১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৮:৫৯

শুভঙ্করের ফাঁকি

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

একটি কথকতা এ রকম। এক কর্মজীবীগোষ্ঠী প্রমোশনের দাবিতে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে। সরকার বা কর্তৃপক্ষ আন্দোলন নিরসনে ব্যর্থ হলো। অবশেষে বাধ্য হয়ে কর্মচারীদের সাথে সমঝোতায় পৌঁছে। সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত সবাইকে নীতিগতভাবে প্রমোশন বা পদোন্নতি দিতে রাজি হয়েছিল। এতে কর্মচারীরা মহা খুশি। তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। পদোন্নতির নীতিমালা নির্ধারণের জন্য একজন চতুর কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে এই নীতিমালা তৈরি করেন। নীতিমালায় বলা হয়Ñ কর্তৃপক্ষ নীতিগতভাবে সবাইকে প্রমোশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে চতুর কর্মকর্তা অনেক ‘তবে’, ‘যদি’ এবং ‘কিন্তু’ জুড়ে দিলেন। তিনি আইনের ব্যাখ্যা করেন এভাবেÑ প্রতিটি কর্মকর্তা প্রমোশন পাবেন, তবে তার যথার্থ ডিগ্রি থাকতে হবে। প্রতিটি কর্মকর্তা প্রমোশন পাবেন, যদি তিনি দশ বছর চাকরি করে থাকেন। প্রতিটি কর্মকর্তা প্রমোশন পাবেন; কিন্তু যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তিনি প্রমোশনের যোগ্য বিবেচিত হবেন না। আইনের প্রয়োগ হলে অবশেষে দেখা গেল ৩০০ কর্মচারীর মধ্যে প্রমোশন পেলেন মাত্র তিনজন। এই চাতুর্য দিয়ে প্রমোশনের ‘বারোটা বাজলো’। আন্দোলন নস্যাৎ হয়ে গেল। প্রতীয়মান হয়, সরকার এ রকমই একটি চাতুর্যময় শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়েছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেটে। গত ১১ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা-২০১৭’ নামে বহুল আলোচিত এ গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে মাজদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী, সরকারের তৈরি করা খসড়া শৃঙ্খলাবিধি গত বছরের ২৮ আগস্ট সংশোধন করে চূড়ান্ত করেছিলেন আপিল বিভাগ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার দরকার নেই। এরপর অনেক জটিলতা-কুটিলতা শেষে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো। এতে শব্দের মারপ্যাঁচে এবং ব্যাখ্যার জটিলতায় অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সরকার কৌশলে নিজের হাতে রেখেছে।

