১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:০০

নানা অনিয়মে ধুঁকছে ব্যাংকিং খাত

এইচ এম আকতার: খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতিসহ নানা অনিয়মে ধুঁকছে নতুন-পুরনো অনেক ব্যাংক। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ আর নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ায় অস্থিরতা বাড়ছেই। এই অবস্থায় নতুন ব্যাংক নয় বরং পুরনো ব্যাংকের মান বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। নতুন ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তবে সরকার বলছে বেশিসংখ্যক মানুষকে সেবার আওতায় আনতেই অনুমোদন পাচ্ছে নতুন ব্যাংক।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে ব্যাংক আছে ৫৭টি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৩। মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাও চালু করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিআইবিএমের হিসেবে দেশের প্রায় ৪০ ভাগ বা ৩ কোটি মানুষ এখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় আনতে ৩টি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সরকার এক দিকে বলছেন, ৩ কোটি মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এদিকে অর্থমন্ত্রী বলছেন আরও নতুন ব্যাংকের প্রায়োজন রয়েছে। এতে করে মানুষ ঘরে বসেই ব্যাংকিং সেবা পাবে। সরকার এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো একের পর এক সংকটে পড়ছে। অন্যদিকে একাধিক ব্যাংকের মালিকানা হাত ছাড়া হচ্ছে। এতে করে ব্যাংকিং খাতে নানা অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকার বলছে ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে রয়েছে এমন ৩ কোটি মানুষকে ডাক ব্যাংকের মাধ্যমে সেবা দেয়া হবে। এজন্য সরকার “ডাক টাকা” চালু করে। তাহলে কার কথা ঠিক। সরকার যদি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দিতে পারেন তাহলে কেন নতুন ব্যাংক। কার স্বার্থে এই ব্যাংক। নতুন ৯টি ব্যাংকই খারাপ অবস্থানে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে প্রশাসন বসানো হয়েছে। কয়েকটিতে মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। নতুন পুরাতন মিলে ব্যাংকিং খাতে নানা সংকট রয়েছে।
২০১২ সালে একসাথে অনুমোদন পায় ৯টি ব্যাংক। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে এর মধ্যে ৩টি দেয়া হয় প্রবাসী উদ্যোক্তাদের। তবে চার বছরেও রেমিট্যান্স বাড়াতে ব্যাংকগুলি তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। গত বছর এই ৩ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ৫২ লাখ ডলার। বিদেশি ব্যাংকের সাথে হিসাব খুলতে পারেনি ৯ ব্যাংকের কোনটিই। চরম অনিয়মে তারল্য সঙ্কটে ফারমার্স ব্যাংক। পুরনো ব্যাংকগুলোতেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। মূলধন যোগান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে।

সর্বশেষ চলতি মাসে নতুন করে আরও ৩ টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব ব্যাংকের কতটুকু প্রয়োজন রয়েছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সাবেক গর্বণর ড. সালেহ উদ্দিন বলছেন, এমন নাজুক পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ব্যাংক খাতে দক্ষ কর্মী সংকট প্রকট হবে বলেও সতর্ক করছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যারা এখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছেন তাদের চ্যানেলে আনতে পুরান ব্যাংকগুলোই যথেষ্ট। নতুন করে ব্যাংক দেয়ার কোন দরকার নেই। ইতোপূর্বে দেয়া নতুন ব্যাংক কোনভাবেই ভাল করতে পারছে না। তারপরেও আবার নতুন যারা আসবে তাদের ভাল করার তেমন সুযোগ নেই।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, অনেকে ইসলামী ব্যাংকিং চাচ্ছেন অনেকে আবার প্রবাসীদের সেবার জন্য ব্যাংক চাচ্ছেন। রাজনীতি করলে এসব বিবেচনা করতে হয়। নতুন দু/একটি ব্যাংক খারাপ করলেও অনেকেই ভাল করেছেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় আনতে জোর দিতে হবে এজেন্ট ব্যাংকিং এ। পাশাপাশি সরকারি ব্যাংকের অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে বেসরকারি ব্যাংককে।
পরিচালনা পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনার আর অদক্ষতার কারণে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যাংকিং খাতে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপশি বাড়ছে এ খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ। এসব নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়ছে।
অনিয়ন্ত্রিত খেলাপি ঋণ ও খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেই মূলত ব্যাংকিং খাতে এমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খাতটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়েছে। তবে এই খেলাপি ঋণ আদায় ও ঋণ বিতরণে অনিয়ম বন্ধ করতে গত প্রায় দুই বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি পাঁচ ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।

