৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১:২০

১১ মাসে ৯৭৮৮৭ মাদক মামলা

দিন দিন বাড়ছে সর্বনাশা মাদকের ভয়াবহতা। হাত বাড়ালেই মিলছে নিষিদ্ধ মাদক। যুবকরা ঝুঁকছে সহজলভ্য   নেশার আসক্তিতে। অন্ধকার জগতে পা বাড়াচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রতিঘণ্টায় ১২টির বেশি মাদক মামলা দায়ের হচ্ছে। গড়ে আসামি হচ্ছে ১৫ জনের বেশি।

কেবল চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত গত ১১ মাসে সারা দেশে ৯৭ হাজার ৮৮৭টি মাদক মামলা হয়েছে। এতে আসামি হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০ জন। যার বিশাল সংখ্যাক আসামির সিংহভাগই হাতে-নাতে ধরা পড়া মাদকাসক্ত, বিক্রেতা ও চোরাকারবারি। আটকের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য জব্দ হলেও থামছে না অবাধ প্রবাহ।   
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সঞ্জয় কুমার চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাড়ছে খুব দ্রুত হারে। দেশের ১৭ থেকে ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে এখন ৭০ থেকে ৮০ লাখই বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। মাদকে প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা আরো বহুগুণ বেশি। তাছাড়া অপরাধের একটা বড় অংশই সংঘটিত হচ্ছে মাদকাসক্তদের দ্বারা। মাদকের পেছনে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বিপুল। লাগামহীন বিস্তার এখনই থামানো না গেলে চরম মূল্য দিতে হবে। 
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় মাদকের ভয়াবহতা এখন চরমে। প্রতি বছর ক্রমেই বাড়ছে মাদকের বিস্তার। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অভিযান ও মাদক মামলা। বাড়ছে আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যাও। কিন্তু কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। চলতি বছর প্রথম ১১ মাসেই মাদক মামলার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ওই সময়ে সারা দেশে মাদক মামলা দায়ের হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৮৭টি। যার অধিকাংশ মামলাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের অভিযানে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হয়। এ হিসাবে দেশের থানাগুলোতে প্রতিমাসে দায়ের হয় গড়ে ৮ হাজার ৮৯৮, দিনে ২৯৬ এবং প্রতি ঘণ্টায় ১২টির বেশি মামলা। গত ১১ মাসে দায়ের হওয়া প্রায় এক লাখ মামলায় আসামি হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০ জন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ১১ হাজার ৯৪, প্রতিদিন ৩৬৯ এবং প্রতিঘণ্টায় ১৫ জনের বেশি মানুষ মাদক মামলার আসামি হচ্ছে। হচ্ছে গ্রেপ্তার। যাচ্ছে জেলে। জামিনে ফিরে এসে আবার সেবন করছে। অতি মুনাফার লোভে আবার জড়াচ্ছে মাদক বেচা-কেনা ও চোরাচালানে। ফলে কমার পরিবর্তে চলতি বছর উল্টো মাদক মামলা ও আসামির সংখ্যা বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। 
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব এবং কোস্টগার্ডের দায়ের করা মাদক মামলা ও আসামির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। গত ৫ বছরের হিসাবই জানান দিচ্ছে পরিস্থিতির ভয়াবহতা। ২০১৩ সালে দায়ের হওয়া ৪০ হাজার ২৫০ মামলায় আসামি হয় ৪৭ হাজার ৫৩১ জন। ২০১৪ সালে ৫১ হাজার ৮০১ মাদক মামলায় আসামি হয় ৬২ হাজার ৮০ জন। পরের বছর ২০১৫ সালে মামলা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ১৩৪টিতে। এতে আসামি হন ৭০ হাজার ১৫৯ জন। গত বছরও অব্যাহত ছিল মামলা এবং আসামি বৃদ্ধির হার। ওই বছর ৯৯ হাজার ৭৩৯ মামলায় আসামি হন ৮৭ হাজার ১৪ জন। আর সর্বশেষ গত বছর মামলার সংখ্যা লাখের কাছাকাছি এবং আসামির সংখ্যা সোয়া লাখের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ মামলা হয়েছে অভিযানে মাদকসহ গ্রেপ্তার, তল্লাশিতে মাদক পাওয়া, সেবন, চোরাচালান, বেচা-কেনা ইত্যাদি ঘটনায়। ওই সময় কেবল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সারা দেশে ৩৬ হাজার ২৭৩টি মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালানা করে। এর মধ্যে মামলা দায়ের হয় ১০ হাজার ৬১৩। মামলাগুলোতে আসামি করা হয় ১১ হাজার ৫৬৭ জনকে। এর সিংহভাগই মাদকসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=98276&cat=2/%E0%A7%A7%E0%A7%A7-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A7%AF%E0%A7%AD%E0%A7%AE%E0%A7%AE%E0%A7%AD-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%95-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE