১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৯

জনরোষে সব সিটির হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়ন স্থগিত

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়নের কারণে জনরোষ সৃষ্টি হওয়ায় আপাতত এই কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার। এ জন্য সিটি কর্পোরেশনগুলোকে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যক্রম অনলাইনে করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন মঙ্গলবার বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনে পাঠানো হয়। এরপর থেকে দেশের সব সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করেছে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের হোল্ডিং ট্যাক্স অনলাইন কার্যক্রমকরণ প্রকল্পের পরিচালক আবদুল খালেক যুগান্তরকে বলেন, সাতটি সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স অনলাইনে করার কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, ইতিমধ্যে অনলাইনে ট্যাক্স দেয়ার কাজও শুরু করেছে এই সংস্থা। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স অনলাইন কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। আশা করি দুই সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স অনলাইনকরণ কার্যক্রম শেষ হবে আগামী জানুয়ারিতে। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমও ধাপে ধাপে শেষ করা সম্ভব হবে। তবে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে জানান এই প্রকল্প কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সব সিটি কর্পোরেশন এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করলে বাড়ির মালিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেক বছর হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়ন না করে হঠাৎ করে প্রায় ৩০ বছরের জটিলতা নিরসন করার উদ্যোগ গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, এমনকি মন্ত্রীরা সংসদ অধিবেশনে এবং বাইরে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এমন সিদ্ধান্ত ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সরাসরি অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসব বিষয় বিবেচনা করে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যুকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পুনঃমূল্যায়নকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সের ব্যাপারে বিপুলসংখ্যক আপিল দাখিল হয়েছে। বেশির ভাগ আপিলে পুনঃমূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বর্তমান সরকার নাগরিকসেবা কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, জনবান্ধবকরণে হোল্ডিং ট্যাক্সের কার্যক্রম অনলাইনে করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই কার্যক্রম সম্পাদন করার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
জানা যায়, দেশের সাতটি সিটি কর্পোরেশনে (ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট) একযোগে হোল্ডিং ট্যাক্স অনলাইনে করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর অবশিষ্ট চারটি সিটি কর্পোরেশনে (কুমিল্লা, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর) অটোমেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ, আদায় কার্যক্রম অনলাইনে হওয়ার আগ পর্যন্ত পুনঃমূল্যায়ন বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। অনলাইন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে সিটি কর্পোরেশন আইন-২০০৯ এর ৮২ ধারা মোতাবেক সরকারের পুর্বানুমোদন নিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল যুগান্তরকে বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়ন কার্যক্রম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থগিত করেছে। এই চিঠি মঙ্গলবার আমরা পেয়েছি, এটা নিয়ে মেয়রের সঙ্গে এখনও কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিয়েছে, এটা তো না মানার কোনো কারণ নেই। তবে এতে করে হোল্ডিং ট্যাক্স অন্ততপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা কম আদায় হবে। যেটা আমাদের বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে পুনঃমূল্যায়ন করে অনেকের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ও করে ফেলেছি। এসব টাকা পরবর্তীতে সমন্বয় করে দেয়া হবে। কারও টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব হবে না।’ এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়নের কার্যক্রম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থগিত করেছে। বলা হয়েছে, হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যক্রম অনলাইন করার আগ পর্যন্ত পুনঃমূল্যায়ন না করতে। এ ব্যাপারে আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল। আশা করি আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স অনলাইন করার কাজ শেষ করতে পারব। তারপর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে পুনঃমূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করব।’
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী যুগান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো চিঠি এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছেনি। চিঠি হাতে এলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

https://www.jugantor.com/last-page/2017/12/14/179372