১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:০১

মানুষের ভোগান্তি পথে পথে

দৌলতদিয়া ঘাটে দীর্ঘ যানজট

ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় আসছিলেন পনির শিকদার। সাথে স্ত্রী ও ছোট্ট দুই সন্তান। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে দেখেন দীর্ঘ যানজট। সেই ঘাট পার হতে লেগে যায় ৮ ঘণ্টা। সবশেষে গতকাল দুপুরে এই পরিবারটির সাথে দেখা হয় আমিনবাজার ব্রিজের ওপর। হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন। এমনভাবে হেঁটে আসছিলেন মনে হচ্ছিল যেন এই বুঝি পড়ে যাচ্ছেন। হেমায়েতপুর থেকে দুই সন্তান নিয়ে তারা হাঁটা শুরু করেছেন। গতকাল এভাবে পথচারীরা পথে পথে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। গতকাল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে যারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান তারাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে তাদেরকে বাসায় ফিরতে হয়েছে। এ দিকে পথচারীদের এ দুর্ভোগকে পুঁজি করে অনেকে টাকা কামিয়েছেন। গাবতলী থেকে শাহবাগের ভাড়া যেখানে ১৫ টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে ৪০ টাকা।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট সূত্র জানায়, গত শুক্রবার সকাল থেকেই ঘাটে যানজট সৃষ্টি হতে শুরু করে। রাতে সেই জট ছাড়িয়ে যায় ১০ কিলোমিটার। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। এসব যাত্রীই ঢাকায় আসার পথে আবারো পথে পথে ভোগান্তির শিকার হন। দুপুরের দিকে দেখা যায় হেমায়েতপুর থেকে মিরপুর মাজার রোড পর্যন্ত তীব্র যানজট। এই যানজটে পড়ে হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হন।
মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে লাখো মানুষ ছুটে যান সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তারাই যখন ফিরছিলেন তখন চরম ভোগান্তির শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অব্যবস্থাপনার কারণেই মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায়। গাড়ি নিয়ে যারা স্মৃতিসৌধে যান, তাদের গাড়িগুলো রাখতে নির্দিষ্ট কোনো স্থান ছিল না। বাধ্য হয়ে তারা রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে স্মৃতিসৌধে যান। কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে হাইওয়ে আটকে রাস্তার ওপর মিছিল করছে; যা অতীতে কোনো দিন দেখা যায়নি। এতে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হন। বিশেষ করে যারা শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে যান তারা এ মিছিলের কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। পথচারী কামরুল বলেন, অতীতে কোনো দিন এমন হয়নি। মিছিলকারীদের মধ্যে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকও দেখা যায়। তারা স্মৃতিসৌধে সম্মান জানাতে যাওয়া মানুষের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
এ দিকে হঠাৎই দুপুরের দিকে আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়ে বেড়িবাঁধের মুখের সিগন্যালটি স্লো হয়ে যায়। এতে সাভারের দিক থেকে ঢাকায় আসা গাড়িগুলো আটকে পড়ে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, এটি পরিকল্পিত। এই যানজট ছড়িয়ে পড়ে হেমায়েতপুর পর্যন্ত। যারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান তাদের অনেককেই দেখা যায় রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গাবতলী পর্যন্ত আসেন। পথচারী ইকরামুল কবির টিপুর সাথে দেখা হয় আমিনবাজার ব্রিজে। তিনি জানালেন, হেমায়েতপুর নেমে গেছেন বাস থেকে। পরে হেঁটে আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়ে ওয়াটার বাসে করে যাবেন ওয়াইজঘাটে। তার বাসা পুরান ঢাকায়। এভাবে হাজার হাজার মানুষকে গতকাল হেঁটে ঢাকায় আসতে দেখা যায়। কবির নামের একজন জানালেন, তিনি হেঁটে হেমায়েতপুর থেকে টেকনিক্যাল পর্যন্ত এসে বাসে উঠেছেন।

গতকাল বেলা দেড়টায় আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ সংযোগ সড়কে দেখা যায় সিগন্যালটি বিনা কারণে বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে সাভারের দিক থেকে আসা গাড়িগুলো আটকে যাচ্ছে। আবার কিছু সময় দেখা যায় বিনা কারণে গরুর ট্রাক রাস্তায় উঠে মোড় ঘুরছে, যাতে দীর্ঘ যানজট লেগে যায় ঢাকা-আরিচা রোডে।
আবার রাজধানীর মধ্যেও কোনো কোনো এলাকায় রাস্তা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। গতকাল সন্ধ্যায় গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে। পথচারী কাওসার বলেন, ওয়ারিতে একই স্থানে তাকে মাইক্রো নিয়ে পৌনে দুই ঘণ্টা থাকতে হয়। বঙ্গভবনের আশপাশের রাস্তাগুলো বন্ধ থাকায় অনেকেই ফ্লাইওভারের নিচ থেকে উল্টো রাস্তায় গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ে। এতে ওই রাস্তাটি স্থবির হয়ে পড়ে। পথচারীরা বলেছেন, এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তাটি অবরুদ্ধ থাকলেও যাদের দায়িত্ব পথচারীদের জন্য রাস্তায় চলাচল নির্বিঘœ করা, সেই ট্রাফিক পুলিশ ছিল নির্বিকার। দীর্ঘ সময় সেখানে যানজট লেগে থাকলেও কোনো ট্রাফিক পুলিশকে দেখা যায়নি।

এ দিকে যাত্রীসাধারণের এ দুর্ভোগের মধ্যে আরো দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেন পরিবহন শ্রমিকেরা। গতকাল রাজধানীতে যেসব যান চলাচল করেছে, তাতে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। শামসুল আলম নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি মাজার রোড থেকে ৮ নম্বর গাড়িতে উঠে বাংলামোটর নেমে গেছেন। কিন্তু তাকে ভাড়া গুনতে হয়েছে ৪০ টাকা। এভাবেই গতকাল পরিবহন শ্রমিকেরা বাড়তি ভাড়া আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় তীব্র যানজটে গণপরিবহনেরও কিছুটা সঙ্কট ছিল গতকাল; যে কারণেও মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/277171