টের অধিবেশন। 
কার্ল মার্কস চার্টিস্টদের এই দাবিগুলোকে সমর্থন করেছিলেন। বলেছিলেন বিলাতের মানুষ তাদের ভোটাধিকার বাড়লে তারা পারবে উপযুক্ত আইন পাস করে তাদের অবস্থার উন্নতি বিধান করতে। অর্থাৎ তিনি বলতে চাননি ভোট হলো কেবলই একটা বড়লোকি ব্যাপার। কার্ল মার্কস চার্টিস্টদের পক্ষ হয়ে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা প্রকাশ হয়েছিল চার্টিস্টদের পত্রিকায়। যার নাম ছিল Northern Star। ১৮৪৭ সালে ৪ ডিসেম্বর সংখ্যায় বক্তৃতাটি প্রকাশ হয়েছিল। তারিখটি মনে রাখার মতো। কেননা, এই একই সময় ইউরোপের রাজনীতি নিচ্ছিল বেশ কিছুটা ভিন্নরূপ। কার্ল মার্কস ও তার অন্তরঙ্গ বন্ধু ফেডরিক এঙ্গলস ১৮৪৮ সালে রচনা করেন সাম্যবাদীর ঘোষণাপত্র (Communist Manifesto)। যাতে তারা বলেন, মানুষের ইতিহাস হলো শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। সর্বহারাদের লক্ষ্য হতে হবে ধনিক শ্রেণীর হাত থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা কেড়ে নিয়ে শ্রেণিহীন সাম্যবাদী সমাজ গড়া; কিন্তু ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে তদের এই বিপ্লবের বাণী যতটা জোরালো প্রভাব ফেলতে পেরেছিল, বিলাতের রাজনীতিতে তা পারেনি।
বিলাতের মানুষ তাদের উন্নয়নের জন্য চেয়েছে আইনের পথ ধরেই চলতে। আর সেই পথেই এসেছে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। যদিও সমাজ পরিণত হয়নি শ্রেণিহীন সমাজে। যাকে বলা হয় সমাজতন্ত্র (Socialism) অর্থাৎ রাষ্ট্রিক পরিকল্পনা অনুযায়ী একটা দেশের অর্থনীতিকে গড়া, তার ধারণার প্রথম উদ্ভব হয় ফরাসি দেশে। ফরাসি সমাজতান্ত্রিক নেতা লুই ব্লক (Louis Blanc) একটি বই লিখেন। বইটির নাম, L` Organisation du Travil (লা’ অর্গানিজাসিয় দু ত্রাভাই)। এতে তিনি বলেন সামজতন্ত্রের গোড়ার কথা হলো, প্রথমে সমাজের সব কর্মক্ষম লোকের কর্মসংস্থান। সমাজে বেকার থাকা চলবে না। কার্ল মার্কস ও ফেডরিক এঙ্গেলসের সাম্যবাদীর ঘোষণাপত্র যে বছর প্রকাশ হয়েছিল, সেই ১৮৪৮ সালে ফরাসি পার্লামেন্টে যথেষ্টসংখ্যক ফরাসি সমাজতন্ত্রী নির্বাচিত হন। তারা পাস করতে সক্ষম হন রাষ্ট্রীয় কারখানা আইন। ফ্রান্সে বিশেষ করে পারি শহরে খোলা হয় রাষ্ট্র পরিচালিত কারখানা। সেখানে বেকারদের প্রদান করা হয় কাজ। 
কিন্তু যেহেতু এই কারখানা ছিল সরকারি এবং এখানে ছিল না কারো চাকরি যাওয়ার ভয়, তাই এসব কারখানায় শ্রমিকেরা চায় না মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে। কিছু দিনের মধ্যে কারখানাগুলো হয়ে ওঠে শ্রমিকদের আড্ডাখানায়। কারখানাগুলো একেবারেই লাভজনক থাকে না। হতে থাকে শ্রমিকদের বেতনবাবদ রাষ্ট্রের অর্থের অপচয়। ফ্রান্সে প্রতিবাদ ওঠে এ রকম কারখানা গড়ার যৌক্তিকতা নিয়ে। পরবর্তী নির্বাচনে ফরাসি সমাজতন্ত্রীরা নির্বাচিত হতে পারেন না। ক্ষমতায় আসেন মধ্যপন্থী দল। তারা সিদ্ধান্ত নেন সরকারি কারখানা তুলে দেয়ার; কিন্তু শ্রমিকরা চায় না ওই সব কারখানা ছেড়ে চলে যেতে। ফলে সেনাবাহিনীকে চালাতে হয় গুলি। তিন দিনে পারি শহরে মারা যায় ১০ হাজার শ্রমিক। এত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছিল না ফরাসি বিপ্লবের সময়। আমরা আমাদের যুগে দেখলাম সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে আমলা পরিচালিত কলকারখানা ও যৌথ কৃষি খামারে উৎপাদন কমতে। ফলে সরকার পরিচালিত ওই অর্থনীতির পতন ঘটল।
