১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:১৪

জেরুসালেম : ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায়

এম সাখাওয়াত হোসেন


মধ্যপ্রাচ্য অশান্ত হয়ে রয়েছে বিগত ৭০ বছরের ওপর। এ অশান্তির সূচনা ১৯৪০ সালে, যখন চূড়ান্তভাবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির সরকার ১৯১৭ সালের এক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেÑ যা ইতিহাসে ‘বেলফোর ডিক্লারেশন নামে পরিচিত’। ১৯১৭ সালে ওয়াল্টার রথসচাইল্ড, ব্রিটিশ ব্যাংকার, রাজনীতিবিদ, আর্থার বেলফোর, রাজনীতিবিদ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী (১৯০২-১৯০৫) ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯১৬-১৯১৯), লিও এমরি, কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য এবং নট মিলনার ঔপনিবেশিক এডমিনিস্ট্রেটর মিলে যে ঘোষণাপত্র তৈরি করেন তারই প্রেক্ষাপটে ঘোষিত হয়েছিল বেলফোর ডিক্লারেশন। এর মাধ্যমে ইহুদিদের জন্য ব্রিটিশদের দখল করা ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এ ঘোষণা সদ্য স্বাধীন হওয়া এবং দখল করা ফিলিস্তিনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

এরপর সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে ১৯৪৮ সালে ডেভিড বেন গোরিয়ন ইসরায়েলি রাষ্ট্রের ঘোষণা করেন। এ ঘোষণা আসে ১৯৪৭ সালে জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্র ১৮১ এর প্রেক্ষাপটে। ওই ঘোষণাপত্রে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে দু’টি রাষ্ট্রÑ ইহুদি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে জাতিসঙ্ঘের অধীনে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তেমনটি থাকেনি। মে ১৪, ১৯৪৮ সালে ডেভিড বেন গোরিয়ন সীমান্ত চিহ্নিত হওয়ার এবং ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে বলে ঘোষণা দিলে আরব বিশ্বসহ সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রথমেই এ ইহুদি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন হ্যারি এস ট্রুম্যান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করায় দেশটি সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্র আর স্বাধীনতার প্রতীক হওয়ার পথে ছিল।
ইসরাইলের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা এবং জাতিসঙ্ঘের ‘হঠকারিতা’ মেনে নিতে পারেনি ওই সময়ের আরব রাষ্ট্রগুলো, সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত মুসলমান প্রধান দেশ ও জনগোষ্ঠী। মে ১৫, ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষণার একদিন পরই মিসর, সিরিয়া, জর্ডান, ইরাক আর লেবানন সরাসরি হামলা করে। অপর দিকে, সহায়ক হিসেবে সৌদি আরব ও ইয়েমেন সমর্থন জোগায় যুদ্ধ উপকরণ ও সৈনিক দিয়ে। এসব দেশ আরব লিগের অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রধান সামরিক শক্তি ছিল মিসর, জর্ডান, ইরাক এবং সিরিয়া। লেবানন একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল মাত্র।
ওই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই আরব লিগের যুদ্ধরত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐক্য ভঙ্গ হয়েছিল। যুদ্ধের সার্বিক অধিনায়কত্ব নিয়ে মিসর ও জর্ডানের মধ্যে বেশ মতপার্থক্য দেখা দেয়। জর্ডানের সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিদ্যায় মিসরের সামরিক বাহিনীর চাইতে এগিয়ে ছিল। ওই যুদ্ধের ফলে জর্ডানের বাহিনী সমগ্র পশ্চিমতীর এবং পূর্ব-জেরুসালেম, যেখানে বিশ্বের প্রধান তিন ধর্মেরÑ ইসলাম, খ্রিষ্টান এবং ইহুদিদের পবিত্র স্থানগুলো জর্ডানের দখলে আসে। বাকিটুকু ইসরাইলের দখলে এবং শুধু গাজা ভূখণ্ড মিসরের দখলে চলে যায়। ইসরাইল রাষ্ট্র হিসেবে শুধু টিকেই যায়নি বরং জাতিসঙ্ঘের সীমানা লঙ্ঘন করে ইসরাইল পরিসর বাড়িয়েছিল।

