২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৫৫

সিসার নামে তামাক সেবন নতুন ফ্যাশন

শাহ্ আব্দুল হান্নান


আমি বিভিন্ন সময় সিগারেট এবং বিড়ির ব্যবহারের বিরুদ্ধে লিখেছি। আমি আজকালের শ্রেষ্ঠ আলেমদের মন্তব্য উল্লেখ করে বলেছি, সিগারেট ও তামাকের খারাপ দিকগুলো স্পষ্ট হওয়ার পর তা ব্যবহার বৈধ হওয়ার সঙ্গত কোনো কারণ নেই। তাদের মতে, সিগারেট পান হারাম। আগের আলেমরা সিগারেট বা তামাকের খারাপ প্রভাব ভালো করে জানতেন না।

দেশে সিগারেট ও তামাক ব্যবহারবিরোধী আন্দোলন কিছু-না-কিছু কাজ করছে। যদিও সামাজিক আন্দোলন হিসেবে এটা এখনো দুর্বল। ছাত্র সংগঠনগুলো সিগারেটবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে পারে। সব ইসলামি সংগঠন এটিকে তাদের সমাজসেবা প্রোগ্রামের অংশ বানাতে পারে এবং প্রত্যেক মাসে এক দিন এ ব্যাপারে গণসংযোগ করতে পারে। বাস্তবে সিগারেট ও তামাক ব্যবহার বাড়ছে। এখন এটি মেয়েদের মধ্যেও ব্যাপক হচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সেøাগান ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য তিকর’ কোনো কাজেই লাগেনি। তাদের এ ধরনের দুর্বল চেষ্টায় কিছুই হবে না। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বাস্তবতা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।
ঢাকায় তামাক ব্যবহার বাড়ানোর জন্য এক নতুন ফ্যাশন উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমার এক ছাত্র জানাল, কেবল ঢাকা শহরেই অনেক সিসা পার্লার খোলা হয়েছে। এসব পার্লার বা কেন্দ্র ৫০টি হতে পারে। ‘সিসা’ হচ্ছে বাংলাদেশী বা ভারতীয় হুক্কার আরবি নাম। হুক্কা প্রথমত মোগল যুগে ইরান থেকে ভারতে আসে। এখন তা কোনো কোনো আরব দেশে এবং উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্য দেশের কথা জানি না, তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমি আতঙ্কিত।
সিসা পার্লারে খাবার পাওয়া যায় এবং সিসা ব্যবহারের সুযোগ থাকে। এতে হুক্কার ব্যবহার করা হয়। হুক্কার মাথায় তামাক থাকে এবং নানা গন্ধজাতীয় দ্রব্য থাকে। হুক্কার নিচ অংশে পানি থাকে। হুক্কার নল থাকে। ছেলেমেয়েরা এ নলের সাহায্যে তামাকের স্বাদ পানির ভেতর দিয়ে নিয়ে থাকে।
আমার ছাত্রী জানাল, সিসা ব্যবহার যথেষ্ট প্রিয় হচ্ছে। সে ঈদের দিন এক বান্ধবীসহ বেড়াতে যায়। তার বান্ধবী বলে সিসা ব্যবহার করবে। তাতে খরচ হয় ৬০০ টাকা। ব্যাপার দেখুন। একবার হুক্কার ব্যবহার করার খরচ ৬০০ টাকা। এতে মেয়েরা ছেলেদের মতোই আসক্ত হচ্ছে।

বাবা-মায়েদের হলো কী? তারা কি তাদের ছেলেমেয়েদের খবর রাখছে না? সিসার তি তামাকের তির চেয়েও বেশি।
তামাকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু করা দরকার। এ ব্যাপারে শিক ও অভিভাবকদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এসব সিসা পার্লার বন্ধ করতে পারে কি না, জানি না।
বর্তমান আইনে যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে আইনে সংশোধন আনা দরকার। দৈনিক পত্রিকাগুলোয় এ বিষয়ে সচেতনামূলক রিপোর্ট প্রকাশ করা দরকার। তামাকবিরোধী অভিযানে পত্রপত্রিকার ভূমিকা অনেক বড়। শহরাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সিসা নামে তামাক ব্যবহার বেড়ে যাওয়া রোধ করতে হবে। এ হচ্ছে নতুন নামে পুরনো তিকর জিনিস চালু রাখা।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/280401