চীনে কমিউনিস্ট পার্টি এখনো ক্ষমতায় আছে; কিন্তু চীনে পরিত্যক্ত হয়েছে সমাজতান্ত্রিক অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত অর্থনীতি। তারা অনুসরণ করছে পণ্য উৎপাদনে খরচ ও লাভের নীতি। পণ্য বিক্রি করে লাভ না হলে বন্ধ করে দিচ্ছে সেই কারখানার পণ্য উৎপাদন। রাষ্ট্রিক ভর্তুকি দিয়ে চালাতে যাচ্ছে না সেই কারখানা। কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত হয়েছে যৌথ ক্ষেত-খামারব্যবস্থা। কিন্তু আমাদের দেশে বাম চিন্তকেরা অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গড়ার। আর ভাবছেন দেশে উদার গণতন্ত্রের প্রবর্তনা, সেটি হতে দেবে না। বাংলাদেশে উদার গণতন্ত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এই বিশেষ মনোভাব। কথাগুলো আমি বলছি, কারণ আমাদের দেশে একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক এবং বাম ঘরানার অন্যতম ব্যক্তি বলে কথিত রেহমান সোবহানকে বলতে শোনা গেল ( প্রথম আলো, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭) যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রধান বাধা সৃষ্টি করছে ধনিকশ্রেণীর লোকে। তারা টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন। ফলে দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারছে না; কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কি তাই? 
আমাদের দেশের সব ধনিক এক রাজনৈতিক দল করেন না। যাদের টাকা নেই, যারা বিত্তবান নন, তারাও সবাই একদল করেন না। সুতরাং টাকার কারণে মুক্ত ভোট হচ্ছে না; ভোট কেনাবেচা হচ্ছে বলেই গণতন্ত্র হতে পারছে না প্রতিষ্ঠিত, এ রকম সিদ্ধান্তে আসার যুক্তি কতটুকু, সেটি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অনেক অনগ্রসর দেশে একজন ব্যাংকার যত সহজে টাকা দিয়ে ভোট কিনে ক্ষমতায় আসতে পারেন, তার চেয়ে অনেক সহজেই বিনা ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারেন একজন সেনাকর্মকর্তা। সাবেক পাকিস্তান আমলে সেনাকর্মকর্তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন, ব্যাংক মালিকেরা নন। বাংলাদেশ হওয়ার পরেও একাধিকবার হতে পেরেছে সেনাশাসন। যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তারা কেউই বিরাট ধনী ছিলেন না। তাই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথে ধনিকশ্রেণী হয়ে উঠেছে প্রতিবন্ধক; রেহমান সোবহানের এই থিসিস নিয়ে দেখা দিচ্ছে বড় রকমেরই প্রশ্ন। তার মতবাদ বাস্তবের সাথে মনে হচ্ছে না সঙ্গতিপূর্ণ।