ওই সময় লেবানন ছাড়া প্রতিটি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রই ছিল রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়। ওই সময়ের এবং সামরিক ইতিহাসের তথ্যে প্রকাশিত হয়, ওই যুদ্ধে জর্ডান শুধু সমগ্র জেরুসালেমেই দখল করার পরিস্থিতিতেই নয় বরং ওই সময়ের ইসরাইলের বেশির ভাগ দখল করার মতো ক্ষমতা ছিল। তৎকালীন ইসরাইলের নেতারাও এমন ধারণা করতেন। ওই সময়ে মিসরের রাজা ছিলেন ফারুক, জর্ডানের প্রথম আবদুল্লাহ এবং ইরাকে ছিলেন দ্বিতীয় ফয়সল। যিনি প্রথমে সিরিয়া পরে ইরাকের শাসক হয়েছিলেন এবং জন্মসূত্রে ছিলেন আবদুল্লাহর ভাই।
যা হোক, বিভিন্ন ইতিহাস এবং তথ্যে প্রকাশ, ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার কয়েক দিন আগে ইহুদি সংগঠনের তৎকালীন পলিটিক্যাল বিভাগের প্রধান ও পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারের সাথে আম্মানে আবদুল্লাহর গোপন আলোচনা হয়েছিল। এর আগে নভেম্বর ১৯৪৭ সালে জর্ডান নদীর তীরে প্রথম তাদের মধ্যে গোপন আলোচনা হয়েছিল। ইহুদিরা জানত, স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই সম্মিলিত আরব বাহিনী যুদ্ধ ঘোষণা করলে নব গঠিত ইসরাইল হয়তো টিকবে না। তথ্যে প্রকাশ, প্রথম আবদুল্লাহ সমগ্র ফিলিস্তিন দখল করে ইহুদিদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানানোর প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জাতিসঙ্ঘ নির্ধারিত ইসরাইলের কথিত সীমানার বাইরে ফিলিস্তিনের বাকি অংশ জর্ডান দখল করে নেবে, তাতে ইসরাইল বাধা দেবে না। এরই প্রেক্ষাপটে জর্ডান জেরুসালেম পর্যন্ত দখলের পর আর অগ্রসর হয়নি। আবদুল্লাহর এ হটকারিতা তার নেতৃত্বে থাকা সামরিক বাহিনীর অনেকে মানতে পারেননি। আবদুল্লাহকে উৎখাতের প্রচেষ্টাও হয়েছিল। অবশেষে প্রথম আবদুল্লাহ ২০ জুলাই ১৯৫১ আল-আকসা মসজিদের সামনে মোস্তফা সুকরি আমুসু নামে এক ফিলিস্তিনি যুবকের হাতে নিহত হন। ওই হত্যাকান্ডের কিশোর বয়সের সাক্ষী ছিলেন বাদশা হুসেইন বিন আবদুল্লাহ।
ওই যুদ্ধের জের হিসেবে সমগ্র আরব বিশ্বে, বিশেষ করে চারটি দেশ, মিসর, জর্ডান, ইরাক আর সিরিয়ায় সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছিল। মিসর, সিরিয়া এবং ইরাকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সোসালিস্ট শক্তি বলে কথিত বামপন্থীদের উত্থান ঘটে। তবে জর্ডানে রাজতন্ত্র অব্যাহত থাকলেও বাদশাহ হুসেইন যথেষ্ট সতর্কতার সাথে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিলেন। অবশেষে পশ্চিম তীর ও জেরুসালেম, অপর দিকে গাজাভূমির পুরো অঞ্চল ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল দখল করে নেয়। পুনরায় গঠিত সম্মিলিত আবর বাহিনী, যার নেতৃত্বে ছিল মিসর, পরাজিত হলে সম্পূর্ণ অঞ্চল পুনর্দখল করে।
বর্তমানে গাজায় এবং পশ্চিম তীরের অংশে হামাস ফিলিস্তিন অথরিটিকে সীমিত শাসনের ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও বিতর্কিত পশ্চিম তীরের বহু অংশে বিশেষ করে পুরো জেরুসালেম ইসরাইলিরা দখলে রেখে ইহুদিদের পুনর্বাসন করেছে। পুরনো জেরুসালেমের বর্ধিতাংশে ইসরাইলিরা শহর বাড়িয়েছে।

জেরুসালেম দখলে নিলেও ইসরাইলের জন্মলগ্ন হতে রাজধানী তেল-আবিবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তথাপি ধর্মগ্রন্থ মোতাবেক কিং ডেভিডের (নবী দাউদ আ:) ইসরাইল রাষ্ট্রের রাজধানী জেরুসালেমকেই আধুনিক ইসরাইলি রাষ্ট্রের রাজধানী করার ইচ্ছা লুকিয়ে রাখেনি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। ১৯৮০ সালে ইসরাইলি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনে জেরুসালেমের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য ‘জেরুসালেম ল’ পাস করেছিল। তখন থেকেই ইসরাইল কর্তৃপক্ষ পুরো জেরুসালেম শুধু দখলই করেনিÑ এর প্রশাসনকেও শক্তিশালী করেছে। বস্তুত পক্ষে, দখল করা শহর জেরুসালেম ইসরাইলের রাজধানী হিসেবেই ক্রমান্বয়ে বেড়ে উঠেছে। অধুনা ইসরাইলের ইহুদিবাদী প্রতœতত্ত্ব ও ইতিহাসবিদেরা নিশ্চিত করেছেন, খ্রিন্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত কিং সলোমনের (বাদশা সোলায়মান) তৈরি উপাসনালয়টি ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সেখানেই ওই শতাব্দীতে আরেকটি উপাসনালয় তৈরি করা হয়েছিল, যা খ্রিষ্টের জন্মের প্রথম শতাব্দীতে রোমানেরা ভেঙে ছিল। বর্ণিত ওই জায়গাটির নাম ছিল টেম্পল মাউন্ট। আর সেখানেই সপ্তম শতাব্দীতে মুসলিম শাসক আবদুল মালিক আজকের ‘ডোম অব রক’, যার অন্য নাম ‘ওমরের মসজিদ’, তৈরি করেছিলেন। ‘ডোম অব রক’-এর নিচেই সলোমনের তৈরি উপাসনালয়ের একটি দেয়াল রয়েছে। ওখানে উন্মুক্ত ‘যায়নাগগ’ যার নাম ‘ওয়েলিং ওয়াল’ ইয়াহিুদি ধর্মের সবচাইতে পবিত্র স্থান। ইসরাইলিরা এখানেই তৃতীয় উপাসনালয় তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে। কাছেই খ্রিষ্টানদের মহাপবিত্র গির্জা, যেখানে যিশু খ্রিষ্টকে ক্রশ বিদ্ধ করা হয়েছিল। কাজেই এ জায়গাটি নিয়ে তিনটি ধর্মের মধ্যেই হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিযোগিতা আর সঙ্ঘাত ছিল এবং বিদ্যমান রয়েছে। একে ঘিরেই ১৬টি ক্রুসেড সংঘটিত হয় খ্রিষ্টান আর মুসলমানদের মধ্যে।

