১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:১১

পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা

* শান্তি প্রক্রিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান
* ট্রাম্পের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান
সামছুল আরেফীন : পূর্বে জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিশ্ব ইসলামী নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্পের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন।
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির বিরুদ্ধে তুরস্কের ইস্তামবুলে অনুষ্ঠিত হয় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি সম্মেলন। ৫৭ জাতির এ সম্মেলন থেকে পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়। গতকাল বুধবারের সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলোর বাইরে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো’ও অংশ নিয়েছেন।

আলজাজিরা জানিয়েছে, সম্মেলনে পূর্বে জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। পাশাপাশি শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এ দিকে মুসলিম নেতৃবৃন্দ ট্রাম্পের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেন। ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ আল ওথামিন জেরুসালেমনে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ওআইসি মার্কিন সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছে এবং নিন্দা জানাচ্ছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘণ। এতে আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
বরাবরের মতো ওআইসি ফিলিস্তিন ইস্যুতে দায়সারা কথা বলবে নাকি অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সাত দশক ধরে দখলদারির অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেবে তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তবে তুর্কি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওআইসি এবার আর অতীতের ন্যায় ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করবে না। বরং জেরুসালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে কড়া জবাব দেবে।
সম্মেলনে পবিত্র জেরুসালেম শহরকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে মেনে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।
জাতিসংঘের পর ওআইসি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। ১৯৬৭ সালে এই জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ফুঁসে উঠে মুসলিম বিশ্ব। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মরক্কোর রাজধানী রাবাতে এক ঐতিহাসিক সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাাটফর্ম হিসেবে ওআইসি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৩ ডিসেম্বর জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি’র এ সম্মেলন শুরুর আগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, তুরস্ক কোনও নিষেধাজ্ঞার কথা বলবে না। বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হবে। সম্মেলন থেকে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করা হবে। ইসরায়েলকে অবৈধ বসতি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এই বৈঠক আহ্বান করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তিনি বলেন, ওআইসি সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা দেখিয়ে দেবো, জেরুজালেমকে ইসরাইলী রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির বাস্তবিক প্রয়োগ সহজ হবে না।
বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে রাশিয়া, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তিউনিসিয়া, ইরান, নাইজেরিয়া, লেবানন, কাজাখস্তান ও আজারবাইজানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এছাড়া ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, জেরুসালেম মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পবিত্র শহর; এ ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ-এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ।

এরদোয়ান বলেন, ইসরাইল দখলদার রাষ্ট্র। তারা শিশু ও তরুণদের ওপর গুলীবর্ষণ করছে। গাজায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। দ্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, শক্তিশালী রাষ্ট্র হওয়া মানেই তার অবস্থান সঠিক; এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। বিশ্ব নেতাদের কাজ শান্তি বজায় রাখা, সংঘাত তৈরি করা নয়।
ট্রাম্প সব সীমা অতিক্রম করেছে: ওআইসি’র সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেয়া প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে ‘মহা অপরাধ’। ট্রাম্প ওই ঘোষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনের ঘোরতর লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
গতকাল জেরুজালেম ইস্যুতে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ৫৭ মুসলিম সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত জরুরি সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী আছে এবং সর্বদা থাকবে। জেরুসালেম যদি আমেরিকার শহর হতো তাহলে স্বীকৃতি দেয়াটা বৈধ হতো। এ ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প সব সীমা অতিক্রম করেছে।
আব্বাস বলেন, ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করায় মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, জেরুসালেমকে রাজধানী ঘোষণার পর মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না। জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা ছাড়া কোনো শান্তি অথবা স্থিতিশীলতা আসবে না।

ফিলিস্তিনের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করে ইহুদিবাদী আন্দোলনকারীদের উপহার দিয়েছেন ট্রাম্প।
এ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে মুসলমাদের জন্য 'রেড লাইন'। তিনি ইসরাইলকে দখলদার রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দেন।
উল্লেখ্য, জেরুজালেমের দখল প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯১৭ সাল থেকে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে অবৈধ স্থাপনা গড়ে আসছে ইসরাইলিরা। এতে ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের সমর্থন ছিল।
সর্বশেষ গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দখলকৃত জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দিয়ে অবৈধ দখলদারিত্বের বৈধতা দান করেন। এর পরই পুরো মুসলিম বিশ্ব ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ‘ইন্তিফাদা’ বা গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় এবং বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করে।
ফিলিস্তিন সরকারের পরিচালনায় থাকা ফাতাহ দলের পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিনি জনগণকে ট্রাম্পের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চারজনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে ১৪শর বেশি মানুষ।

 

http://www.dailysangram.com/post/311081