ব্রিটিশ শাসনের প্রারম্ভে গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস (Warren Hestings) কলকাতায় ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপন করেন Asiatic Society of Bengal নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলা ভাষা খুব ভালো করে শিখেছিলেন। ফারসি ভাষাও ছিল তার সহজ আয়ত্তে। উর্দু ভাষাতে ছিল তার কাজচলা জ্ঞান। আরবি ভাষাও তিনি কিছু কিছু শিখেছিলেন। এর ফলে প্রাচ্যের ভাষা সম্পর্কে তার মনে সৃষ্টি হতে পেরেছিল বিশেষ কৌতূহল। এ ছাড়াও তিনি মনে করেন, ভারত উপমহাদেশ শাসন করতে হলে ব্রিটেনকে অর্জন করতে হবে এই উপমহাদেশের মানুষ ও তার ইতিহাস সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান। তাই এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করার জন্য তিনি স্থাপন করেছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল। এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন ইউলিয়াম জোন্স (William Jons পরে Sir)। 
উইলিয়াম জোন্স ছিলেন বহুভাষা জ্ঞাত একজন তুলনামূলক ভাষাতাত্ত্বিক। তিনি কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদ গ্রহণ করে এ উপমহাদেশে আসেন; কিন্তু লক্ষ্য ছিল প্রাচ্যের ভাষা ও ইতিহাস নিয়ে অনুসন্ধান করা। পর্তুগিজ অধিকৃত গোয়াতে ইতালি থেকে আগত ফিলিপস সাচেত্তি নামক একজন খ্রিষ্টান মিশনারি ভাষাতাত্ত্বিক প্রথম বলেন, গ্রিক, লাতিন ও সংস্কৃত ভাষা সম্ভবত একটি একই আদি ভাষা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। তাই এদের মধ্যে থাকতে দেখা যায় এত শব্দ ও অর্থগত মিল। উইলিয়াম জোন্সও আসেন অনুরূপ সিদ্ধান্তে। উইলিয়াম জোন্সের পর ভাষাতাত্ত্বিকেরা, এই আদি ভাষায় যারা কথা বলতেন তাদের নাম দেন উইরোজ (Wiros)। পরে জার্মান ভাষাতাত্ত্বিক ম্যাক্সমুলার (১৮২৩-১৯০০) ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত ভাষার অনুশীলন করে এই ভাষাভাষীদের নামকরণ করেন আর্য। তিনি বলেন, ঋক-বেদের ভাষা ছিল এ ভাষার খুব কাছাকাছি ভাষা। 
ম্যাক্সমুলার বলেন, একসময় আর্যরা বাস করত মধ্য এশিয়ার আইরিনা (Ariana) নামক ভূ-ভাগে। সেখান থেকে দিগি¦জয়ের মাধ্যমে আর্যরা ছড়িয়ে পড়েছিল নানা জায়গায়। এরা দিগি¦জয় করতে পেরেছিল ঘোড়ায় টানা রথ আবিষ্কার করার কারণে। এরা রথে চড়ে তীর-ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ দিয়ে জার্মান পণ্ডিতরা বলেন, জার্মানরা হলো খাঁটি আর্য। তাদের পক্ষে সম্ভব বিশ্বজুড়ে একটি রাজ্য স্থাপন; কিন্তু জার্মানরা আর আগের মতো নেই। এর কারণ, জার্মানিতে ইহুদিরা আছে। তারা জার্মানির সংগ্রাম স্পৃহাকে দিচ্ছে স্তিমিত করে। তাদের তাড়াতে হবে জার্মানি থেকে। ১৯৩৩ সালে এডলফ হিটলার জার্মানিতে চ্যান্সেলর হন। তিনি চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার পর জার্মান পার্লামেন্ট তাকে পাঁচ বছরের জন্য জার্মানির একনায়ক নির্বাচিত করেন। এ সময় জার্মানি তার পতাকা হিসেবে গ্রহণ করেন আর্যদের সোয়াস্তিকা চিহ্নিত পতাকা। জার্মানিতে এ সময় ইহুদি নির্যাতন ও হত্যা চরমে ওঠে। 
কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে ভাষা নিয়ে যে গবেষণা হয়েছিল, তা থেকেই পরে উদ্ভব হতে পেরেছিল আর্য মতবাদ, যা বিশেষ যুক্তি জুগিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। বর্তমানে ভারতে বিজিপি দলের পণ্ডিতরা বলছেন, আর্যরা বাইরে থেকে ভারতে আসেনি। ভারত থেকেই আসলে তারা সারা বিশ্বে ছড়িয়েছিল। উত্তর ভারত হলো আর্যদের আদি আবাসভূমি। ভারতীয় হিন্দুরা দুর্বল হয়ে পড়েছে মুসলমানদের কারণে। মুসলমানরা আর্য নন। তারা বাইরে থেকে ভারতে এসেছেন। তারা আসলে এ দেশে পরদেশী। তাদের ভারত থেকে করতে হবে বিতাড়িত। তাদের মনোভাব কতকটা হয়ে উঠেছে হিটলারের আমলের জার্মান পণ্ডিতদেরই মতো। আমি শুনেছি বাংলাদেশেও নাকি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে। এরা বাংলাদেশের ভাষা ও ইতিহাস নিয়ে কী ধরনের গবেষণা করছেন, আমার তা জানা নেই। তবে প্রতিষ্ঠানটির কথা আমি এ জন্যই উল্লেখ করছি যে, রেহমান সোবহান বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে বক্তৃতা করেছেন ঢাকায় বাংলাদেশের এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক আহূত এক সভায়।
রেহমান সোবহান অর্থনীতির খ্যাতনামা এমিরিটাস প্রফেসর বলে শুনেছি। আমি অর্থনীতি পড়েছি ব্যক্তিগত কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ্যাবিশারদ, রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে গ্রন্থ রচক জন্স স্টুয়ার্ট মিল (১৮০৬-১৮৭৩) তার অর্থনীতিবিষয়ক গ্রন্থ Principles of Political Economy তে বলেন যে, সম্পদের উৎপাদন নির্ভর করে প্রাকৃতিক নিয়মের ওপর; কিন্তু উৎপাদিত সম্পদের বিতরণ নির্ভর করে সমাজের নিয়মের ওপর। সামাজিক নিয়ম মানুষ তার প্রয়োজনে বদলাতে পারে; কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়ম পারে না। মানুষ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে উন্নত কৃতকৌশল আবিষ্কার করে। এক দেশের মানুষ আর এক দেশ থেকে উন্নত কৃতকৌশল শিখে তার নিজের দেশের আর্থিক উন্নয়নে প্রয়োগ করতে পারে। ঘটাতে পারে পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি। আসতে পারে তার আর্থিক সচ্ছলতা। 
আমরা বাংলাদেশের মানুষ পারছি অন্য দেশের কাছ থেকে কৃতকৌশল আমদানি করে আমাদের অর্থনীতিতে তা প্রয়োগ করতে। হচ্ছে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। আমি তাই হতাশাবাদী নই। প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মিলের বইটি প্রকাশ হয়েছিল ১৮৪৮ সালে। যে সালে প্রকাশিত হয়েছিল কার্ল মার্কস ও ফেডরিক এঙ্গেলসের সাম্যবাদীর ঘোষণাপত্র। মার্কস ও এঙ্গেলসের লেখা বিলাতের রাজনীতিকে প্রভাবিত করেনি, প্রভাবিত করেছে মিলের লেখা। মিল বিলাতে গণতান্ত্রিক দর্শনে যুক্তযোজন করেছেন। আমরা আমাদের গণতন্ত্রের ধারণা লাভ করেছি প্রধানত বিলাতের কাছ থেকে। এই ঐতিহ্যকে আমরা অনেক সহজেই অনুসরণ করতে পারি। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত আসলে চেয়েছে বিলাতের ঐতিহ্যকেই অনুসরণ করতে।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/280659