এতে প্রক্রিয়াগতভাবে অনেকের মতে, প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। একধরনের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীরুল ইসলাম বলেছেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী এই বিধিমালা জারি হওয়ার কথা। ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।’ এই বিধিমালায় বিচার বিভাগের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীনতার স্বীকৃতি রয়েছে। দেশের অন্যান্য বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান থেকে বিচার বিভাগ ভিন্ন। সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে সুপ্রিম কোর্ট এবং রাষ্ট্রপতির মাঝে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান বা শক্তির উল্লেখ নেই। স্বাভাবিকভাবে ব্রিটেনের ক্ষেত্রে ‘রাজা বা রানী রাজত্ব করেন; কিন্তু শাসন করেন না’। অর্থাৎ রাজা বা রানীর নামে সব শাসনকার্য পরিচালিত হয় বটে, তবে তা একান্তই নামসর্বস্ব। বাংলাদেশেও রাষ্ট্রপতির নামে সব আইন, অধ্যাদেশ এবং আদেশ জারি করা হয়। প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগপত্রেও রাষ্ট্রপতির আদেশের উল্লেখ থাকে। তার মানে এই নয় যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাহী কর্তৃত্বের অধিকারী। তিনি আলঙ্কারিক প্রধানমাত্র। যা হোক, বিচারিক আদালত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের বাংলাদেশ সরকারের প্রথাগত কর্মচারী হিসেবে গণ্য করা সঠিক হয়নি। বর্তমান সরকার অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত এই ধারার আলোকে আইনটি প্রকাশ না করে সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনটি প্রয়োগ করেছে। সংবিধানের নবম ভাগে বাংলাদেশের কর্ম বিভাগের ১৩৩ ধারায় বলা হয়েছেÑ ‘এই সংবিধানের বিধানাবলিসাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলি নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন: তবে শর্ত থাকে যে, এই উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা বা অধীন বিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলি নিয়ন্ত্রণ করিয়া বিধিসমূহ প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং অনুরূপ যেকোনো আইনের বিধানাবলির সাপেক্ষে অনুরূপ বিধিসমূহ কার্যকর হইবে।’ সাধারণভাবে প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মচারীদের জন্য প্রণীত বিধান বিচারকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে সরকার স্পষ্টভাবেই অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। নি¤œ আদালতের বিচারকদের ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও আইন মন্ত্রণালয়কে। অথচ সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে না। এখন রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বের নামে আইন মন্ত্রণালয়কে নিয়ে আসা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ১১৬ ধারার সারমর্ম হলোÑ নি¤œ আদালতের বিচারকদের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি যা যা করবেন সবই হবে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে। এখানে আইন মন্ত্রণালয়কে টেনে আনা হয়েছে শুধু নি¤œ আদালত নিয়ন্ত্রণের জন্য। ১৩৩ অনুচ্ছেদের বরাত দিয়ে বরং সংবিধানের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের যে কথা বলা হয়েছে, প্রণীত আইন সে চেতনার বিরোধী। শাসন বিভাগের আইন, বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। এটি করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বৈশিষ্ট্য, পৃথকীকরণ খর্ব করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী তার কর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ‘জুডিশিয়াল সার্ভিস ও সিভিল সার্ভিসের আচারণবিধির মধ্যে যদি আকাশ-পাতাল পার্থক্য হয় সেটা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’ মন্ত্রী বিধিমালা জারিকরণে দীর্ঘসূত্রতার জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে দায়ী করেছেন। মন্ত্রীর এ কথা সত্য। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন বিচারপতি সিনহাকে কায়দা কানুন করে সরিয়ে না দিলে নি¤œ আদালত নিয়ন্ত্রণের এই আদেশ দেয়া সম্ভব হতো না। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্বীকার করেন, ‘প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চেয়েছিলেন সমস্ত ক্ষমতাটা সুপ্রিম কোর্টের হাতেই থাকবে। সেটা তো সংবিধানবিরোধী। সংবিধানে আছে রাষ্ট্রপতি করবেন; কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শ করে। রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ থাকে কিন্তু রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে এ ব্যাপারগুলোকে বাদ দেয়া যাবে না।’ অপর দিকে, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেছেন, ‘মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলার রায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিধিমালা হয়নি। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর শেষ পেরেকটি মেরে দেয়া হয়েছে।’
দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা এ বিধিমালা নিয়ে সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছেন। তারা যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন তার সারকথা সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বকে স্বীকার করা হয়নি। যেমন, ক. সুপ্রিম কোর্ট নিজ থেকে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা যখন নি¤œ আদালত পরিদর্শন করেন, সে সময় যদি দুর্নীতি অথবা অসদাচরণের অভিযোগ তাদের নজরে আসে সে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য রাষ্ট্রপতিকে পত্র দিতে পারবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি যদি অনুসন্ধানের প্রয়োজন মনে না করেন, তাহলে কোনো তদন্তই হবে না। খ. রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করলে যে তদন্ত হবে, তাতেও সুপ্রিম কোর্টের কোনো প্রাধান্য থাকবে না। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে খসড়া দেয়া হয়েছিল, তাতে তদন্ত কমিটির সভাপতি একজন জেলা জজকে করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বিধিমালায় বলা হয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। গ. আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন শৃঙ্খলাবিধি প্রকাশের পর কার্যত বিচার বিভাগের ওপর দ্বৈতশাসন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আইন মন্ত্রণালয়ই সর্বেসর্বা। আর সুপ্রিম কোর্ট আলঙ্কারিক ভূমিকা পালন করবে। একজন বিশিষ্ট আইনজীবী রসিকতা করে বলেছেন, এ বিধিতে তেল ও পানিকে একসঙ্গে মেশানো হয়েছে, সরকারও দেখবে আবার সুপ্রিম কোর্টও দেখবে। এর ফলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকাকে ‘লেটার বক্স’-এর পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। ঘ. আইনমন্ত্রী দাবি করছেন, ‘উচ্চ আদালতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’ তবে পর্যবেক্ষকমহল মনে করে, সিনহার করুণ পরিণতির পর স্বাধীন মতামত দেয়ার পরিবেশ ও পরিস্থিতি আছে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ। ঙ. অনেকেই পরামর্শ দিয়েছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। বিচার বিভাগ স্বতন্ত্রীকরণের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি ফিরিয়ে আনলেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেনি। এই বিধির ফলে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী মওদুদ আহমদ। তিনি এ বিধিমালাকে ‘অসাংবিধানিক, অর্থহীন এবং আত্মঘাতী’ বলে অভিহিত করেন। চ. সংবিধান বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান খানও মনে করেন, ‘নি¤œ আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেয়ার এখতিয়ার খর্ব হয়েছে। ছ. বিশ্লেষণে তিনি আরো বলেন, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ‘তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা’ শুধু হাইকোর্ট বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রপতির কোনো ভূমিকা পালনের সুযোগ রাখা হয়নি। ১১৬ অনুচ্ছেদে ‘নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান’ সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত রয়েছে। জ. এ আইনে ‘যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যগতভাবে প্রচলিত বিধিমালাকে সরকার নাকচ করেছে।’ সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়Ñ সরকার সরাসরি কোনো অভিযোগ পেলে দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ হলো, প্রাথমিক তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে প্রস্তাব পাঠাতো সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট অনুমোদন করলে তদন্ত শুরু হতো। এই নিয়মের ব্যত্যয় হয়নি কখনো। এবার ঘোষিত বিধিমালায় এর ব্যতিক্রম করা হয়েছে। ঝ. নতুন বিধিতে ২৭(৭) বলা হয়েছে, বিচার বিভাগীয় কোনো সদস্য তার নিজস্ব ধারায় দণ্ডের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন না করলেও রাষ্ট্রপতি স্বীয় ইচ্ছায় বা অন্যবিধ কারণে বিভাগীয় নথি তলব করে নিজ বিবেচনায় দণ্ডের আদেশ সংশোধন করতে পারবেন। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নেয়ার বিধান ছিল। ঞ. ইতঃপূর্বে সুপ্রিম কোর্ট প্রণীত বিধিমালায় রাষ্ট্রপতিকে নিজ উদ্যোগে কারো দণ্ড সংশোধনের এখতিয়ার দেয়া হয়নি। নতুন বিধিমালায় সরকার রাষ্ট্রপতিকে অবাধ অধিকার দিয়েছে। ফলে যেকোনো অপরাধী রাষ্ট্রপতির দ্বারা বেকসুর খালাস পেতে পারবে। উল্লেখ্য, বর্তমান শাসন আমলে বহু অপরাধীকে রাষ্ট্রপতির বিশেষ মার্জনা দেয়া হয়েছে। ট. অধস্তন আদালতের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে কোনো অভিযোগ এলে সে বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশে কমিটি গঠনের এখতিয়ার ছিল। নতুন আইনে তা কার্যত সম্ভব নয়। ঠ. পূর্বে গৃহীত বিধি অনুযায়ী, অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে পনেরো দিনের মধ্যে অভিযুক্ত কর্মকর্তার জবাব দেয়ার বিধান ছিল। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে ইতঃপূর্বে কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হতো। নতুন বিধিতে সময়সীমার কোনো উল্লেখ নেই।

সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে চূড়ান্তভাবে বলা যায়, নতুন শৃঙ্খলাবিধি বিচার বিভাগের ওপর সরকারের সর্বাত্মক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার এক স্পষ্ট নজির। এর মাধ্যমে নি¤œ আদালতকে অধীন, অনুগত এবং অনুগ্রহের অনুবর্তী করা হয়েছে। এতে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগীয় কর্তৃত্বের কার্যত অবসান ঘটেছে। সব মিলে এটি একটি বড় ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি বলেই প্রমাণ হয়েছে। এর মাধ্যমে বিচারক কিংবা বিচারপ্রার্থীÑ কারো অধিকার সংরক্ষিত হয়নি, বরং ছলে-বলে ক্ষমতার কলকাঠি আরো পাকাপোক্ত হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/277101