৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১:১১

গুম’ হচ্ছেন কারা এবং কিভাবে?

বিবিসি:  বাংলাদেশে নিখোঁজ এবং গুম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে সম্প্রতি তিনজনের সন্ধান মিলেছে। ২০১৭ সালে বিভিন্ন সময় নিখোঁজ ৫৫ জনের মধ্যে ১২ জন ফিরেছে বলে খবর পাওয়া যায়। নতুন তিনজনের মধ্যে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আলোচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক মোবাশ্বার হাসান এবং সাংবাদিক উৎপলকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে রাতের আঁধারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষের শিার্থী ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘সমাজকে যারা পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টা করেন বা ভূমিকা রাখেন তাদের একজন প্রতিনিধিকেই সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে পুরো কমিউনিটিতেই একটা আতঙ্ক কাজ করছে।’
মোহাম্মদ রায়হান বলছিলেন, ‘যারা ফেরত আসছেন বোঝা যাচ্ছে তারা নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। গুম হওয়ার আগের মানুষটার সঙ্গে ফিরে আসা মানুষটার আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা যায়। তাদের মোটিভ হচ্ছে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। আর এ েেত্র তারা কিছুটা হলেও আতঙ্ক আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে পেরেছে।’
এ বছর যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের পরিচয় থেকে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোক ভিকটিম হয়েছে। নিখোঁজ যারা হয়েছে তার মধ্যে একটা বড় অংশ হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এ ছাড়া ব্যবসায়ী, শিক, ছাত্র, সাংবাদিক, প্রকাশক, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকারসহ পেশাজীবারা নিখোঁজ হয়েছেন।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলছেন, বাংলাদেশে গত এক দশকে কমপে সাড়ে ৫০০ মানুষ গুম ও অপহরণের শিকার হয়েছেন।
‘একটা পরিবর্তন এসেছে ধরার েেত্র। আগে অধিকাংশ েেত্র পরিচয় দেয়া হতো আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর তরফ থেকে এসেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছি। পরে তাকে ডিনাই করা হতো এবং বাসা থেকে, অফিস থেকে, পরিচিত জায়গা থেকে, কোনো েেত্র রাস্তা থেকে অপহরণ করা হতো। সাম্প্রতিককালে আমরা ল্য করছি যে অপহরণ প্রক্রিয়ায় একটা পরিবর্তন এসেছে। সেটা হচ্ছে, অতি সংগোপনে এ কাজটি করা হচ্ছে যাতে কোনো সাী না থাকে, যাতে কোনো মানুষ স্যা দিতে না পারে।’
এ পরিবর্তনের পেছনে যুক্তি কী হতে পারে সেটি তুলে ধরে মি. লিটন বলেন, ‘এনফোর্সড ডিজএপিয়ারেন্সের ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের যে নিয়মকানুন আছে, কনভেনশনগুলো আছে সেখানে ধারা-উপধারায় যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা আছে সেই সংজ্ঞার মধ্যে যাতে এ বিষয়গুলো না পড়ে এ ধরনের একটা প্রবণতা ল্য করছি কৌশল হিসেবে গ্রহণ করার।’
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বাংলাদেশে গুম পরিস্থিতির একজন পর্যবেক। অপহরণ কিংবা গুমের শিকার হয়ে জীবিত ফিরে আসা অন্তত ২০ জনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তিনি কথা বলেছেন। 
মি. লিটন বলছেন, ‘এখন যারা ফিরে আসছেন তারা প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন এবং তাদের বক্তব্যে এক ধরনের ভীতির ছাপ আছে। বডি ল্যাংগুয়েজ এক ধরনের বার্তা দেয় যে এখনো তারা মুক্তভাবে কথা বলতে পারছেন না। এই বার্তাটি পড়া যায় তাদের বাহ্যিক আচরণে এবং তারা যেসব কথাবার্তা বলেন সেগুলো খাপছাড়া। কেউ কেউ প্রথমে যে কথাগুলো বলেন পরে সে জায়গা থেকে সরে আসেন। তার মানে হচ্ছে এমন একটা গোষ্ঠী বা এমন একটা গ্রুপ এর সাথে জড়িত তারা আমাদের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’
এ দিকে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের হিসাবে গত দশ বছরে সাড়ে ৫০০ মানুষ নিখোঁজ বা গুম হয়েছেন। নিখোঁজ এসব মানুষের পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে তাদের যে ক্যাটাগরি সেখানে দেখা যায়, কাউকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। কয়েকজনকে ডিবি অফিসে পাওয়া গেছে। হারিয়ে যাওয়া মানুষকে কারাগারে প্রেরণ করার তথ্য রয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরবর্তীতে রথ্যাব হাজির করেছে। এ ছাড়া অপহরণ বা গুমের শিকার বেশ কয়েকজনকে পরে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গুমের ঘটনায় প্রায় সবেেত্রই কোনো না কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে পুলিশের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন্স সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একমাত্র ডিবি সাদা পোশাকে গ্রেফতার করে থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউনিট এবং থানা এ বিষয়টি অবগত থাকে। তবে পুলিশের কোনো সদস্য ক্রাইমের উদ্দেশ্যে ডিবি পরিচয়ে যদি কিছু করে থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এরকম ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে।’ 
তবে মিস ফেরদৌস বলছেন, অন্য কোনো বাহিনী বা ডিবির নামে কেউ যদি এরকম কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে তার দায় পুলিশ নেবে না।
বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের কারা ধরে নিচ্ছে বা কোথায় রাখা হচ্ছে তার কোনো স্পষ্ট জবাব মেলে না কখনোই। এ কারণে উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।
নূর খান লিটন বলেন, ‘সব কিছু দেখে যারা গুম করছেন বা অপহরণ করছেন তারা দ, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে তাদের সেইফ হাউজ আছে। যে ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন এবং যে ধরনের পারিপার্শ্বিকতা আমরা ল্য করছি সেখানে আমাদের সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে চলমান ইনভেস্টিগেশনের অংশ হিসেবে তাদের অপহরণ করা হচ্ছে কি না’।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/280565