১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:২৩

এমপিও নীতিনির্দেশিকায় ব্যাপক সংশোধনী আসছে

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সরকারি অংশ বা মান্থলি পে-অর্ডার (এমপিও) নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার জট অবশেষে খুলতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শিক্ষা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে এ নিয়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে এমপিও নীতিমালার যে নির্দেশিকা রয়েছে তার ব্যাপক সংশোধনী আনা হবে। এর কাজও শুরু হয়েছে। ২০১০ সালের পর থেকে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধ রয়েছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের অব্যাহত চাপ ও দাবির মুখে এরূপ সিদ্ধান্ত আসছে। তার আগে এমপিওর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বিপণনবিষয়ক শিক্ষকেরা। প্রতিটি বিদ্যালয়ে এ বিষয়ে একজন করে শিক্ষক এমপিওর তালিকায় যুক্ত হবেন।

চলতি অর্থ বছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে এ খাতে (নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তি) একটি টাকাও বরাদ্দ নেই। তার পরও এ খাতে চলতি অর্থবছরেই থোক বরাদ্দ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি জানিয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া শর্ত ও যোগ্যতার আলোকেই এ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে সারা দেশে যে সংখ্যক (এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার) শিক্ষক এমপিও পেয়ে থাকেন, তাতে বছরে পাঁচ হাজার ৩৫৫ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫০ টাকা (নতুন পে-স্কেলের হিসাব অনুসারে) খরচ হচ্ছে। এমপিওর বাইরে রয়েছে আরো সাত হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (নন-এমপিও)। এত বিপুল রাজস্ব ব্যয় এবং অর্থ বিনিয়োগের পরও এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশ্ন রয়েছে। খোদ অর্থমন্ত্রীরই রয়েছে প্রবল আপত্তি।

অপর দিকে, এমপিওর নীতিমালা ও নির্দেশিকায় সংশোধনী আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রওনক জাহানকে আহ্বায়ক করে গঠিত ছয় সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেনÑ কারিগরি অধিদফতরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস, মাদরাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: বিলাল, যুগ্ম সচিব (মাদরাসা) এনামুল হক, যুগ্ম সচিব (কারিগরি) সফিউদ্দিন আহমেদ এবং উপসচিব ওয়াদুদ হোসেন। কমিটিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে।

এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ ডিসেম্বর সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বিপণন শিক্ষকদের এমপিওর তালিকায় আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এমপিওর নির্দেশিকায় প্রতিটি স্কুলে বর্তমানে যেসব শিক্ষক এমপিওভুক্ত রয়েছেন, তার অতিরিক্ত বেশ কিছু বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিধান যুক্ত করা হবে। শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণীতে যেসব নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে সেসব বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ এবং তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে। বিষয়গুলোর অন্যতম হচ্ছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং লাইব্রেরিয়ান। এ ছাড়া যে বিষয়গুলোতে গুচ্ছ শিক্ষক বিদ্যমান, সেসব বিষয়েও প্রতিটির জন্য শিক্ষক নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হতে পারে। সূত্র জানায়, বর্তমানে গুচ্ছ শিক্ষকেরা স্কুলে বাংলা, সমাজবিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের ক্লাস নিয়ে থাকেন। এতে করে শ্রেণীকক্ষে গুণগত পাঠদান কতটুকু নিশ্চিত হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা। তাই এমপিওর নির্দেশিকার সংশোধনীতে ওই বিষয়গুলোর জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগের বিধানযুক্ত করা হবে। কোনোটি না হলে অন্তত ইংরেজির জন্য অবশ্যই আলাদা শিক্ষক নিয়োগের বিধান রাখা হবে।

সূত্রে আরো জানা গেছে, নতুন বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ অনুমোদনের ব্যাপারে শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির প্রয়োজন হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্র জানায়, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার মান নিশ্চিত করতেই এসব পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। এ পদগুলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বা সম্মতির প্রয়োজন নেই।

অপর দিকে, এখন থেকে শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীনে নতুন নীতিমালা এবং নিয়োগ কমিশনের তদারকিতেই শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদগুলোতে স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সুযোগ পাবে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন শুধু চাহিদা জানাবে স্থানীয় জেলা শিক্ষা অফিসকে। চাহিদার আলোকে এনটিআরসিএ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। তারই ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
অপর একটি সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়োগে এখন থেকে শিক্ষকের বয়স সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। বর্তমানে এমপিভুক্ত শিক্ষকদের বয়সের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। বিষয়টি এমপিও নির্দেশিকার সংশোধনীতে সংযুক্ত করা হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/277700