১৫ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:০২

এক মাসে সহিংসতায় ৯ হাজার রোহিঙ্গার মৃত্যু

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর সর্বশেষ সহিংসতার প্রথম এক মাসেই ৯ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ছয় হাজার ৭০০ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে সহিংসতায়। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা এমএসএফের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সিএনএন ও বিবিসি।
সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দাতব্য সংস্থা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ), যার ইংরেজি নাম ডক্টরস উইদাউট বর্ডার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর প্রথম এক মাসে অর্থাৎ চলতি বছরের ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ৭৩০ জন। বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি। এমএসএফের গবেষণা বলছে, নিহত শিশুদের মধ্যে ৫৯ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। এ ছাড়া ১৫ শতাংশকে পুড়িয়ে এবং ৭ শতাংশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও তাদের সহযোগী উগ্র বৌদ্ধরা। এ ছাড়া পুঁতে রাখা ভূমি মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে ২ শতাংশ।

এর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প থেকে দাবি করা হয়েছিল তাদের অভিযানে ৪০০ লোক নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই ‘সন্ত্রাসী’। মিয়ানমার সরকার ও তাদের সেনাবাহিনী বরাবরই এ অভিযানকে ‘সন্ত্রাস দমন’ অভিযান হিসেবে দাবি করেছে। সেই সাথে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে আগুন দেয়ার কথা অস্বীকার করেছে।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার বলছে, মিয়ানমার কর্তৃপ যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা চালিয়েছে এ চিত্রই তার প্রমাণ। সংস্থাটির মেডিক্যাল ডিরেক্টর সিডনি অং বলেন, ‘আমরা যা গবেষণায় পেয়েছি তার সংখ্যা ও নিহতের ধরন উভয় দিক থেকেই ভয়ঙ্কর।’
গত ২৫ আগস্ট উগ্রপন্থীদের দমনের নাম করে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় অভিযানে। গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নারী-শিশুসহ রোহিঙ্গাদের। গণধর্ষণ করা হয় নারীদের। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার শিকার হয়ে ছয় লাখ ৪৭ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এমএসএফ রিপোর্টে। জাতিসঙ্ঘ এ অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে উল্লেখ করে। সারা বিশ্বের নিন্দার ঝড় উঠেছে সু চি সরকারের এ রোহিঙ্গবিরোধী অভিযানে।

প্রকাশিত রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সংস্থাটি বলছে, এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। কারণ সাম্প্রতিক সময়েও সেখানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে এবং এখনো লোকজন সেখান থেকে পালাচ্ছে। এখনো রাখাইন রাজ্যে ত্রাণকর্মীদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ রয়েছে। বিদেশী পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নেই এলাকাটিতে। প্রসঙ্গত গত মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা মিয়ানমারের।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/276685