২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৯:১৩

দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগের স্তূপ

চট্টগ্রাম মেডিক্যালে বেড়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জনবল স্বল্পতায় সেবা কার্যক্রমের বেহাল অবস্থা। দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি এই হাসপাতাল নিয়ে দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগের স্তূপ পড়েছে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রমে হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা দিয়েছে। একজন পরিচালক ও তিনজন সহকারি পরিচালক দিয়ে চট্টগ্রামের বৃহত্ সরকারি এই হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৩৫০ শষ্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারেরও বেশি রোগী চিকিত্সাধীন থাকে। এসব রোগীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ২০ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার প্রয়োজন। বর্তমানে ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলচ্ছে প্রসাশনিক কর্মকান্ড। ঔষধ চুরি, সেবা নিয়ে পদে পদে হয়রানি, কেনাকাটায় দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। সঠিক তদারকির না থাকায় হাসপাতালের এক হাজার কোটি টাকার জমি বেহাত হয়ে গেছে। এসব বিষয় নিয়ে নিম্ন আদালতে দুটি ও উচ্চ আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আশি একর হাসপাতালের জায়গার চারপাশে কোন নিরাপত্তা বেষ্টনি নেই। বেহাত হওয়া জমি নিয়ে মামলা পরিচালনা ও জমি তদারকির জন্য আলাদা কোন কর্মকর্তা নেই। নেই নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কম জনবল কাঠামো দিয়ে এত বড় হাসপাতাল সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব নয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, ‘হাসপাতালের জনবলের কাঠামো ও প্রযোজনীয়তা তুলে ধরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মকর্তা পদায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করা না হলে একটি সুন্দর ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।’

সূত্র জানায়, হাসপাতালে দৈনিক ২ হাজারের বেশি রোগীর জন্য খাবার তৈরি করতে হয়। এসব খাবার টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিনতে হয়। কিন্তু এসব কাজ দেখাশুনার জন্য কোন কর্মকর্তা নেই। কোটি কোটি টাকার ঔষধ কেনা হচ্ছে। দানের ঔষধও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তুএসব ঔষধ তদারকি হচ্ছে না। রোগীরা পাচ্ছে না ঔষধ। স্টোর থেকে ওয়ার্ডে পৌঁছার মধ্যেই ঔষধ চুরি হয়ে যাচ্ছে। সিনিয়র স্টোর অফিসারের একটি পদ রয়েছে। এই পদে কোন স্থায়ী লোক নেই। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্ককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তার কোন অভিজ্ঞতা নেই। অথচ কোটি কোটি টাকার বিশাল কাজটি তদারকির জন্য একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ সৃজন করা প্রয়োজন।

হাসপাতালে হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে। অনেক যন্ত্রপাতি অচল। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা নেই। কর্মচারী দিয়ে তদারকির কাজ করানো হচ্ছে। এতে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। হাসপাতালে ৪০০ টয়লেট রয়েছে। এগুলো পরিষ্কার পরিচ্চন্ন কাজ মনিটরিংয়ের জন্য কোন কর্মকর্তা নেই। হাসপাতালের বৈদ্যুতিক ও মেরামত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্থায়ী ২ জন সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। হাসপাতাল থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট দিতে হয়। হাসাপাতাল থেকে অনেক সময় রোগী পালিয়ে যায়। ফলে পালিয়ে যাওয়া রোগী নিয়ে মামলা হচ্ছে। নোটিশের জবাব দিতে হচ্ছে আদালতের। এসব বিষয় দেখাশুনার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা নেই। জানা যায়, হাসপাতালে প্রায় ১১শ’ চিকিত্সক, ১ হাজার নার্স ও প্রায় ৮০০ কর্মচারী রয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে কর্মরত একজন উপ-পরিচালক ও ২ জন সহকারী পরিচালক দিয়ে এতসব কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা একেবারে অসম্ভব। আবার উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদে যাদের হাসপাতালে পদায়ন করা হয় তারা এলপিআরে যাওয়ার কয়েক মাস আগে যোগদান করেন। হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা থাকে না। ফলে হাসপাতালে বছরের পর বছর কর্মরত কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি থাকে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে বিভিন্ খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। সম্প্রতি দুদকের জরিপে নানামুখী দুর্নীতি তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের গণশুনানিতে ভুক্তভোগীরা চট্টগ্রাম মেডিকেলের বিভিন্ন অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেছেন। দুদক আগামী ৩ মাসের মধ্যে প্রাপ্ত অভিযোগ নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সময় বেধে দিয়েছে।

 

http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2017/12/29/141449.html