১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:৫৩

চার মহাসড়কে মহাযানজট

ঢাকার সঙ্গে যুক্ত চার মহাসড়কে গতকাল শুক্রবার তীব্র যানজটে মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হয়েছে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ চরম কষ্ট ভোগ করে গন্তব্যে পৌঁছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে যানবাহন। এর মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া টঙ্গী-সিলেট ভায়া ঘোড়াশাল আঞ্চলিক মহাসড়কসহ উল্লিখিত চার মহাসড়কের আশপাশে অন্যান্য সড়কেও দেখা দেয় তীব্র যানজট। গতকাল দিনভর থেমে থেমে যানজট চলে এই মহাসড়কগুলোতে।

এই মহাসড়কগুলোতে এমনিতেই সব সময় কম-বেশি যানজট লেগে থাকে। এর মধ্যে গার্মেন্ট কারখানাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সঙ্গে মিলে যায় আজ শনিবার বিজয় দিবসের ছুটি। একই সঙ্গে চলছে ডিসেম্বরে শিশু-কিশোরদের স্কুল ছুটি। ফলে দুই দিন ছুটির সঙ্গে আরো ছুটি যোগ করে ঢাকা ও আশপাশের লাখ লাখ চাকরিজীবী-ব্যবসায়ী সপরিবারে ছুটছে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। এসব কারণে মহাসড়কগুলোতে গাড়ির চাপ বেড়ে যানজট তীব্র হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
টাঙ্গাইল : এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে এলেঙ্গায় একটি আলুবোঝাই ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। এতে মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যেই যানজট লেগে যায় মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ঢাকার দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

হাইওয়ে পুলিশ মনে করে, দুই দিনের ছুটিতে মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া টাঙ্গাইল মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতেও গাড়ি ধীরগতিতে চলাচল করতে গিয়ে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানবাহন আটকে রয়েছে এবং কোনো কোনো অংশে খুব ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। কিছুদূর গিয়ে আবার থেমে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের রাবনায় কথা হয় ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তিনি ঢাকার গাবতলী থেকে রওনা হয়েছেন। টাঙ্গাইল অংশে এসে যানজটে আটকা পড়েন। শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তিনি রাবনা বাইপাসে পৌঁছেছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকেও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে গাড়ির চাপ ছিল। তবে বিকেলের চেয়ে গাড়ি চলাচলের গতি কিছুটা বাড়তে দেখা যায়।
গাজীপুর : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর জেলার পুরো অংশে গতকাল যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে বাস রেপিট ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উন্নয়নকাজের জন্য গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া যানজটের তীব্রতা গতকাল ছিল অনেক বেশি। টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা ২০ মিনিটের পথ পাঁচ-ছয় ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয়েছে। বিকল্প সড়ক নির্মাণ না করেই বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদাররা কাজ শুরু করায় যানজট তৈরি হচ্ছে।
গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত কমপক্ষে সাতটি স্থানে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে বুধবার ভোর থেকে যানজটের সূত্রপাত হয়। এর সঙ্গে দুই দিনের ছুটির কারণে যানবাহনের চাপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।
গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে থানার ওসি মো. আবদুল হাই জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানজটের প্রভাবে ঢাকা বাইপাস, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও টঙ্গী-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক সড়কে ছড়িয়ে পড়ে যানজট। কাঁচামাল ও উৎপাদিত রপ্তানি পণ্যও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে।
যোগ দেবে ৩০০ ট্রাফিক সহকারী : এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালনের জন্য জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন ৩০০ ট্রাফিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছে। আজ শনিবার তারা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে। তাদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয় নির্বাহ করবেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও গাজীপুর মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম।

টঙ্গীতে যেন ঈদের ছুটি : ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার মতোই ভিড় দেখা গেল গতকাল গাজীপুরের টঙ্গীতে। ভোর থেকে সারা দিন সড়কের প্রতিটি বাসস্টপেজে হাজার হাজার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষা করে যানবাহনের জন্য। সবার হাতেই ছিল ব্যাগ, সুটকেস, পোঁটলা-পুঁটলি। দুই দিনের ছুটিতে মানুষের বাড়ি যাওয়ার এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখা যায়নি। গার্মেন্টকর্মী, ব্যবসায়ী, ছাত্র, চাকরিজীবী, কারখানা শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষই ছিল বাড়ি যাওয়ার জন্য উন্মুখ। এই ভিড় যানজটকে আরো তীব্র করে তোলে।
ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের এ ঢল ছিল অব্যাহত। পোশাককর্মী শীলা আক্তার জানান, তাঁদের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। দুই দিনের ছুটিতে তিনি বাড়ি যাচ্ছেন মা এবং ছোট ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটাতে। চেরাগ আলী মার্কেটের সিরামিক দোকান কর্মচারী আরিফুর রহমান বলেন, দুই দিনের ছুটি পেয়েছি। সঙ্গে আরো একদিন ছুটি নিয়ে টাঙ্গাইল যাচ্ছি। ’ ওষুধ কারখানার কর্মচারী শাহজাহান কবীর বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, তাদের নিয়ে গ্রাম থেকে ঘুরে আসব। দুটি কম্বল কিনে বিপাকে পড়েছি। এক ঘণ্টা ধরে বাসে উঠতে পারছি না। ’
মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গতকাল ছিল তীব্র যানজট। অতিরিক্ত গাড়ির চাপেই এ যানজটের সৃষ্টি হয়। শিমুলিয়া ঘাট থেকে মাওয়া চৌরাস্তা ছাড়িয়ে এ যানজট চলে যায় প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছাকাছি। এতে যাত্রী দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বিআইডাব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের এ জি এম শাহ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঈদের সময় যে রকম যানজট মাঝে মাঝে দেখা দেয়, শুক্রবার তার থেকেও চাপ ছিল বেশি।

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা থেকে শুরু হওয়া যানজট প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়। মহাসড়কে যানজটের প্রভাব পড়েছে আশপাশের শাখা রাস্তাগুলোতেও। অনেক পরিবহন চালককে ভোগান্তি এড়াতে শাখা রাস্তায় চলাচল করতেও দেখা যায়। সরেজমিনে দুপুর ১২টার দিকে মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রামগামী যানবাহনের চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। গাড়ির চালকরা ইঞ্জিন বন্ধ রেখে বসে ছিলেন। ক্ষণে ক্ষণে গাড়ি চললেও দীর্ঘ সময় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ রেখে চালকরা বসে ছিলেন। সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলম পিপিএম জানান, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সোনারগাঁ থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/12/16/578042