৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১:১৪

পাটুরিয়া রুটে ফেরি বন্ধ যাত্রী ভোগান্তি চরমে

ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে টানা ১২ ঘণ্টা পর ফেরি-লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হলেও একই কারণে শুক্রবার রাত ১০টায় তা আবারো বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রী ও যানবাহন লোডকৃত ‘কপোতী’ নামে একটি ফেরি মাঝ নদীতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ফেরি পারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে অনুরূপ অবস্থায় এ রুটের ছোট-বড় ১৮টির মধ্যে যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই ১১টি ফেরি মাঝ পদ্মায় অবরুদ্ধ ছিল। অন্য ফেরিগুলো ঘাটে নোঙর করে থাকে। এরই মধ্যে পাটুরিয়া ৪নং ঘাটে পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক ফেরি পন্টুনে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়ায় ঘাটটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে অন্তত ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানজট এড়াতে মহাসড়কের উথলী মোড় থেকে আরিচামুখী সড়কে ট্রাকের সিরিয়াল করা হয়। আটকে পড়া পরিবহন শ্রমিক-মালিকেরা পর্যাপ্ত শৌচাগার ও নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন। 
গত কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় বিশেষ করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি, লঞ্চ, কার্গো, নৌকা ইত্যাদি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এতে যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। আটকে পড়া যানবাহনের অগণিত যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাক-লরির মালিক-শ্রমিক চরম বিপাকে পড়ে। অন্য দিকে, এ রুটে বিআইডব্লিউটিসির সাতটি রো-রো ও ‘কপোতী’ নামে একটি কে-টাইপ ফেরিতে দুই বছর আগে ঘন কুয়াশায় চলতে সক্ষম ‘ফগ লাইট’ যন্ত্র লাগানো হয়। এতে সংস্থার প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু এনড্রয়েড নাইট ভিশন ক্যামেরা যুক্ত না করায় তা কোনো কাজে আসছে না। ফলে ঘন কুয়াশায় এসব ফেরি চলাচল করতে পারছে না। 
ভুক্তভোগীরা জানান, ঘাটে আটকে থাকা যাত্রীরা কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় প্রায়ই রাতে নানা সঙ্কটে পড়ে। পর্যাপ্ত শৌচাগার ও নিরাপত্তার অভাব অনুভূত হয়। ফেরি-লঞ্চের ক্যান্টিন ও ঘাট এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় নি¤œœমানের খাবার চড়াদামে কিনতে হয়। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় স্বল্প অর্থ নিয়ে বের হওয়া মানুষেরা নানা ভোগান্তিতে পড়ে।
এ দিকে এ রুটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস-কোচ, প্রাইভেট, মাইক্রোসহ অন্যান্য ছোট যানবাহন পারাপার করায় অল্প সংখ্যক ট্রাক-লরি পারাপার হচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে ট্রাক-লরি পৌঁছাতে না পারায় নানা সঙ্কট তৈরি হচ্ছে বলে চালক-মালিকেরা অভিযোগ করেন। 
ফেরি সেক্টর বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উভয় ঘাটে আটকে পড়া যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও যাত্রী ভোগান্তি হচ্ছে। বিশেষ বিবেচনায় এ রুটে ফেরির সংখ্যা বাড়নোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। 
শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ১০ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ১০ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মাঝ পদ্মায় ছয়টি ফেরিসহ নৌপথের সব ফেরি উভয় ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়। এ সময় প্রচণ্ড শীতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। কুয়াশার প্রকোপ কমলে গতকাল সকাল ১০টায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে ছয় শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে কুয়াশা বাড়তে শুরু করে। রাত ১২টায় প্রকোপ বাড়লে নৌ চলাচলের দিকনির্দেশনামূলক বাতি, মার্কিং পয়েন্ট অস্পষ্ট হয়ে উঠলে দুর্ঘটনা এড়াতে এ নৌপথের সব ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় মাঝ পদ্মায় ছয়টিসহ সব ফেরি উভয় ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়। প্রচণ্ড শীতে ফেরিতে আটকে পড়া যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পোহান। ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত বাথরুম, বিশ্রামাগার না থাকায় সারা রাত ঘাটে আটকে থেকে নারী ও শিশুরা পড়ে চরম দুর্ভোগে। সুযোগ বুঝে হোটেলগুলোয়ও খাবারের দাম দ্বিগুণ-তিন গুণ আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। গতকাল সকাল ১০টায় কুয়াশার প্রকোপ কমলে ফেরি চলাচল শুরু হয়। তবে দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় পাড়ে দূরপাল্লার অর্ধশত নৈশ কোচসহ ছয় শতাধিক যানবাহন আটকে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়।
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আবদুস সালাম বলেন, ঘন কুয়াশায় দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় বেশ কিছু যানবাহন আটকা পড়ে। যাত্রীবাহী পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স ও কাঁচামালবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছি আমরা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/280576