দেশের ব্যাংক খাতের অস্থিরতা ও অনিয়ম দূর করতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায় ও ঋণ বিতরণে অনিয়ম বন্ধ করতে গত প্রায় দুই বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি পাঁচ ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। মাত্র কয়েক দিন আগে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতীকে। ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সংকট মেটাতে তিন মাস সময় বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে তারল্য সংকট দূর করতে হবে। এমনকি গ্রাহকের আস্থাও ফিরিয়ে আনতে হবে। এক কথায়, আগামী তিন মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে। অন্যথায়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
সর্বশেষ এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির সব কমিটির চেয়ারম্যানও পদত্যাগ করেছেন। রোববার রাতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে এক জরুরি পর্ষদ সভায় এসব পরিবর্তন হয়। ওই সভাতে পদত্যাগ করা পর্ষদ ও নতুন পর্ষদের বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ফরাছত আলীকে সরিয়ে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন তমাল এস এম পারভেজ। ভাইস চেয়ারম্যান তৌফিক রহমান চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনজুরুল ইসলাম, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নুরুন নবী ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসেফ আলীকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমডি দেওয়ান মুজিবর রহমানকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিএমডি কাজী মো. তালহাকে।

এদিকে শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে আরো কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন দেখা গেছে, নিয়মনীতি না মেনে ঋণ দেয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশের আর্থিক খাতে। ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ গত ৯ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। এর বাইরে আরো ৪৫ হাজার কোটি টাকার খারাপ ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ এখন এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ৪৮টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। এই ১৩ ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংক ৮টি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দি ফারমার্স ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিস্থিতি কয়েক বছর ধরে খারাপ হচ্ছে। এমনকি দুই বছর ধরে এই ১৩ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্বনর. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা চলছে। অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। এটি ব্যাংক খাত তো বটেই, সার্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেবল আমানতকারী বা ব্যবসায়ীরাই ব্যাংকবিমুখ হবেন না, উৎপাদন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
এদিকে খেলাপি ও কু-ঋণ আদায়ে আলাদা কোম্পানি গঠন, বড় ঋণখেলাপিদের যৌথভাবে তদারকি করা, দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা এবং ব্যর্থদের সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন নিয়েও পর্যালোচনা করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ জন্য মতামত চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতে তৎপর দুর্নীতি দমন কমিশনও।

অনুসন্ধান শুরুর প্রায় চার বছর পর বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু ও তার নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সপ্তাহে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দিয়েছে। এই পর্ষদ ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত মাত্র ১১ মাসে নজিরবিহীন অনিয়মের মাধ্যমে তিন হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋণের নামে বিভিন্নজনকে দিয়ে দেয়। একইভাবে অগ্রণী ব্যাংকের ৬০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার দায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, ব্যাংকের অপসারিত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে সংস্থাটি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় ২০১৬ সালের ৩০ জুন মামলা হয়েছিল।
এমনকি ব্যাংক খাতের সংকটের আগাম বার্তা ও সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশিষ্ট বিভাগগুলোতে চিঠি চালাচালি চলছে দুবছর ধরেই। প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও এসেছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। কমিটি ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশও করেছে।
অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করলেও নতুন করে আরো তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংক খাতের নানা সমালোচনার মধ্যে ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে নতুন করে আরো তিনটি ব্যাংকের অনুমোদনের কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্বনর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংক বেশি হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে খাতটি অনেক পেছনে চলে গেছে। ব্যাংকগুলো এখন মুদি দোকানে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫৭টি ব্যাংক যথেষ্ট। নতুন করে আরো ব্যাংক দিলে এ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর হতে হবে। এর আগে যখন ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়, আমরা তখনই বলেছিলাম দেশের অর্থনীতির যে আকার সেখানে আর নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। এই ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকও আছে। এনআরবি ব্যাংকসহ সমস্যাযুক্ত কিছু ব্যাংক আছে। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে আবারো ৩টা ব্যাংকের অনুমোদন দেয়াটা আমি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি না।
সরকার ব্যাংকিং খাতে আইনের যে সংশোধন আনতে যাচ্ছে, সেখানে পরিবারতন্ত্র গুরুত্ব পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রস্তাবিত এ আইনে বলা হচ্ছে, যেকোনো বেসরকারি ব্যাংকে একই পরিবার থেকে চারজন সদস্য পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন।

এই সংশোধিত আইন কার্যকর করা হলে পরিবারতন্ত্র কায়েমের মাধ্যমে পরিচালকদের লুটপাটের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের ফলে ব্যাংকগুলোর ওপর পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। এটি হবে ব্যাংকিং খাতের সুশাসনের পরিপন্থী। দেশের ব্যাংকিঙ খাতে সংকট দিন দিন বাড়ছেই।
তিনি আরও বলেন, নতুন নয়টি ব্যাংক যখন দেয়া হয়েছে তখন বিশেষজ্ঞরা বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। নতুন এসব ব্যাংকের একটিও ভাল করেনি। তারপরেও নতুন করে আবার ৩ টি ব্যাংক কেন দেয়া হলো তা বুঝে আসে না। দেশে আর নতুন করে কোন ব্যাংকের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

http://www.dailysangram.com/post/311407