১২ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৩১

ওয়াসা আর ফ্লাইওভারে লণ্ডভণ্ড চট্টগ্রামের সব সড়ক

ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইনের পাইপ স্থাপন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজে ছিন্নভিন্ন চট্টগ্রামের সবক’টি সড়ক। যেখানে সৃষ্ট ছোট-বড় গর্তে প্রতিদিন হেলে-দুলে চলছে যানবাহন। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। স্থানীয় লোকজন জানান, বন্দরনগরীর মূল সড়ক মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার অংশে আখতারুজ্জামান উড়াল সড়কের কাজ শেষ হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে নির্মাণ কাজে ছিন্নভিন্ন সড়কটি আর সংস্কার করা হয়নি। এ অবস্থায় ষোলশহর দুইনম্বর গেট মোড়ে চলছে উড়াল সড়কে র্যা ম্প নির্মাণ কাজ। ফলে সড়কে সৃষ্ট বড় বড় গর্তের উপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে নগরীর যানবাহন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। প্রতিনিয়ত বিকল হচ্ছে যানবাহন। ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয়রা আরো জানান, বহদ্দারহাট মোড় থেকে শাহআমানত সেতু পর্যন্ত সড়কটিতেও আছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। ভাঙাচোরা গর্তে বারবার থেমে যায় যানবাহনের চাকা। কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী মেরিনার্স সড়কের প্রায় পুরো অংশেই উঠে গেছে কংক্রিট। কোতোয়ালি মোড় থেকে পাথরঘাটা-চামড়া গুদাম হয়ে শাহআমানত সেতু মোড় পর্যন্ত সড়কে খানাখন্দের কারণে হেলে-দুলে চলাচল করছে ছোট ছোট যানবাহন।
একইভাবে বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট সড়কের কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপনে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের এই অংশে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের ধোপপুল এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। গত শনি ও রোববার নিম্নচাপের প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেও গর্তে পানি জমে যানবাহন চলাচলে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নাকাল হচ্ছে যাত্রীরা।

ষোলশহর দুই নম্বর গেট থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। বহদ্দারহাট থেকে হাজীরপুল পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই খানাখন্দে ভরা। আতুরার ডিপো থেকে চাইলতাতলী পর্যন্ত সড়কটির অধিকাংশই ধুয়ে মুছে গেছে কার্পেটিং। কাতালগঞ্জের আব্দুল্লাহ বাই লেইন সড়কের বিভিন্ন অংশে আছে গর্ত। কাতালগঞ্জ দিয়ে সড়কে প্রবেশ মুখেই আছে বড় গর্ত।
চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ততম সড়কের চিত্র এমনই। তবে ইট আর কংক্রিটের জোড়াতালি দিয়ে এসব সড়কের কিছু কিছু অংশ সংস্কার করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। কিন্তু নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে সংস্কারের কারণে এসব সড়কের বেশিরভাগই আবার বেহাল হয়ে পড়ছে। এতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। খানাখন্দ আর এবড়ো-থেবড়ো সড়কে শঙ্কার মধ্যেই চলাচল করছে নগরবাসী।
এছাড়া নগরীর কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার দুই নম্বর সড়ক, মুন্সীপুকুর পাড় সড়ক ও বহদ্দারহাট উড়াল সড়ক থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত সড়কের পিচ উঠে গেছে। এ ছাড়া চান্দগাঁওয়ের খাজা সড়ক ও পাঠানিয়া গোদা সড়ক, পতেঙ্গার আকমল আলী শাখা সড়কের অবস্থাও বেহাল। সড়কগুলোর কার্পেটিং উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এছাড়া ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে যানজট হচ্ছে নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, সিঅ্যান্ডবি, মোহরা, কামাল বাজার, কাজির হাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত। একইভাবে উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজের কারনে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, জিইসির মোড় লালখান বাজার পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। চকবাজার-কেবি আমান আলী রোড ও আসকারদীঘির পাড়সহ নগরীর বিভিন্ন সড়কে দুরবস্থার কারণে যানজট হচ্ছে।
চসিক প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নগরের অন্তত ২৫০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ উঠে বেহাল হয়ে পড়েছে। যা রক্ষণাবেক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে সিটি করপোরেশন।
চউকের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, উড়াল সড়কের কাজের প্রকল্প এলাকার সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তবে উড়াল সড়কের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব সড়কগুলোও সংস্কার করা হবে। এ জন্য নগরীর মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=95835