১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:৩১

চার মাসেই সেবা খাতে ব্যয় ২৩ হাজার কোটি টাকা

বিদেশী নাগরিকদের পেছনে ব্যয় বাড়ছে

দেশে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সেবা খাতের ব্যয়। বিদেশী নাগরিকদের বেতনভাতা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ খাতের ব্যয় বেড়ে গেছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সেবা খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৮১ কোটি ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে আয় হয়েছে অর্ধেকেরও কম, অর্থাৎ ১৩৮ কোটি ডলার। এর ফলে এ খাতের ঘাটতি হয়েছে ১৪৩ কোটি ডলার। সেবা খাত ও পণ্য বাণিজ্যি ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে। আলোচ্য সময়ে দেশের চলতি হিসাবের ভারসাম্য ৩৩১ কোটি ডলারের ঋণাত্মক হয়ে গেছে, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক চার কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সেবা খাতে অস্বাভাবিক হারে ব্যয় বেড়ে গেছে। সেই সাথে রফতানি আয় কমছে। পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লেও হঠাৎ আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এরই ফলে চলতি হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থা কিছু দিন চলতে থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংককে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতে তার রিজার্ভ থেকে ছাড়তে হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। তবে বাজার স্থিতিশীল হলেও টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। মাস দুয়েক আগেও আমদানিতে প্রতি ডলারের জন্য যেখানে ব্যয় হতো ৭৯ টাকা, এখন তা বেড়ে ৮৪ টাকায় উঠে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশে হঠাৎ করে বিদেশী নাগরিকদের কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। বিশেষ করে দেশের তৈরী পোশাক খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা চাকরিতে ঢুকে পড়ছে। এর ফলে বিদেশী নাগরিকদের পেছনে বেতনভাতা ব্যয় বেড়ে গেছে। আর এটিই উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা, প্রতি বছর দেশের শ্রমবাজারে নতুন ২০ থেকে ২৫ লাখ শ্রমিক আসছে। কিন্তু বিদ্যুৎ গ্যাসসহ অবকাঠামো সুবিধার অভাব ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্ধিত হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে কর্মক্ষম শ্রমিকের সংখ্যা বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে সুযোগ বাড়ছে না। এ পরিস্থিতিতে বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্মের হার। এ সময়ে দেশের কর্মক্ষেত্রে বিদেশী শ্রমিক ঢুকে পড়লে বেকারত্বের হার আরো বেড়ে যাবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর শেষে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫৭৯ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল অর্ধেকের কম অর্থাৎ ২৭৭ কোটি ডলার। প্রাইমারি আয়ের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ডলার। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ছিল ঋণাত্মক চার কোটি ৪০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এটি ছিল ঋণাত্মক ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর চার মাসে তা আরো বেড়ে হয়েছে ৩৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশে বিরোধী দলগুলোর তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। এরপরও দৃশ্যমান তেমন বিনিয়োগ হচ্ছে না। বর্তমানে কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ না হলেও তহবিল ভিন্ন খাতে ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই চলতি হিসাবের এ চিত্র। কিন্তু আমদানি ব্যয় বাড়লেও প্রকৃত আমদানির চিত্র নিয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। কেননা আমদানির সাথে বিনিয়োগ গতির সামঞ্জস্য নেই। যে পরিমাণ মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি তথ্য আসছে সে অনুযায়ী বিনিয়োগ নেই। কাজেই আমদানির আড়ালে অর্থপাচার কিংবা আমদানি ব্যয় অতি মূল্যায়িত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। তাদের মতে, ভবিষ্যতে চলতি হিসাবে ঘাটতি বাড়তে থাকলে তা রিজার্ভে চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির ওপরও প্রভাব ফেলবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/277446