জেরুসালেমকে ঘিরে যত ধর্মযুদ্ধ আর রক্তপাত হয়, তা বিশ্বের আর কোনো ভূ-খণ্ড নিয়ে বা ভূখন্ডে হয়নি। চার হাজার বছর ক্রমাগতভাবে যুদ্ধ আর রক্তপাত ঘটছে, যা আজো চলছে। ফিলিস্তিনিদের দু’টি অভ্যুত্থান বা ইনতিফাদা এ জায়গাকে ঘিরেই হয়েছিল। এখনো থেকে থেকে সংঘর্ষ চলছে।
জাতিসঙ্ঘের ‘দুই রাষ্ট্র নীতি’ ও ঘোষণা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতায় ছিল এবং এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সে প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ১৯৯৫ সালে জেরুসালেমে দূতাবাস স্থাপন করার জন্য বিল পাস করেছিল। কিন্তু কোনো প্রেসিডেন্টই ওই বিলের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার চেষ্টা করেনি। অন্যকোনো প্রেসিডেন্ট না করলেও ডিসেম্বর ৬, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে আনার ঘোষণা দিলেন। তার এই ঘোষণায় জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাষ্ট্র । এত যুগ ধরে যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে দুই বিববদমান জাতির মধ্যে শান্তি স্থাপনার প্রচেষ্টায় রত ছিল, তা তার এ ঘোষণার সাথেই বোধ হয় শেষ হয়ে গেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই এ ঘোষণা দেননি। এটা ছিল তার নির্বাচনের একটি ম্যানন্ডেট। এ ম্যান্ডেটের কারণেই তিনি ইহুদিদের যে ভোট পেয়েছিলেন তা মোট ভোটের প্রায় ২৪ শতাংশ। তা ছাড়া ‘হোয়াইট হাউজে’ তার জামাতা ও বিশেষ উপদেষ্টা কট্টরপন্থী জায়নবাদী জেরার্ড কুশনার সহ তার সাথে প্রায় এক ডজন জায়নবাদী বিশ্বাসী ইহুদি পরামর্শককে নিয়োগ দিয়েছেন। এরাই ক্রমাগত ইসরাইলের সাথে নির্বাচনের আগে ও পরে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছেন বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণায় বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয়েছে নতুন করে অস্থিরতা এবং রক্তক্ষয়ী বিরোধ আবার শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই অধিকৃত ফিলিস্তিন ও পূর্ব জেরুসালেমে রক্তপাত বাড়ছে। এরই মধ্যে ‘ওআইসি সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের নেতারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে অনেক সদস্য দেশ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ওআইসি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জোড়াল ভাষায় ট্রাম্পের এই ঘোষণার নিন্দা জানান। ইতঃপূর্বে প্রধানমন্ত্রীও এই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। ওআইসির এই আহ্বানের কার্যকারিতা কতখানি রয়েছে বা হবে তা হয়তো এখনি দৃশ্যমান হবে না। কারণ, ফিলিস্তিন এখনো কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের রূপ নেয়নি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা যে ফিলিস্তিনের সঙ্কটকে আরো জটিল করে তুলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অপর দিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের যে ইমেজ ছিল তাতে দারুণ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণার সাথে একমত পোষণ করেনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ ব্রিটেনসহ অন্য দেশগুলো।

যা-ই হোক চার হাজার বছরের জেরুসালেম ভূমিতে যে সঙ্ঘাত চলছে তার অবসান সহজে হবে বলে মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের এ হঠকারী সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যে যে ধরনের ধর্মীয় উগ্রবাদের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে এবং সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে এ পরিস্থিতি আরেক মাত্রা যোগ হবে। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা কমাতে হলে ফিলিস্তিন প্রশ্নের সমাধান বিশ্ববাসীকেই করতে হবে। ইসরাইলকে বুঝতে হবে যে, তাদের সহাবস্থান ছাড়া গতি নেই।
(এ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য দেখুন লেখকের বই ‘জর্ডান নদী তটে’ )
লেখক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:), সাবেক নির্বাচন কমিশনার

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/277611