১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:৫৩

প্রাথমিক স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস!

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে : রাশেদা কে চৌধুরী

পাবলিক এবং কেন্দ্রীয় পরীক্ষার পর স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হচ্ছে। দু’দিনে দেশের দুটি জেলায় প্রাথমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। এ কারণে প্রায় ৫শ’ স্কুলে মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধে সরকারি পর্যায়ে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। কিন্তু একটি দুষ্টুচক্র এ অপকর্ম করে যাচ্ছে। সরকারের উচিত হবে, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা স্বীকারের সংস্কৃতি চালু করা। তারা যেন ঘটনা অস্বীকার না করে। পাশাপাশি এটিকে সাধারণ অপরাধের পরিবর্তে ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে ঘোষণা করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, কী পাবলিক পরীক্ষা আর জেএসসি-পিইসির মতো কেন্দ্রীয় পরীক্ষা, কিংবা ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা- কোনোটিই বাকি নেই। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায়ও যখন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে, তখন আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। তিনি বলেন, এটা একটি দুষ্টুচক্রের কাজ। দুষ্টুচক্র আইসিটি ব্যবহার করে অপকর্ম করছে। ওই আইসিটি ব্যবহার করেই তাদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ পরিস্থিতি থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। এখনই যদি প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে কঠোর হওয়া না যায়, তাহলে বড় ধরনের ‘ডেমেজ’ (ক্ষতি) হয়ে যাবে। অভিযোগ আছে, এবারের জেএসসি এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার বেশিরভাগ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। সকাল ৯টার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপসে অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। পরীক্ষার হলের সামনে স্মার্টফোনে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেখাদেখি করতে দেখা গেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় এ বছর জেএসসি প্রশ্ন ফাঁসের খবর পেয়ে তারা রাজধানীর একটি কেন্দ্রে যান। সেখানে একজন শিক্ষার্থীকে ধরার পর আরেকজনের নাম জানায়। এ প্রক্রিয়ায় ৪-৫টি স্তর পেরিয়ে অভিভাবক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কিন্তু সেই পর্যায়ে গিয়ে মূল হোতাদের ধরা সম্ভব তো হয়-ইনি, উপরন্তু হুমকি-ধমকির মুখে পড়তে হয়েছে।
উল্লিখিত ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সোমবার মুন্সীগঞ্জে এবং রোববার বরগুনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। মুন্সীগঞ্জে এ ঘটনায় ১১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসন। বরগুনায়ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় সদর উপজেলার ২৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মঙ্গলবারের চতুর্থ শ্রেণীর ইংরেজি পরীক্ষা স্থগিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

একটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) যুগান্তরকে বলেন, এ প্রশ্ন ফাঁসের সম্পূর্ণ দায় টিইওর। কেননা, তার তত্ত্বাবধানে প্রশ্ন তৈরি, মুদ্রণ ও বণ্টন হয়। তবে এ কাজে টিইওকে সহায়তা করেন শিক্ষকরা। তারাই প্রশ্ন তৈরি, ছাপা, স্কুলের জন্য প্যাকেজিং ইত্যাদি করেন। এখন কোনো অসাধু শিক্ষক যদি নিজের কোচিং বা প্রাইভেটের শিক্ষার্থীর জন্য প্রশ্ন ফাঁস করেন, সেটা চেক দেয়ার দায়িত্ব টিইওরই।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আসলে আগে যেভাবে প্রশ্ন ফাঁস হতো, এখন সেভাবে হচ্ছে না। এটাকে ঠিক প্রশ্ন ফাঁস বলব না, পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা বলব, তা নির্ধারণ করতে পারছি না। কেননা, আগে কোনো বিষয়ের প্রশ্ন আগের রাতে বা তারও দু-তিন আগে ফাঁস হতো। সেটা হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ত। এখন প্রশ্নপত্র ট্রেজারি থেকে বের করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর পর ফাঁস হয়ে থাকে। এ অপকর্মের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। এর অন্যতম হচ্ছে, সরকারকে বিব্রত করতে বিরোধী গ্রুপের অসাধু শিক্ষকরা এ অপকর্ম করে থাকতে পারেন। অপরাধীদের বিচারে সরকার সচেষ্ট।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/12/13/179104