২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৯:০৪

কেন্দ্র দখল কারচুপি ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন

চর দখলের মতো ভোট কেন্দ্র দখল, কারচুপি, মারধর, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, ভোটদানে বাধাদান, জাল ভোট প্রদান এবং আগাম নৌকা ব্যালটে সিল মারাসহ ব্যাপক অনিয়ম, আতঙ্ক সৃষ্টি, প্রতিপক্ষের এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির প্রার্থীরা এই কারচুপি ও দখলবাজের জন্য নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রেজাউল করিম রাসেল,কুমল্লিা অফিস: সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কেন্দ্র দখল, পথে পথে ভোটারদের বাধা প্রদান, বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্টদের মারধর, ভয় দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, জাল ভোট প্রদান এবং নৌকার ব্যালটে আগাম সিল মারাসহ নানা অভিযোগ এনে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার ১০ জন ও লাকসাম উপজেলার ৪ জনসহ বিএনপি –জামায়াত সমর্থিত ১৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উভয় উপজেলায় পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে এসব প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এসময় সংশ্লিষ্ট উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা এসব ইউনিয়নে পুন:ভোট গ্রহণের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিকট দাবি জানান।

সম্মেলনে বিএনপির ভোট বর্জনকারী চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকেই অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র দখলে নেয় সরকার দলীয় নৌকার সমর্থকরা। এর আগে রাতেই অনেক ভোট কেন্দ্রে নৌকার ব্যালটে সিল মারা হয়। এছাড়া অধিকাংশ কেন্দ্রে সকালে বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রের গেইট থেকেই বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকার ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়। এতে প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ভোট বর্জনকারী চেয়ারম্যানরা হচ্ছেন নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন, আদ্রা উত্তর ইউনিয়নে মাহবুবা আক্তার, বটতলী ইউনিয়নের গোলাম মাওলা, দৌলখাঁড় ইউনিয়নের মো. মোশারফ হোসেন, জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নের শফিকুর রহমান চৌধুরী, জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের শাহজাহান মজুমদার, রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের মো. ইদ্রিস মিয়া ও রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং লাকসাম উপজেলার মুদাফফরগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের মো. শাহ আলম, মুদাফফরগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের মো. আবুল বাশার, বাকই দক্ষিণ ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন ও বাকই উত্তর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, অধিকাংশ কেন্দ্রে নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা নিজেই প্রকাশ্যে ভোট দিয়েছেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে নাঙ্গলকোট উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত ২ চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। উপজেলার রায়কোট দক্ষিণের মাগফুজুর রহমান ও আদ্রা ইউনিয়নের সাইফুল্লাহ ভোট বর্জন করেছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানান, নির্বাচন চলাকালে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তবে সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

হামলায় ৩ সাংবাদিক আহত, অস্ত্র উদ্ধার :
এদিকে, ভোট চলাকালে দুপুরে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের টামটা ঈদগা মাদরাসা ও টামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায় চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের লোকজন। হামলায় দীপ্ত টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি শাকিল মোল্লা, বিজয় টিভির আলাউদ্দিন আজাদ ও ক্যামেরাপার্সন জাহাঙ্গীর আলম আহত হয়। এসময় গাড়ি ও ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ কেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে একই উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের নারান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের অদূরে রাস্তার পার্শ্ব থেকে পুলিশ চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রাম দা, ছুরি, হকিস্টিক, বেজবলসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি-সোটা উদ্ধার করেছে। পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল আহসান জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জেলার চার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের সাধারণ নির্বাচন এবং তিনটি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী সংবাদদাতা: কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া, ফাঁকা গুলী, হুমকি-ধামকি সহ নানা অনিয়মের অনিয়মের অভিযোগ এনে নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর, নোয়াখালী ও নোয়ান্নই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ও বিকেলে পৃথক পৃথক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি’র প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

নোয়াখালী ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরনবী বাবুল অভিযোগ করেন বলেন, বিএনপির ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আতাউর রহমান নাছেরের নৌকা মার্কায় সিল দিয়ে একতরফা ভোট গ্রহণ করার অভিযোগে সকাল ১১টার দিকে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন সাংবাদিকদের সামনে।
এদিকে, নোয়ান্নই ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় প্রার্থী টি হোসেন লিখিত অভিযোগে জানান, এজেন্টরা ভয়-ভীতির কারণে তার সাথে সার্বিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ায় বুধবার বিকেলেই তিনি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
অপরদিকে, ধর্মপুরে ধানের শীষের প্রার্থী অলি উদ্দিন মিলন অভিযোগ করেন বলেন, সকাল ৮টার দিকেই বাংলা বাজার, মধ্য ধর্মপুর, স্বাধীন গ্রাম, পূর্ব ভাটিরটেক, মধ্য ভাটিরটেক, পূর্ব শুল্লুকিয়া, উত্তর ওয়াপদা কারামতিয়া মাদ্রাসা ও চর দরবেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তার এজেন্টদের জোর করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বের করে দেয়।

এসময় আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ছিদ্দিকুর রহমান সাবুর চশমা মার্কার ব্যালেটে সিল দিয়ে বাক্স ভর্তি করে তারা। ভাটিরটেক স্বাধীন গ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সন্ত্রাসীদের ফাঁকা গুলির শব্দে সাধারণ মানুষ দিকবিদিক হারিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে।
মিলন আরো অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাতেই আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসারদের কাছে মোটা অংকের বখশিশ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দলীয় কর্মীদের অবাধ তান্ডবে সহযোগিতা করার জন্যে। তার প্রতিটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করেই আওয়ামীলীগ ক্ষন্ত হয়নি। তার কর্মী-সমর্থদের এলাকা ছাড়া করতে পুলিশ পাঠিয়ে প্রায় বিএনপির লোকজনের বসতিতে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, পুলিশী টহল নির্বাচনী শৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষেরই কাজ। পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলার রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলো।

http://www.dailysangram.com/post/313039