১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:১৯

জেরুসালেম মুসলমানদের কাছে মক্কা-মদিনার মতো পবিত্র-আল আজহার গ্র্যান্ড মুফতি

জেরুসালেমের আল আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর মতোই পবিত্র স্থান। এমন মন্তব্য করেছেন মিসরের খ্যাতনামা আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড মুফতি আহমেদ আল তাইয়্যেব। গত শনিবার কায়রোতে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘জেরুসালেম শহরের একটি পাথরের টুকরার মালিকানাও ইহুদিদের নেই। সেখানকার ইট-কাঠ-পাথর সব মুসলমানদের সম্পদ। কাজেই তারা জেরুসালেমে তাদের মন্দির থাকার যে দাবি করে ভিত্তিহীন।’

আহমেদ আল তাইয়্যেব নিজের বক্তব্যের সমর্থনে কোরআন-হাদিস থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরেন আল আজহারের এই গ্র্যান্ড মুফতি।
আহমেদ আল তাইয়্যেব বলেন, ইসলামের আবির্ভাবের আগেও জেরুসালেম শহরে আরবরা বসবাস করত। ওল্ড টেস্টামেন্টকে (তাওরাত) উদ্ধৃত করে ইহুদিরা আল আকসা মসজিদকে তাদের সম্পদ বলে যে দাবি করে তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
এদিকে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির প্রতিবাদে ইন্তিফাদা বা সর্বাত্মক প্রতিরোধ পালন করছেন ফিলিস্তিনীরা। গতকাল রোববার এই ইন্তিফাদার দশম দিন ছিল। ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর দুনিয়াজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে। ৮ ডিসেম্বর থেকে তৃতীয় ইন্তিফাদার ডাক দেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইন্তিফাদার প্রথম নয় দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলীতে নয় ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। এমনকি দুই পা হারানো পঙ্গু ফিলিস্তিনীও রক্ষা পাননি ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলী থেকে।
ট্রাম্পের ওই বিতর্কিত ঘোষণার পরপরই জেরুজালেম, গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীরের রামাল্লা, হেবরন, বেথলেহেম, নাবলুস, কালকিলিয়া, তুলকার্ম ও জেনিনের রাস্তায় নেমে আসেন মুক্তিকামী ফিলিস্তিনীরা। বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। হতাহত হন বহু বিক্ষোভকারী। তারপরও দমে যাননি মুক্তিকামী মানুষেরা।

প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন তারা। ট্রাম্প আর নেতানিয়াহু’র ছবি পুড়িয়ে, আমেরিকা-ইসরায়েলের পতাকা জ্বালিয়ে দিয়ে স্লোগান তুলছেন, ফিলিস্তিনীদের রাজধানী নির্ধারণের অধিকার আমেরিকাকে কেউ দেয়নি। আর হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ইসরায়েল নামে কোনও দেশ নেই। তাই এর কোনও রাজধানীও থাকতে পারে না। ফিলিস্তিনীদের প্রতিরোধ সংগ্রামের বিপরীতে তাদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
‘জেরুসালেম হারানো মানে কাবা শরিফ ও অন্যান্য ইসলামী রাজধানী হারানো’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, অন্যদের সুবিধার জন্য মুসলিম বিশ্বের মানচিত্র বদলের ষড়যন্ত্র চলছে। ইস্তাম্বুলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সপ্তম হাদিস ও সিরাত অধ্যয়ন পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, এক শ’ বছর আগের মতো আবারো চ্যালেঞ্জের মুখে মুসলিম বিশ্ব।

রক্তপাত, চোখের পানি আর ভাইয়ে ভাইয়ে বিভেদের মাধ্যমে আমাদের ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। বক্তৃতায় তিনি মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিচালিত হামলা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানান। এরদোগান বলেন, মুসলিমদের মধ্যে যখন মতভেদ থাকে, তখন এর সুযোগ নেয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো এবং ইসরাইলের মতো দেশগুলো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কাজে লাগায়।
অনুষ্ঠানে তুর্কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুসালেম ঘোষণার আবারো নিন্দা জানান। ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার পর এরদোগানের উদ্যোগে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির জরুরি সম্মেলন ডেকে এ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। এরদোগান বলেন, ওআইসির এই পদক্ষেপ বহুমুখী প্রভাব ফেলবে এবং তা অন্য দেশগুলোকে এ বিষয়ে ওআইসির নেতৃত্বকে অনুসরণ করতে উৎসাহ জোগাবে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, জেরুসালেম হারানো মানে কাবা শরিফ ও অন্যান্য ইসলামি রাজধানী হারানো। আর জেরুসালেমকে রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে বোমা নিক্ষেপ করেছেন।

তিনি বলেন, কুদস হাতছাড়া হলে আমরা মদিনা মুনাওয়ারাও রক্ষা করতে পারব না, মদিনা হারালে আমরা মক্কাকেও রক্ষা করতে পারব না। আর মক্কার পতন হলে আমাদের কাবা শরিফকেও হারাতে হবে। তিনি আরো বলেন, জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও সব মুসলমানের ওপর এক নতুন হামলা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত মোকাবেলায় আরো নানা পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে তুরস্ক।
এরদোগান বলেন, জেরুসালেম বিশ্বের সব মুসলমানের সম্মানের জায়গা। আল্লাহর আদেশ ও পূর্বসূরিদের আমানত হিসেবে জেরুসালেম রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব কিছুই আমরা করব। তিনি বলেন, তুরস্ক জাতিসঙ্ঘের কাছে মার্কিন সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি করবে। এই হঠকারী ও অবৈধ সিদ্ধান্ত প্রতিরোধে আমরা প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদে যাবো। যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিলে তারপর যাবো জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে। শুক্রবার কনোয়া রাজ্যের সেন্ট্রাল আনাতোলিয়া শহরে এক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে জনতার উদ্দেশে এরদোগান এ কথা বলেন।
এদিকে জেরুসালেমের সঙ্কটের ব্যাপারে কোনো একটি দেশের একক সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা আইনগত বৈধতা পাবে না, এমন একটি প্রস্তাব উঠতে যাচ্ছে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে জাতিসঙ্ঘে এই প্রস্তাব তুলতে যাচ্ছে মিসর। তবে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ভেটো দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সমর্থনে অন্যান্য দেশ যেন জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তর না করে, সে বিষয়টিও থাকবে প্রস্তাবে।
কূটনীতিকরা মনে করছেন, নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য এর সমর্থন করলেও বিরোধিতা আসতে পারে ওয়াশিংটন থেকে। তারা ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ মাসের শুরুতে তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শহরটিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন ট্রাম্প।

http://www.dailysangram.com/post/311578