১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:৫২

বাংলাদেশ ব্যাংককে ফের দায়ী করল আরসিবিসি

বক্তব্য সঠিক নয় : বাংলাদেশ ব্যাংক

রিজার্ভ চুরির ঘটনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে ফের দায়ী করেছে ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংক (আরসিবিসি)। মঙ্গলবার ব্যাংকটির আইনবিষয়ক প্রধান জর্জ দেলা কুয়েস্তা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সিনেটের কাছে আইনি সব বিষয় তুলে ধরেছে আরসিবিসি। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অনেক কিছুই চেপে গেছে।’ রয়টার্স এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, আরসিবিসির বক্তব্য সঠিক নয়। তারা এভাবে বলতে পারেন না। সারা দুনিয়া জানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ আরসিবিসি ব্যাংকে গেছে। তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া রিজার্ভের বাকি অর্থ সে দেশে জব্ধ করা আছে। বিষয়টি এখন ফিলিপাইনে বিচারাধীন। আদালত যে রায় দেন তা সবাইকে মেনে নিতে হবে।

এর আগে শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আরসিবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, কারণ ফিলিপিন্স সরকার বিষয়টি দেখছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে, রিজল ব্যাংকের মধ্যেই ঝামেলা আছে। আমরা এ পৃথিবী থেকে রিজল ব্যাংককে মুছে দিতে চাই বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন।

এর জবাবে রিজল ব্যাংকের হেড অব লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিবৃতিতে উল্লিখিত মন্তব্য করে বলেন, ব্যাংক খাতে হ্যাকিংয়ের সবচেয়ে বড় এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার যে তদন্ত করেছিল, তার প্রতিবেদন দেখতে চেয়েছিল ফিলিপিন্স সরকার। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মুহিত তখন বলেছিলেন, ফিলিপিন্স চাইলেও ওই প্রতিবেদন তাদের দেয়া হবে না।

আরসিবিসি আগেও বলেছিল, এ ঘটনায় তাদের কোনো দায় নেই, বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়ী। মঙ্গলবারের বিবৃতিতেও তারা একই সুরে কথা বলেছে। তারা বলছে, এ ঘটনায় অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় আছে। স্বচ্ছতার ব্যাপারে তাদের যে আপত্তি, তথ্য চেপে রাখার যে চেষ্টা, তা সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে লড়াইকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আরসিবিসি বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফিলতির শিকার। তাদের অভিযোগ, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিজেদের গাফিলতির দায় এড়াতে তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আরসিবিসিকে ‘বলির পাঁঠা’ বানাতে চাইছে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের আরসিবিসিতে। আর আরেক আদেশে শ্রীলংকায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।

শ্রীলংকায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশির ভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। ওই টাকার মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে ফিলিপিন্স। এ ঘটনায় রিজল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানাও করেছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানার অর্থ পরিশোধ করলেও বাংলাদেশকে বাকি অর্থ ফেরতে কোনো দায় নিতে রাজি নয় ব্যাংকটি।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গত মাসে এক কনফারেন্স কলে রিজলের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে নিউইয়র্ক ফেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যেখানে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক মেসেজিং নেটওয়ার্ক সুইফটের দু’জন প্রতিনিধিও ছিলেন বলে খবর দেয় রয়টার্স। এতে আরও বলা হয়, চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ নিউইয়র্কে একটি দেওয়ানি মামলা করার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও সেখানে বাদী হবে।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/12/13/179097